বাংলারজমিন

মিশ্র ফল চাষে সফল মাগুরার নাসির

এস আলম তুহিন, মাগুরা থেকে

১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, শনিবার, ৮:০৩ পূর্বাহ্ন

মাগুরায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মিশ্র ফল চাষ করে সফল হয়েছেন মাগুরা সদরের রাউতারা গ্রামের তরুণ যুবক নাসির। এ মিশ্র ফলের মধ্যে রয়েছে থাই পেয়ারা-৫, পেঁপে, কলা, লিচু, ড্রাগন, মাল্টা ও কাশ্মীরি কুল। এ ফলগুলো জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলাগুলোতে বাজারজাত করা হচ্ছে।
নাসির জানায়, আমার পিতা জামির হোসেন একজন আদর্শ কৃষক। তিনি দানাজাতীয় বিভিন্ন ফসল চাষ করেন। লেখাপড়া শেষ করে আমি বেকার যুবকের মতো বিভিন্ন জায়গায় চাকরির জন্য ধরনা দিতে থাকি। তারপর তিনি আমাকে কৃষিকাজে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করতে উৎসাহিত করেন এবং কৃষি অফিসে নিয়ে যান। প্রথমে ফুল চাষ দিয়ে আমি যাত্রা শুরু করি। নিজের অল্প জমিতে চাষ করি গ্লাডিয়াস ফুল। তারপর বাজারজাত করা শুরু করি। কিন্তু অল্প জমিতে ফুল চাষ করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ি। তারপর মাগুরা হর্টি কালচারের উদ্যানতত্ত্ববিদ ড. খান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি আমাকে মিশ্র ফল জাতীয় বিভিন্ন চাষে কাজ করার জন্য উৎসাহ দেন। তার পরামর্শে আমি এ চাষ শুরু করি। প্রথমে নিজের ৫ একর ও পরে ১০ একর জমিসহ মোট ১৫ একর জমিতে মিশ্র জাতীয় ফল থাই পেয়ারা-৫, পেঁপে, কলা, লিচু, ড্রাগন, মাল্টা ও কাশ্মীরি কুলের চাষ শুরু করি। নিজের পুঁজি কম থাকায় টাকা লোন করে মিশ্র ফল চাষ করি। এ চাষে হর্টিকালচারের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ আমাকে বেশি উদ্বুদ্ধ করেছে। চাষের ব্যাপারে কোনো সমস্যা হলে তাদের খুব সহযোগিতা পেয়েছি। বিশেষ করে মনিরুজ্জামান স্যার নিজে আমার মাঠে গিয়ে পরামর্শ ও সেবা দিয়েছেন। নাসির আরো জানায়, বর্তমানে ৫ একর জমিতে আমি থাই-৫ পেয়ারার চাষ করেছি। সারা বছরই এ পেয়ারার চাষ হয়। আকারে বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় এ পেয়ারার চাহিদা খুব বেশি। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই মণ পেয়ারা ক্ষেত থেকে উত্তোলন করা হয়। পাইকারি ক্রেতারা ক্ষেত থেকেই ফল কিনে নিয়ে যান। প্রতিমণ পেয়ারা ২ হাজার টাকা বিক্রি হয়। তাছাড়া, ৩৩ শতাংশ জমিতে চাষ করেছি ড্রাগন ফল। সাধারণত ড্রাগন ফলের মৌসুম শুরু হয় মে মাস থেকে নভেম্বর মাস। গাছে ফুল আসার ৪৫ দিন পর ফল আসা শুরু হয়। তারপর ফল একটু লাল রঙ ধারণ করলে তা সংগ্রহ করে বিক্রি শুরু হয়।
তিনি আরো জানান, জেলায় এ প্রথমবারের মতো চাষ করেছি কাশ্মীরি কুল। ৩ একর জমিতে আমি এ কুল চাষ করেছি।
এ ফল খুবই সুস্বাদু ও রসালো। ১০ থেকে ১২টা ফলে ১ কেজি হয়। আকারে বেশ বড় ও দেখতে লাল রঙের। এ ফলের চারা রোপণ করতে হয় ফাল্গুন মাসে। আশ্বিন-কার্তিক মাসে ফুল আসে। তারপর কার্তিক মাসের শেষের দিকে ফল আসতে শুরু করে। পৌষ-মাঘ মাসে এ ফল পরিপূর্ণ আকার ধারণ করে। এ চাষে আমার সার-বীজ-চারা বাবদ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পাশাপাশি পেঁপে, কলা, লিচু, মাল্টা,  ভিয়েতনামী নারকেল চাষ করছি।
কথা প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, এসব বাগানে প্রতিদিন ৩-৪ জন শ্রমিক কাজ করে। প্রত্যেক দিন তাদের মজুরি বাবদ ৩০০-৪০০ টাকা দেয়া হয়। আমি সব সময় ক্ষেত পরিচর্যা করি। পাশাপাশি কৃষি কর্মকর্তারা সব সময় আমাকে নানা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেন। প্রতি বছর এ মিশ্র ফল চাষে আমার প্রায় ২৪-২৫ লাখ টাকা আয় হয়। খরচ বাদে আমার ১৫ লাখ টাকা থাকে। আগামীতে কৃষি বিভাগের আরো সহযোগিতা পেলে আমার মিশ্র ফল চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে আমার ফল রাজধানী ঢাকা, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাদারীপুর, কালিগঞ্জ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় বাজারজাত হচ্ছে। মাগুরা হর্টি কালচার সেন্টারের উদ্যান তত্ত্ববিদ ড. খান মো. মনিরুজ্জামান বলেন, নাসির খুব পরিশ্রমী যুবক। তার মধ্যে মেধা, ধৈর্য ও কাজ করার মানসিকতা খুবই ভালো। আমরা তাকে সব সময় ভালো পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ প্রদানের চেষ্টা করছি। নাসিরের দেখাদেখি জেলার আরো অনেক উদ্যমী যুবক এ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status