বাংলারজমিন
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু আজ
স্টাফ রিপোর্টার, টঙ্গী থেকে
১৭ জানুয়ারি ২০২০, শুক্রবার, ৮:৪৩ পূর্বাহ্ন
আজ বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে। শুরুর দিন দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের শীর্ষ মুরব্বিরা আম বয়ান করবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় আট হাজার সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত পাঁচ স্তরের নিরাপত্তায় ওলামা-মাশায়েখদের প্রথমপর্ব ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হয়েছে গত রোববার। তারা সোমবার রাতে ময়দান খালি করে চলে যাওয়ার পর মাওলানা সা’দ আহমদ কান্ধলভীর অনুসারী মাওলানা ওয়াসিফুল ইসলামের নেতৃত্বে আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা। শীত কম, আবহাওয়া ভালো থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাস-ট্রাক, ট্রেন ও লঞ্চযোগে দেশ-বিদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে এসে সমবেত হয়েছেন। আগামী রোববার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে ২০২০ সালের ইজতেমা। আজ ইজতেমা ময়দানে দেশের বৃহত্তম জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এ পর্বেও আগের ন্যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন। ইজতেমায়ও আগত মুসল্লিদের উদ্দেশে ঈমান আমলের উপর তাবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় দেশি-বিদেশি বুজুর্গ আলেম মাওলানারা গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করবেন। বুধবার বাদ মাগরিব মাওলানা সা’দ আহমদ কান্ধলভী মনোনীত দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের ৩২ সদস্যবিশিষ্ট একটি জামাত টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে এসে পৌঁছেন। এ জামাতের নেতৃত্বে রয়েছেন দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের শূরা সদস্য মাওলানা আবদুস সাত্তার। এ পর্বেও দেশের ৬৪টি জেলার কয়েক লাখ মুসল্লিসহ বিশ্বের প্রায় শতাধিক দেশের সহস্রাধিক মেহমান ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন ইজতেমা আয়োজক কমিটি। আগামী রোববার ১৯শে জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে এবারের দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা। ইতিমধ্যে শীত, ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে গত বুধবার থেকেই দ্বিতীয় পর্ব সফল করতে মুসল্লিরা দলে দলে জামাতবন্দি হয়ে তুরাগ তীরে সমবেত হয়েছেন। নিজামুদ্দিন মারকাযের ৩২ সদস্য বিশিষ্ট জামাত ময়দানে: ইজতেমা দ্বিতীয় পর্বের গণমাধ্যম সমন্বয়কারী মো. সায়েম জানান, মাওলানা সা’দ আহমদ কান্ধলভী মনোনীত দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের ৩২ সদস্যবিশিষ্ট একটি জামাত গতকাল বাদ মাগরিব টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে এসে পৌঁছেছেন। এ জামাতের নেতৃত্বে রয়েছেন দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের শূরা সদস্য মাওলানা আবদুুস সাত্তার। জামাতের অপর সদস্যরা হলেন- মাওলানা শামীম আহমেদ, মাওলানা জামশেদ, মাওলানা মিয়াজী আজমত উল্লাহ, মাওলানা মুফতি শেজাত, মাওলানা রিয়াজুর রহমান, মাওলানা ইকবাল হাফিজ প্রমুখ। মুরব্বিদের জামাতকে এস্তেকবাল (অভ্যর্থনা) জানান বাংলাদেশের মুরব্বিরা।
দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা সফল করতে বিভিন্ন জামাত তৈরি: দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা সফল করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জামাত তৈরি করে দেয়া হয়েছে। তারা তাদের জন্য নির্ধারিত কর্মসূচি সূচারুরূপে পালন করছেন। ময়দানের নুজূমীর দায়িত্বে রয়েছে প্রকৌশলী শাহ মো. মুহিব্বুল্লাহসহ ১৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি। পানি ও গ্যাসের জামাতে রয়েছেন মো. আসাদুজ্জামানসহ ৯ জন, বিদ্যুতের জামাতে রয়েছেন প্রকৌশলী সুজাত আলীসহ ১৬ জন, মাইকের জামাতে রয়েছেন আফজাল হোসেন মোল্লাসহ ৭ জন, নিজামুদ্দিনের মুরব্বিদের জামাতে রয়েছেন ডা. নাফিজসহ ৫ জন, বিদেশি খিমার নজমের জামাতে রয়েছেন মাওলানা বোরহানসহ ৬ জন, আন্তর্জাতিক শূরার জামাতে রয়েছেন প্রফেসর আবদুল হান্নানসহ ৩ জন এবং বিদেশি মেহমানদের খেদমতের জামাতে মাওলানা সাইফুল্লাহসহ ৫ জন নিয়োজিত রয়েছেন। দ্বিতীয় পর্বে খিত্তাওয়ারি মুসল্লিদের অবস্থান: এ বছর দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যে সমস্ত খিত্তায় অবস্থান করবেন তা হলো- মিরপুর (খিত্তা-১, ২), সাভার (খিত্তা-৩ ও ৪), টঙ্গী (খিত্তা-৫), উত্তরা (খিত্তা-৬ ও ৭), কাকরাইল (খিত্তা-৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪), মোহাম্মদপুর (খিত্তা-১৫), যাত্রাবাড়ী (খিত্তা-১৬), ডেমরা (খিত্তা-১৭), কেরানীগঞ্জ (খিত্তা-১৮ ও ১৯), ধামরাই (খিত্তা-২০), নবাবগঞ্জ/দোহার (খিত্তা-২১), মানিকগঞ্জ (খিত্তা-২২), টাঙ্গাইল (খিত্তা-২৩), নারায়ণগঞ্জ (খিত্তা-২৪), নেত্রকোনা (খিত্তা-২৫), জামালপুর (খিত্তা-২৬), ময়মনসিংহ (খিত্তা-২৭), কিশোরগঞ্জ (খিত্তা-২৮), শেরপুর (খিত্তা-২৯), গাজীপুর (খিত্তা-৩০), বগুড়া (খিত্তা-৩১), নরসিংদী (খিত্তা-৩২), নওগাঁ (খিত্তা-৩৩), রাজশাহী (খিত্তা-৩৪), নাটোর (খিত্তা-৩৫), সিলেট (খিত্তা-৩৮), সুনামগঞ্জ (খিত্তা-৩৯), হবিগঞ্জ (খিত্তা-৪০), মৌলভীবাজার (খিত্তা-৪১), চাঁপাই নবাবঞ্জ (খিত্তা-৪২), জয়পুরহাট (খিত্তা-৪৩), মুন্সীগঞ্জ (খিত্তা-৪৪), মাদারীপুর (খিত্তা-৪৫), শরীয়তপুর (খিত্তা-৪৬), রাজবাড়ী (খিত্তা-৪৭), ফরিদপুর (খিত্তা-৪৮), গোপালগঞ্জ (খিত্তা-৪৯), পঞ্চগড় (খিত্তা-৫০), নীলফামারী (খিত্তা-৫১), লালমনিরহাট (খিত্তা-৫২), গাইবান্ধা (খিত্তা-৫৩), কুড়িগ্রাম (খিত্তা-৫৪), ঠাকুরগাঁও (খিত্তা-৫৫), রংপুর (খিত্তা-৫৬), দিনাজপুর (খিত্তা-৫৭), বি.বাড়িয়া (খিত্তা-৫৮), চাঁদপুর (খিত্তা-৫৯), খাগড়াছড়ি (খিত্তা-৬০), ফেনী (খিত্তা-৬১), রাঙ্গামাটি (খিত্তা-৬২), বান্দরবন (খিত্তা-৬৩), লক্ষ্মীপুর (খিত্তা-৬৪), নোয়াখালী (খিত্তা-৬৫), কুমিল্লা (খিত্তা-৬৬), কক্সবাজার (খিত্তা-৬৭), চট্টগ্রাম (খিত্তা-৬৮), চুয়াডাঙ্গা (খিত্তা-৬৯), কুষ্টিয়া (খিত্তা-৭০), খুলনা (খিত্তা-৭১), যশোর (খিত্তা-৭২), ঝালকাঠি (খিত্তা-৭৩), পটুয়াখালী (খিত্তা-৭৪), বরিশাল (খিত্তা-৭৫), ভোলা (খিত্তা-৭৬), বরগুনা (খিত্তা-৭৭) ও পিরোজপুর (খিত্তা-৭৮)। তুরাগ নদের পশ্চিমপাড়ে অবস্থিত খিত্তাগুলো হলো- পাবনা (খিত্তা-৩৬), সিরাজগঞ্জ (খিত্তা-৩৭), মাগুরা (খিত্তা-৭৯), সাতক্ষীড়া (খিত্তা-৮০), নড়াইল (খিত্তা-৮১), ঝিনাইদহ (খিত্তা-৮২), বাগেরহাট (খিত্তা-৮৩) ও মেহেরপুর (খিত্তা-৮৪)। এছাড়াও ৮৫, ৮৬ নং খিত্তা ও তুরাাগ নদের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত ৮৭নং খিত্তাগুলো সংরক্ষিত খিত্তা হিসেবে রাখা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা তাদের নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত বন্দেগি, আল্লাহু জিকিরে মশগুল থাকবেন।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে বিশ্বের শতাধিক দেশের প্রায় ১০-১২ হাজার বিদেশি মেহমান আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করবেন বলে আয়োজক কমিটির মুরব্বিরা আশা করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশের প্রায় ৩ হাজার ১৯ জন বিদেশি মেহমান ময়দানে তাদের জন্য নির্ধারিত নিবাসে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী হাজী মো. মনির হোসেন ও মো. সায়েম। তবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও কাশ্মীর থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক মুসল্লি ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ভারতের নাগরিকত্ব বিলের কারণে ভিসা জটিলতায় অনেক চিল্লাধারী ইজতেমার সাথী বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছেন না বলেও জানান তারা। বৃহস্পতিবার ময়দানে বয়ান করলেন যারা: ইজতেমা ময়দানে গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ জোহর সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশে ইস্তেকবালি (স্বাগত) বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইকবাল হাফিজ। তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ। ইজতেমার আনুষ্ঠানিক বয়ান আজ শুক্রবার বাদ ফজর থেকে শুরু হলেও বৃহস্পতিবার বাদ আসর থেকেই বয়ান শুরু করেন শীর্ষ মুরব্বিরা। বাদ আসর বয়ান করেন তাবলীগ জামাতের বাংলাদেশের শূরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম। বাদ মাগরিব বয়ান করেন দিল্লি নিজামুদ্দিন মারকাযের মাওলানা শামীম আজমী। তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন স্বাগতিক বাংলাদেশের মাওলানা জিয়া বিন কাসিম। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় বাংলাদেশের শীর্ষ মুরব্বিদের অবস্থান: দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে অবস্থান নিয়েছে বেশ কয়েকজন শীর্ষ মুরব্বি। তারা হলেন- মাওলানা সা’দ আহমদ কান্ধলভীপন্থি বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশের শূরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম, প্রকৌশলী খান মো. শাহাবুদ্দিন নাসিম, মাওলানা মোজাম্মেল হক, মাওলানা মোশারফ হোসেন, প্রফেসর ইউনুস শিকদার, মাওলানা আশরাফ আলী, মাওলানা আবদুল্লাহ মনছুর।
ইজতেমা ময়দানে আসার পথে ট্রেনের ধাক্কা ও হৃদরোগে দুই মুসল্লির মৃত্যু: গত বুধবার রাতে টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে ট্রেনের ধাক্কায় মো. গোলজার হোসেন (৪০) নামে এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। নিহত গোলজার গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার টেংরাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতে গোলজার ও তার সাথীরা গাইবান্ধা থেকে ট্রেনে করে এসে টঙ্গী জংশনে নেমে মালামাল গোছানোর কাজ করছিলেন। এ সময় পেছন দিক থেকে একটি ট্রেন এসে গোলজারের মাথায় সজোরে ধাক্কা দিলে তিনি পাশের রেললাইনে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত তার সাথীরা তাকে উদ্ধার করে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অপরদিকে ইজতেমা ময়দানে সুনামগঞ্জ জেলার আনছার আলী (৬৫) নামে এক মুসল্লির হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে তার পূর্ণ ঠিকানা পাওয়া যায়নি।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বেও আইনশৃঙ্খলা জোরদার: দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীতে আইনশৃঙ্খলা জোরদার করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে প্রায় ৮ হাজার পুলিশসহ র্যাব, সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদার করতে র্যাবের কমিউনিকেশন উইং, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে ২০টি প্রবেশপথসহ চারপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তিনশতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে মেটাল ডিটেক্টর, নাইটভিশন গগল্স, বাইনোকুলার, বোম্ব ডিসপোজাল টিম, এন্টিটেরোরিজম ইউনিট, হেলিকপ্টার-নৌ টহল ও স্টাইকিং ফোর্স। বিশেষ প্রয়োজনে হেলিকপ্টার উঠানামার জন্য বাটা গেট ও জেরিনা গার্মেন্ট কারখানায় দুটি হেলিপ্যাড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন স্থানে বসানো র্যাবের ১০টি ও পুলিশের ১৪টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষক দল সার্বক্ষণিক বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের পর্যবেক্ষণ করবেন।
বিদেশি মুসল্লিদের অংশগ্রহণ: ইথিওপিয়া, ভারত, কানাডা, কম্বোডিয়া, ক্যামোরস, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, অস্ট্রেলিয়া, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া, আমেরিকা, স্পেন, সৌদি আরবসহ বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশের ৩ হাজার ১৯ জন বিদেশি মেহমান বৃহস্পতিবার বিকালে পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইজতেমা ময়দানের গণমাধ্যম সমন্বয়কারী হাজী মনির হোসেন ও মো. সায়েম। এ পর্বের ইজতেমায় ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও কাশ্মীর থেকে অধিকসংখ্যক মেহমান ময়দানে এসেছেন বলে জানা গেছে। বিভিন্ন মহাদেশ ও ভাষাভাষী অনুসারে ইজতেমা ময়দানে বিদেশি মেহমানরা ভিন্ন ভিন্ন তাঁবুতে অবস্থান করছেন। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ময়দানের ভেতরে হকারদের উৎপাত: প্রতি বছর ইজতেমা ময়দান থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে হকাররা তাদের বিভিন্ন মালামালের পসরা সাজিয়ে বসতো। কিন্তু এ বছর খোদ ময়দানের ভেতরেই বিশেষ করে ৭, ৮ ও ৯নং গেটে তাদেরকে টুপি, বিভিন্ন বই, সিঙ্গাড়া-সমুচা, পিঠা, আতর-তাসবিহ ও মেছওয়াকসহ নানা ধরনের পণ্যের দোকান সাজিয়ে বেচাকেনা করতে দেখা গেছে। এতে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের যাতায়াতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ইজতেমা ময়দানের জিম্মাদার প্রকৌশলী শাহ মো. মুহিবুল্লাহ বলেন, ইতিমধ্যে ময়দানের শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মেহমান ময়দানে নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল রয়েছেন। আগামী রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে। ইনশাআল্লাহ।
দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা সফল করতে বিভিন্ন জামাত তৈরি: দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা সফল করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জামাত তৈরি করে দেয়া হয়েছে। তারা তাদের জন্য নির্ধারিত কর্মসূচি সূচারুরূপে পালন করছেন। ময়দানের নুজূমীর দায়িত্বে রয়েছে প্রকৌশলী শাহ মো. মুহিব্বুল্লাহসহ ১৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি। পানি ও গ্যাসের জামাতে রয়েছেন মো. আসাদুজ্জামানসহ ৯ জন, বিদ্যুতের জামাতে রয়েছেন প্রকৌশলী সুজাত আলীসহ ১৬ জন, মাইকের জামাতে রয়েছেন আফজাল হোসেন মোল্লাসহ ৭ জন, নিজামুদ্দিনের মুরব্বিদের জামাতে রয়েছেন ডা. নাফিজসহ ৫ জন, বিদেশি খিমার নজমের জামাতে রয়েছেন মাওলানা বোরহানসহ ৬ জন, আন্তর্জাতিক শূরার জামাতে রয়েছেন প্রফেসর আবদুল হান্নানসহ ৩ জন এবং বিদেশি মেহমানদের খেদমতের জামাতে মাওলানা সাইফুল্লাহসহ ৫ জন নিয়োজিত রয়েছেন। দ্বিতীয় পর্বে খিত্তাওয়ারি মুসল্লিদের অবস্থান: এ বছর দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যে সমস্ত খিত্তায় অবস্থান করবেন তা হলো- মিরপুর (খিত্তা-১, ২), সাভার (খিত্তা-৩ ও ৪), টঙ্গী (খিত্তা-৫), উত্তরা (খিত্তা-৬ ও ৭), কাকরাইল (খিত্তা-৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪), মোহাম্মদপুর (খিত্তা-১৫), যাত্রাবাড়ী (খিত্তা-১৬), ডেমরা (খিত্তা-১৭), কেরানীগঞ্জ (খিত্তা-১৮ ও ১৯), ধামরাই (খিত্তা-২০), নবাবগঞ্জ/দোহার (খিত্তা-২১), মানিকগঞ্জ (খিত্তা-২২), টাঙ্গাইল (খিত্তা-২৩), নারায়ণগঞ্জ (খিত্তা-২৪), নেত্রকোনা (খিত্তা-২৫), জামালপুর (খিত্তা-২৬), ময়মনসিংহ (খিত্তা-২৭), কিশোরগঞ্জ (খিত্তা-২৮), শেরপুর (খিত্তা-২৯), গাজীপুর (খিত্তা-৩০), বগুড়া (খিত্তা-৩১), নরসিংদী (খিত্তা-৩২), নওগাঁ (খিত্তা-৩৩), রাজশাহী (খিত্তা-৩৪), নাটোর (খিত্তা-৩৫), সিলেট (খিত্তা-৩৮), সুনামগঞ্জ (খিত্তা-৩৯), হবিগঞ্জ (খিত্তা-৪০), মৌলভীবাজার (খিত্তা-৪১), চাঁপাই নবাবঞ্জ (খিত্তা-৪২), জয়পুরহাট (খিত্তা-৪৩), মুন্সীগঞ্জ (খিত্তা-৪৪), মাদারীপুর (খিত্তা-৪৫), শরীয়তপুর (খিত্তা-৪৬), রাজবাড়ী (খিত্তা-৪৭), ফরিদপুর (খিত্তা-৪৮), গোপালগঞ্জ (খিত্তা-৪৯), পঞ্চগড় (খিত্তা-৫০), নীলফামারী (খিত্তা-৫১), লালমনিরহাট (খিত্তা-৫২), গাইবান্ধা (খিত্তা-৫৩), কুড়িগ্রাম (খিত্তা-৫৪), ঠাকুরগাঁও (খিত্তা-৫৫), রংপুর (খিত্তা-৫৬), দিনাজপুর (খিত্তা-৫৭), বি.বাড়িয়া (খিত্তা-৫৮), চাঁদপুর (খিত্তা-৫৯), খাগড়াছড়ি (খিত্তা-৬০), ফেনী (খিত্তা-৬১), রাঙ্গামাটি (খিত্তা-৬২), বান্দরবন (খিত্তা-৬৩), লক্ষ্মীপুর (খিত্তা-৬৪), নোয়াখালী (খিত্তা-৬৫), কুমিল্লা (খিত্তা-৬৬), কক্সবাজার (খিত্তা-৬৭), চট্টগ্রাম (খিত্তা-৬৮), চুয়াডাঙ্গা (খিত্তা-৬৯), কুষ্টিয়া (খিত্তা-৭০), খুলনা (খিত্তা-৭১), যশোর (খিত্তা-৭২), ঝালকাঠি (খিত্তা-৭৩), পটুয়াখালী (খিত্তা-৭৪), বরিশাল (খিত্তা-৭৫), ভোলা (খিত্তা-৭৬), বরগুনা (খিত্তা-৭৭) ও পিরোজপুর (খিত্তা-৭৮)। তুরাগ নদের পশ্চিমপাড়ে অবস্থিত খিত্তাগুলো হলো- পাবনা (খিত্তা-৩৬), সিরাজগঞ্জ (খিত্তা-৩৭), মাগুরা (খিত্তা-৭৯), সাতক্ষীড়া (খিত্তা-৮০), নড়াইল (খিত্তা-৮১), ঝিনাইদহ (খিত্তা-৮২), বাগেরহাট (খিত্তা-৮৩) ও মেহেরপুর (খিত্তা-৮৪)। এছাড়াও ৮৫, ৮৬ নং খিত্তা ও তুরাাগ নদের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত ৮৭নং খিত্তাগুলো সংরক্ষিত খিত্তা হিসেবে রাখা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা তাদের নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত বন্দেগি, আল্লাহু জিকিরে মশগুল থাকবেন।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে বিশ্বের শতাধিক দেশের প্রায় ১০-১২ হাজার বিদেশি মেহমান আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করবেন বলে আয়োজক কমিটির মুরব্বিরা আশা করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশের প্রায় ৩ হাজার ১৯ জন বিদেশি মেহমান ময়দানে তাদের জন্য নির্ধারিত নিবাসে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী হাজী মো. মনির হোসেন ও মো. সায়েম। তবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও কাশ্মীর থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক মুসল্লি ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ভারতের নাগরিকত্ব বিলের কারণে ভিসা জটিলতায় অনেক চিল্লাধারী ইজতেমার সাথী বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছেন না বলেও জানান তারা। বৃহস্পতিবার ময়দানে বয়ান করলেন যারা: ইজতেমা ময়দানে গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ জোহর সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশে ইস্তেকবালি (স্বাগত) বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইকবাল হাফিজ। তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ। ইজতেমার আনুষ্ঠানিক বয়ান আজ শুক্রবার বাদ ফজর থেকে শুরু হলেও বৃহস্পতিবার বাদ আসর থেকেই বয়ান শুরু করেন শীর্ষ মুরব্বিরা। বাদ আসর বয়ান করেন তাবলীগ জামাতের বাংলাদেশের শূরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম। বাদ মাগরিব বয়ান করেন দিল্লি নিজামুদ্দিন মারকাযের মাওলানা শামীম আজমী। তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন স্বাগতিক বাংলাদেশের মাওলানা জিয়া বিন কাসিম। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় বাংলাদেশের শীর্ষ মুরব্বিদের অবস্থান: দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে অবস্থান নিয়েছে বেশ কয়েকজন শীর্ষ মুরব্বি। তারা হলেন- মাওলানা সা’দ আহমদ কান্ধলভীপন্থি বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশের শূরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম, প্রকৌশলী খান মো. শাহাবুদ্দিন নাসিম, মাওলানা মোজাম্মেল হক, মাওলানা মোশারফ হোসেন, প্রফেসর ইউনুস শিকদার, মাওলানা আশরাফ আলী, মাওলানা আবদুল্লাহ মনছুর।
ইজতেমা ময়দানে আসার পথে ট্রেনের ধাক্কা ও হৃদরোগে দুই মুসল্লির মৃত্যু: গত বুধবার রাতে টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে ট্রেনের ধাক্কায় মো. গোলজার হোসেন (৪০) নামে এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। নিহত গোলজার গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার টেংরাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতে গোলজার ও তার সাথীরা গাইবান্ধা থেকে ট্রেনে করে এসে টঙ্গী জংশনে নেমে মালামাল গোছানোর কাজ করছিলেন। এ সময় পেছন দিক থেকে একটি ট্রেন এসে গোলজারের মাথায় সজোরে ধাক্কা দিলে তিনি পাশের রেললাইনে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত তার সাথীরা তাকে উদ্ধার করে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অপরদিকে ইজতেমা ময়দানে সুনামগঞ্জ জেলার আনছার আলী (৬৫) নামে এক মুসল্লির হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে তার পূর্ণ ঠিকানা পাওয়া যায়নি।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বেও আইনশৃঙ্খলা জোরদার: দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীতে আইনশৃঙ্খলা জোরদার করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে প্রায় ৮ হাজার পুলিশসহ র্যাব, সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদার করতে র্যাবের কমিউনিকেশন উইং, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে ২০টি প্রবেশপথসহ চারপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তিনশতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে মেটাল ডিটেক্টর, নাইটভিশন গগল্স, বাইনোকুলার, বোম্ব ডিসপোজাল টিম, এন্টিটেরোরিজম ইউনিট, হেলিকপ্টার-নৌ টহল ও স্টাইকিং ফোর্স। বিশেষ প্রয়োজনে হেলিকপ্টার উঠানামার জন্য বাটা গেট ও জেরিনা গার্মেন্ট কারখানায় দুটি হেলিপ্যাড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন স্থানে বসানো র্যাবের ১০টি ও পুলিশের ১৪টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষক দল সার্বক্ষণিক বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের পর্যবেক্ষণ করবেন।
বিদেশি মুসল্লিদের অংশগ্রহণ: ইথিওপিয়া, ভারত, কানাডা, কম্বোডিয়া, ক্যামোরস, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, অস্ট্রেলিয়া, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া, আমেরিকা, স্পেন, সৌদি আরবসহ বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশের ৩ হাজার ১৯ জন বিদেশি মেহমান বৃহস্পতিবার বিকালে পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইজতেমা ময়দানের গণমাধ্যম সমন্বয়কারী হাজী মনির হোসেন ও মো. সায়েম। এ পর্বের ইজতেমায় ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও কাশ্মীর থেকে অধিকসংখ্যক মেহমান ময়দানে এসেছেন বলে জানা গেছে। বিভিন্ন মহাদেশ ও ভাষাভাষী অনুসারে ইজতেমা ময়দানে বিদেশি মেহমানরা ভিন্ন ভিন্ন তাঁবুতে অবস্থান করছেন। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ময়দানের ভেতরে হকারদের উৎপাত: প্রতি বছর ইজতেমা ময়দান থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে হকাররা তাদের বিভিন্ন মালামালের পসরা সাজিয়ে বসতো। কিন্তু এ বছর খোদ ময়দানের ভেতরেই বিশেষ করে ৭, ৮ ও ৯নং গেটে তাদেরকে টুপি, বিভিন্ন বই, সিঙ্গাড়া-সমুচা, পিঠা, আতর-তাসবিহ ও মেছওয়াকসহ নানা ধরনের পণ্যের দোকান সাজিয়ে বেচাকেনা করতে দেখা গেছে। এতে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের যাতায়াতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ইজতেমা ময়দানের জিম্মাদার প্রকৌশলী শাহ মো. মুহিবুল্লাহ বলেন, ইতিমধ্যে ময়দানের শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মেহমান ময়দানে নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল রয়েছেন। আগামী রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে। ইনশাআল্লাহ।