দেশ বিদেশ

আমার হাতে গড়া ছাত্রনেতারা যখন চলে যায় সত্যিই খুব কষ্ট লাগে: প্রধানমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার

২০ জানুয়ারি ২০২০, সোমবার, ৯:০৫ পূর্বাহ্ন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ সদস্য কৃষিবিদ আবদুল মান্নানের অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, আমার হাতে গড়া ছাত্রনেতারা যখন চলে যায় সত্যিই খুব কষ্ট লাগে। পরপর তিনজন সদস্য আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল সংসদ অধিবেশনে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য সদ্য প্রয়াত আবদুল মান্নানের মৃত্যুতে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ১৯৮১ সালের ফিরে আসার পর মান্নানকে ছাত্রনেতা হিসেবে পেয়েছিলাম। ১৯৮৩ সালে তাকে ছাত্রলীগের সভাপতি করি। ওই সময়টা ছাত্রলীগের খুব দুঃসময় ছিল। অনেকেই ছাত্রলীগ ছেড়ে চলে গিয়েছিল ১৯৮২ সালে। সে কারণে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করার খুব দরকার ছিল এবং তার সেই সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল। সে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিল। তিনি বলেন, পরবর্তীতে তাকে আওয়ামী লীগে নিয়ে আসি, আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল। বগুড়ার মত জায়গা ওকে নমিনেশন দিলাম। খুব কঠিন জায়গা ছিল, এলাকাটা দুর্গম এবং রাস্তাঘাট ছিল না। খুবই অনুন্নত একটি জায়গা। সেখানে তাকে যখন নমিনেশন দিলাম, মান্নান সেখানে থেকে জিতে আসলো, পর পর তিনবার সেখান থেকে সংসদ সদস্য। স্মৃতিচারণ করে সংসদ নেতা বলেন, মৃত্যুর দুইদিন আগে আমার সঙ্গে অনেক কথা বলল। আমাদের সেন্ট্রাল কমিটিতে নানক আসছে ও আসতে পারেনি। বোধহয় মনে একটু দুঃখ ছিল। আমি বললাম আমি তো তোমাদের কাউকে ফেলে দেইনি। তুমি আওয়ামী লীগে ছিলে এবং তোমাকে আমি নমিনেশন দিয়েছি, সংসদ সদস্য হয়েছ। কথা বলার সময় দেখলাম তার শরীরটা একটু খারাপ। আমি ওকে বললাম তোমার শরীর মনে হয় ভাল না, তুমি একটু ভালোভাবে চিকিৎসা কর এবং চেকআপ করো। ঠিক তারপরই হাসপাতালে ভর্তি। তিনি আরও বলেন, ছাত্র জীবন থেকে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলন এবং জিয়া বিরোধী আন্দোলন, খালেদা জিয়া বিরোধী আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় আরও অংশ নেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর, শাজাহান খান, এবি তাজুল ইসলাম, এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, মোসলেম উদ্দিন, উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, নজরুল ইসলাম বাবু, আনোয়ার আবেদীন খান ও বিরোধী দলের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা। আলোচনা শেষে শোক প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। প্রয়াত সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এরপর চলতি সংসদের সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের মৃত্যুতে রেওয়াজ অনুযায়ী স্পিকার সংসদ অধিবেশনের সকল কার্যক্রম স্থগিত রেখে আজ সোমবার বিকাল সোয়া চারটা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, আবদুল মান্নানের অকাল মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। অসম্ভব সাংগঠনিক দক্ষতার পাশাপাশি ক্ষুরধার লেখক ছিলেন তিনি। ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে বৈরী অবস্থায় দক্ষতার সঙ্গে সারাদেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তোফায়েল আহমেদ বলেন, গত বুধবারই সংসদে তার সঙ্গে কথা বলেছি। ২০০৬ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠিয়েছিলেন। ছাত্রজীবন থেকে তার সঙ্গে সম্পর্ক, অসম্ভব স্নেহ ও ভালবাসতাম। প্রতিভাবান ছাত্রনেতা ছিলেন অকাল প্রয়াত আবদুল মান্নান। সামরিক শাসনবিরোধী প্রতিটি আন্দোলনে রাজপথে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন তিনি। বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, কৃষকের ঘর থেকে উঠে আসা সন্তান আবদুল মান্নান। ছাত্রলীগকে অত্যন্ত কঠিন সময়ে নেতৃত্ব দিয়ে শক্তিশালী করেছিল এই কৃষিবিদ নেতা। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময় তাকে বুদ্ধি দিয়ে, সাহস দিয়ে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন। বগুড়ার মতো জায়গায় তিনবার এমপি হয়েছেন। ছাত্র ও রাজনৈতিক জীবনে কোনদিন আদর্শের ক্ষেত্রে আপোষ করেননি। শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, কৃষি বিদ্যালয়ে আবদুল মান্নান বিপুল ভোটে ভিপি হওয়ায় জেনারেল জিয়া তাঁকে হত্যার জন্য গুন্ডা বাহিনী লেলিয়ে দেয়। আবদুল মান্নান ওই হামলায় বেঁচে গেলেও সেখানে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল আবদুল মান্নান অসম্ভব মেধাবী ও সাহসী রাজনীতিবিদ ছিল। কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে আবদুল মান্নানের সঙ্গে আমার পরিচয়। ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে আইয়ুববিরোধী, মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং ’৭৫ পরবর্তী সময়ে স্বৈরশাসক জিয়ার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন আবদুল মান্নান। জিয়া-এরশাদকে কোনদিন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেননি এই লড়াকু ছাত্রনেতা। ভাল চাকুরি ও বিদেশে উন্নত শিক্ষার সুযোগ পেলেও তিনি রাজনীতিকেই বেছে নিয়েছেন। বিরোধী দলের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, রাজনৈতিক জীবনে কোন খবরদারী নয়, মানুষকে ভালবেসে তাঁদের হৃদয় জয় করতেন প্রয়াত আবদুল মান্নান। চরম বৈরী এলাকা বগুড়াতেও অসম্ভব জনপ্রিয় নেতা ছিলেন তিনি। মেধাবী, সাহসী ও সুবক্তা হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে তাঁর পদচারণা ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শাজাহান খান বলেন, অনেকে তাঁকে শক্ত মানুষ ভাবলেও কোনদিন রাগান্বিত হয়ে কথা বলতে দেখিনি। আবদুল মান্নানের অসম্ভব সাংগঠনিক শক্তি ছিল। সাংগঠনিক শক্তি দিয়েই নিজের এলাকাকে আওয়ামী লীগের দুর্গ বানিয়েছেন। গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, গতানুগতিক নয়, আমৃত্যু আদর্শবাদী ও পরিপূর্ণ রাজনৈতিক সৃজনশীলতা ছিল প্রয়াত আবদুল মান্নানের মধ্যে। তিনি বিরোধী দলকে সমালোচনা করে বক্তব্য রাখতেন, কিন্তু তাঁর মধ্যে ছিল মার্জিত ও সভ্যতার নিদর্শন। দেশাত্মবোধ, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, শেখ হাসিনার নেতৃত্ব থেকে আমৃত্যু তিনি ছিলেন অবিচল। গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, ’৭৫ পরবর্তী চরম দুঃসময়ে ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে বলিষ্ট ভূমিকা রেখেছেন প্রয়াত আবদুল মান্নান। সারাদেশ ঘুরে বেরিয়ে ছাত্রলীগকে শক্তিশালী করে স্বৈরাচারি জিয়া-এরশাদ বিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করেছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status