বাংলারজমিন

৪৮ বছর পর নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান বিয়ানীবাজারে চাঞ্চল্য

মিলাদ জয়নুল, বিয়ানীবাজার (সিলেট) থেকে

১৯ জানুয়ারি ২০২০, রবিবার, ৭:৩৭ পূর্বাহ্ন

এ যেন এক ছবির কাহিনী। ঘরে তার স্ত্রী, চার পুত্র সন্তান। সবার ছোট ছেলের বয়স ৪০ দিন পেরোয়নি। এমন সময়ে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হঠাৎ নিখোঁজ। স্বজনকে খুঁজে পাওয়ার আর্তনাদ পুরো এলাকাজুড়ে। মুক্তিযুদ্ধ শেষে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে যখন নতুন করে গড়ার সংগ্রাম চারদিকে তখন একটি পরিবারে স্বজন হারানোর হাহাকার। সুদর্শন-টগবগে এক যুবকের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সর্বত্র তোলপাড়। কোথাও খোঁজ নেই তার। পীর-ফকির, কবিরাজ অনেকের কাছে গেছেন সন্ধান চাইতে তবুও খোঁজ মিলেনি। সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর আশা ছেড়ে দেন পরিবারের সদস্যরা। নিখোঁজ ব্যক্তি হয়তো আর জীবিত নেই- এই ভেবে পরিবারের সদস্যরা তার মাগফিরাত কামনায় কুলখানির আয়োজনও করেন। তবে সবকিছু মিথ্যা প্রমাণ করে ৪৮ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তি হাবীবুর রহমানের হঠাৎ সন্ধান মেলে। বয়স এখন ৮০’র কাছাকাছি। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের কোনো একদিন হঠাৎ নিখোঁজ হন তিনি। বিয়ানীবাজার পৌর শহরের খাসা গ্রামে তার বাড়ি। সন্তানদের সবাই প্রতিষ্ঠিত। বাবা নেই, এই ধারণা থেকে পিতার নামের আগে মরহুম লিখতেন সন্তানরা। তবে বাবার সমাধির ঠিকানা জানতে চেষ্টার শেষ ছিল না তাদের। নিখোঁজের নাতি কেফায়েত হোসেন জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে তার দাদা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানতে পারেন। এরপর তারা দ্রুত সেখানে গিয়ে তাকে শনাক্ত করেন। কেফায়েত জানান, ৩-৪ দিন আগে তাকে হাসপাতালে অজ্ঞাত রোগী হিসেবে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তার ছবি দিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন বিয়ানীবাজারের জনৈক ব্যক্তি। এটি কিছু সময়ের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়।

কেফায়েত হোসেন আরো বলেন, তার দাদার এক হাত ভাঙা। এই হাতে অস্ত্রোপচার করা হবে। তার পরিবারের সদস্যরা জানান, গুরুতর অসুস্থ হাবীবুর রহমানের স্মৃতিশক্তি কিছুটা লোপ পেয়েছে। তবে মাঝেমধ্যে স্মৃতিশক্তি ফিরে পেলে তিনি জানিয়েছেন, মৌলভীবাজারের রায়সাড়ি এলাকার একটি মাজারের খাদেম হিসেবে ছিলেন তিনি। সেখানে রাজিয়া বেগম নামের এক মহিলা তার সেবা শুশ্রূষার কাজ করতেন। রাজিয়া বেগমও বিষয়টি স্বীকার করেন। হাবীবুর রহমানের প্রতিবেশী এবং সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য নজরুল হোসেন জানান, দেশ স্বাধীনের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান মিলেনি। সবার ধারণা ছিল, তিনি হয়তো আর বেঁচে নেই। এই দীর্ঘ সময়ে একবারও তিনি স্ত্রী-সন্তানদের খোঁজ নেননি। পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর জানা যাবে তার নিখোঁজ রহস্য কিংবা কোথায়, কি অবস্থায় ছিলেন তিনি। এদিকে দীর্ঘ ৪৮ বছর পর নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান পাওয়ায় বিয়ানীবাজার উপজেলাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি যেখানে চিকিৎসাধীন আছেন সেখানে তাকে একনজর দেখতে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। বর্তমানে সিলেট নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন হাবীবুর রহমান। তাকে ঘিরে পরিবার ও স্বজনদের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করার মতো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status