প্রথম পাতা
সরজমিন
প্রতি রাতেই যেন বোনটি বলছে, তোরা আমাকে রক্ষা করতে পারিসনি
পিয়াস সরকার, কুতুপালং, উখিয়া থেকে
১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, শনিবার, ৮:৫৮ পূর্বাহ্ন
নির্মম বর্বরতার সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছেন তারা। নৃশংস নির্যাতনের প্রত্যক্ষদর্শী ওরা। চোখের সামনে দেখেছে গলা কেটে স্বজনদের হত্যা করতে । দেখেছে মা বোনদের ধরে নিয়ে প্রকাশ্যে ধর্ষণ করতে। হাজারো নির্যাতনের চিত্র এখন ওদের চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। দীর্ঘ আড়াই বছরেও ওরা হতে পারেনি স্বাভাবিক। বলেন, বেঁচে থাকার জন্য বেঁচে আছি। প্রতি রাতেই যেন আমার বোনটি আমাকে বলছে, তোরা পারিসনি আমার ইজ্জত রক্ষা করতে। পারিসনি আমাকে বাঁচাতে। এমনকি আমার লাশটি ফেলে দিয়ে চলে গেছিস দূর দেশে। কিন্তু আমি যে মরেও শান্তি পাচ্ছিনা। ওরা যেন আমার শরীর এখনও খুবলে খাচ্ছে। এভাবে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেয়া আমসার কথা বলে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, আমার ৪ ভাইয়ের একটাই বোন। ছোট বোনটার বয়স ছিল ১৬ বছর।
আমাদের গ্রামে প্রায়ই আর্মির লোকজন আসত। লোকজনদের ধরে নিয়ে যেতো। সাধারণত ধরতো যুবক ছেলেদের। আর্মি আসার খবর শুনলেই আমরা পালিয়ে যেতাম। বাড়িতে থাকতো বাবা মা আর বোন। ২ বার এসে আমাদের ভাইদের না পেয়ে ফিরে যায় আর্মি সদস্যরা। শেষবার ২ জন আর্মি আর ৬ জন সহযোগী এক এক করে ঘরে ঢুকে ধর্ষণ করে আমার বোনটাকে। এ সময় আমার বাবা মাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। আমরা লুকিয়ে ছিলাম পাশের জঙ্গলে। মায়ের কান্নার শব্দ শুনলেও কাছে যেতে পারিনি। এভাবেই বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন আমসার আলী।
তিনি বলেন, এরপর আমরা বাড়িতে ফিরে এসে ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় বোনকে পাই। ঘণ্টাখানেক পর হঠাৎ আর্মিরা আবার চলে আসে। তাদের সঙ্গে এবার যোগ হয় শ্থ খানেক স্থানীয় বৌদ্ধরা। আমরা ২ ভাই পালাতে পারলেও আর ২ ভাই পারেনি। আমার বোনটাকে সেই অবস্থায় ২ ভাইয়ের সঙ্গে ধরে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বাড়িতে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়। আমাদের গ্রামের বাড়িসহ প্রায় ২শ্থ বাড়ি পুড়িয়ে দেয় তারা। গ্রামের নারী, পুরুষ, ছোট বাচ্চা মিলিয়ে প্রায় ৭০ জনকে নিয়ে যায় একটি পাহাড়ের খাদে। সেখানে মাটি খোড়া ছিল। এরপর সবাইকে জীবিত অবস্থায় পুড়িয়ে মারে সেখানে।
এসব বলতে বলতে বারবার গলা জড়িয়ে আসছিল আমসারের। এরপর বলেন, আমরা গিয়ে দেখি শুধু জ্যান্ত পোড়া মানুষের কয়লা। মানুষ পোড়া গন্ধ আর স্বজন হারানোর দুঃখ। স্বজন হারালেও উচ্চ শব্দে কাঁদতেও পারছিলেন না তারা ভয়ে। তিনি আরো বলেন, এই গন্ধ ছড়িয়ে পরে দূর-দুরান্তে। গন্ধে টিকতে না পেরে আবার আর্মিরা আসে রাতে। এসে মাটি চাপা দিয়ে যায়। আমসার ছিলেন স্কুল শিক্ষক। এখানে ক্যাম্পে ছোট একটি দোকান চালান। তিনি আরো বলেন, বাড়ি ঘর সব পোড়া। কিছু ছিল না। সেই অবস্থায় মা-বাবাকে নিয়ে পালিয়ে আসি বাংলাদেশে। আসতে লাগে সাতদিন। দিনের বেলা লুকিয়ে থাকতাম পাহাড়ে। আসার সময় খাবার ছিল না। গাছের পাতা খেয়ে বেঁচে ছিলাম।
বাংলাদেশে আসার পর কেটে গেছে আড়াই বছর। প্রায় প্রতি মাসেই হাসপাতালে যেতে হয় তাকে। ভয়ংকর ৬ রাতের সাক্ষী ২২ বছর বয়সী এক নারী। ২০১৭ সালেই তার বিয়ে হয়েছিল। সদ্য বিবাহিত এই নারী শ্বশুর-শাশুড়িসহ থাকতেন শ্বশুর বাড়িতে। বিয়ের ৪ মাসের মাথায় হারান স্বামীকে। বলেন, একদিন আর্মি আসে তাদের গ্রামে। পাহাড়ে পালানোর সময় ধরা পড়েন তিনি। ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে ৬ দিন ধরে ধর্ষণ করে আর্মি ও ভান্তেরা। শুধু তাই নয় কেটে ফেলা হয় তার এক স্তন। যৌনাঙ্গে ছেড়ে দেয়া হয় বিচ্চু। কাকড়া। এভাবেই ভয়ানক নির্যাতন করা হয় তাকে।
তিনি আরো বলেন, আমাকে ক্যাম্প থেকে তারা ছেড়ে দেয় অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায়। এই ৬ দিন শুধু পানি খেতে দিয়েছিল। এরপর শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে দেখি সব পুড়ে ছাই। কিছু নাই। আমার বাবার বাড়ি পাশেই। সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশে পালিয়ে আসি।
তিনি বলেন, এটাকে বেঁচে থাকা বলে না। আমাকে মেরে ফেললেই ভালো হতো। আমি নানা শারীরিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। প্রচন্ড ব্যাথা করে শরীর। যৌনাঙ্গ দিয়ে এখনো রক্ত বের হয়। ভয়াল সেই ৬ রাতের কথা মাথায় আসলে ঘুম হয়না। এভাবেই কথা বলতে বলতে হাপিয়ে যান তিনি। এই নারীর সাক্ষাতকার নিতে সহযোগিতা করেছেন এনজিও কর্মী রেবেকা ফেরদৌস মিষ্টি।
আমাদের গ্রামে প্রায়ই আর্মির লোকজন আসত। লোকজনদের ধরে নিয়ে যেতো। সাধারণত ধরতো যুবক ছেলেদের। আর্মি আসার খবর শুনলেই আমরা পালিয়ে যেতাম। বাড়িতে থাকতো বাবা মা আর বোন। ২ বার এসে আমাদের ভাইদের না পেয়ে ফিরে যায় আর্মি সদস্যরা। শেষবার ২ জন আর্মি আর ৬ জন সহযোগী এক এক করে ঘরে ঢুকে ধর্ষণ করে আমার বোনটাকে। এ সময় আমার বাবা মাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। আমরা লুকিয়ে ছিলাম পাশের জঙ্গলে। মায়ের কান্নার শব্দ শুনলেও কাছে যেতে পারিনি। এভাবেই বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন আমসার আলী।
তিনি বলেন, এরপর আমরা বাড়িতে ফিরে এসে ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় বোনকে পাই। ঘণ্টাখানেক পর হঠাৎ আর্মিরা আবার চলে আসে। তাদের সঙ্গে এবার যোগ হয় শ্থ খানেক স্থানীয় বৌদ্ধরা। আমরা ২ ভাই পালাতে পারলেও আর ২ ভাই পারেনি। আমার বোনটাকে সেই অবস্থায় ২ ভাইয়ের সঙ্গে ধরে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বাড়িতে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়। আমাদের গ্রামের বাড়িসহ প্রায় ২শ্থ বাড়ি পুড়িয়ে দেয় তারা। গ্রামের নারী, পুরুষ, ছোট বাচ্চা মিলিয়ে প্রায় ৭০ জনকে নিয়ে যায় একটি পাহাড়ের খাদে। সেখানে মাটি খোড়া ছিল। এরপর সবাইকে জীবিত অবস্থায় পুড়িয়ে মারে সেখানে।
এসব বলতে বলতে বারবার গলা জড়িয়ে আসছিল আমসারের। এরপর বলেন, আমরা গিয়ে দেখি শুধু জ্যান্ত পোড়া মানুষের কয়লা। মানুষ পোড়া গন্ধ আর স্বজন হারানোর দুঃখ। স্বজন হারালেও উচ্চ শব্দে কাঁদতেও পারছিলেন না তারা ভয়ে। তিনি আরো বলেন, এই গন্ধ ছড়িয়ে পরে দূর-দুরান্তে। গন্ধে টিকতে না পেরে আবার আর্মিরা আসে রাতে। এসে মাটি চাপা দিয়ে যায়। আমসার ছিলেন স্কুল শিক্ষক। এখানে ক্যাম্পে ছোট একটি দোকান চালান। তিনি আরো বলেন, বাড়ি ঘর সব পোড়া। কিছু ছিল না। সেই অবস্থায় মা-বাবাকে নিয়ে পালিয়ে আসি বাংলাদেশে। আসতে লাগে সাতদিন। দিনের বেলা লুকিয়ে থাকতাম পাহাড়ে। আসার সময় খাবার ছিল না। গাছের পাতা খেয়ে বেঁচে ছিলাম।
বাংলাদেশে আসার পর কেটে গেছে আড়াই বছর। প্রায় প্রতি মাসেই হাসপাতালে যেতে হয় তাকে। ভয়ংকর ৬ রাতের সাক্ষী ২২ বছর বয়সী এক নারী। ২০১৭ সালেই তার বিয়ে হয়েছিল। সদ্য বিবাহিত এই নারী শ্বশুর-শাশুড়িসহ থাকতেন শ্বশুর বাড়িতে। বিয়ের ৪ মাসের মাথায় হারান স্বামীকে। বলেন, একদিন আর্মি আসে তাদের গ্রামে। পাহাড়ে পালানোর সময় ধরা পড়েন তিনি। ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে ৬ দিন ধরে ধর্ষণ করে আর্মি ও ভান্তেরা। শুধু তাই নয় কেটে ফেলা হয় তার এক স্তন। যৌনাঙ্গে ছেড়ে দেয়া হয় বিচ্চু। কাকড়া। এভাবেই ভয়ানক নির্যাতন করা হয় তাকে।
তিনি আরো বলেন, আমাকে ক্যাম্প থেকে তারা ছেড়ে দেয় অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায়। এই ৬ দিন শুধু পানি খেতে দিয়েছিল। এরপর শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে দেখি সব পুড়ে ছাই। কিছু নাই। আমার বাবার বাড়ি পাশেই। সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশে পালিয়ে আসি।
তিনি বলেন, এটাকে বেঁচে থাকা বলে না। আমাকে মেরে ফেললেই ভালো হতো। আমি নানা শারীরিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। প্রচন্ড ব্যাথা করে শরীর। যৌনাঙ্গ দিয়ে এখনো রক্ত বের হয়। ভয়াল সেই ৬ রাতের কথা মাথায় আসলে ঘুম হয়না। এভাবেই কথা বলতে বলতে হাপিয়ে যান তিনি। এই নারীর সাক্ষাতকার নিতে সহযোগিতা করেছেন এনজিও কর্মী রেবেকা ফেরদৌস মিষ্টি।