শেষের পাতা
উঠে আসছে না নতুন নেতৃত্ব
কেন্দ্রে কর্তৃত্ব হারাচ্ছে সিলেট আওয়ামী লীগ
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, সোমবার, ৮:৫৭ পূর্বাহ্ন
কেন্দ্রে কর্তৃত্ব হারাচ্ছেন সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা। এক সময় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে সিলেটের নেতাদের দাপট ছিল বেশি। দল ও দেশের দুর্দিনে তারা রেখেছেন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। সরকারেও ছিল সমান অংশগ্রহণ। তাদের ঘিরে আবর্তিত হতো সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতি। এখন আওয়ামী লীগের সেই নেতারা নেই। প্রয়াত হয়েছেন তারা। এরপর থেকে ধীরে ধীরে কেন্দ্রে কর্তৃত্ব হারিয়েছে সিলেট আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ও জননেতা আব্দুস সামাদ আজাদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, দেওয়ান ফরিদগাজী সহ কয়েকজন নেতা সামনের সারিতে থেকে দলে নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রেসিডিয়ামসহ দলের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক পদে তারা দায়িত্ব পালন করেছেন। এদের সঙ্গে ছিলেন প্রয়াত স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীও। তাদের রাজনীতির দর্শনের সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিও হয়ে উঠেছিলো আলোকিত। দল ও সরকারে সমান দাপট থাকায় সিলেটের মানুষের নির্ভার অভিভাবক হয়ে উঠেছিলেন তারা। স্বাধীনতাত্তোর সিলেটের উন্নয়নেও তারা অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। এখন সিলেটের নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামে আছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। দলের নীতি-নির্ধারক পর্যায়ে তার অবস্থান থাকলেও সিলেটের স্থানীয় রাজনীতিতে তার সম্পৃক্ততা ততোটা নেই। বরং নিজের সংসদীয় আসন গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারকে কেন্দ্র করে তার রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকে আছেন এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। টানা তৃতীয়বারের মতো তিনি ওই পদে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথমে সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করলেও নিজেকে তেমন মেলে ধরতে পারেনি। তার নেতৃত্বে সিলেটের স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ তেমন সফলতা পায়নি। বরং মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে দূরত্ব আর অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়। এতে করে সিলেট আওয়ামী লীগ যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে অনেক পিছিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে গত সম্মেলনের পর এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে সিলেট বিভাগ থেকে সরিয়ে ময়মনসিংহের দায়িত্ব দেয়া হয়। বর্তমানে সিলেট বিভাগ আওয়ামী লীগের নেতা ময়মনসিংহের আহমদ হোসেন। তার নেতৃত্বে অনেক এগিয়েছে সিলেটের আওয়ামী লীগ। গত ৫ই ডিসেম্বর শেষ হয়ে গেল সিলেট আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্মেলনে সিলেট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বদানকারী তিন নেতাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানও। তিনি সিলেটের সাবেক মেয়র। বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহীর কমিটির সদস্য। আওয়ামী লীগের বিগত কাউন্সিলে কামরানকে সদস্য করার পর তিনি স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনগুলোতে গোটা সিলেট বিভাগ ঘুরে বেরিয়েছেন। নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। গত দুই মাস ধরে কামরান উপজেলা ও জেলা সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গোটা বিভাগ চষে বেরিয়েছেন। এ কারণে কামরানকে নিয়ে সিলেটের মানুষের প্রত্যাশা বেশি। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিলর সামনে। সিলেটের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন- কামরান সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। দীর্ঘ দিন তিনি সিলেট আওয়ামী লীগকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। রাজনীতিতে তার অবদান ভুলার নয়। এ কারণে সিলেট আওয়ামী লীগের অভিভাবক হিসেবে কেন্দ্রের রাজনীতিতে কামরানের সক্রিয় অংশগ্রহণ চান তারা। তবে- এ ব্যাপারে কামরান নীরব। জানান- দলীয় প্রধান অতীতে যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তা সততার মধ্য দিয়ে পালনের চেষ্টা করেছি। আগামীতেও যে দায়িত্ব দেয়া হবে তা পালন করা হবে বলে জানান তিনি। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ছিলেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। ২০১১ সাল থেকে তিনি একাই সিলেট আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন। দলের স্বার্থে নিজের সংসদীয় আসন সিলেট-২ আসনটি পরপর দু’দফা ছাড় দেন। মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী মাঠে কাজও করেন। ৫ই ডিসেম্বর সিলেট আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তাকে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বাদ দেয়া হয়। এরপরও অখুশি নন শফিকুর রহমান চৌধুরী। কেন্দ্রীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে শফিকুর রহমান চৌধুরীকে নিয়েও আশায় রয়েছেন সিলেটের নেতাকর্মীরা। ত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে শফিকুর রহমান চৌধুরীকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মূল্যায়নের দাবি তুলেছেন তারা। একই দাবি মহানগর সাধারণ সম্পাদক থেকে বাদ পড়া আসাদ উদ্দিন আহমদের অনুসারীদেরও।