দেশ বিদেশ

বালিশকাণ্ডে গণপূর্তের সাবেক প্রধান প্রকৌশলীসহ ১৩ জন কারাগারে

স্টাফ রিপোর্টার

১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বহুল আলোচিত বালিশকাণ্ডসহ অন্যান্য দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মাসুদুলসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য। তিনি জানান, দুদকের করা চারটি মামলায় প্রকল্পের ৩১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে  দায়েরকৃত মামলায় এই ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সংস্থাটির উপ পরিচালক মো. নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল তাদের গ্রেপ্তার করে। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- পাবনা গণপূর্ত বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমানে রিজার্ভ, সেগুনবাগিচা) মাসুদুল আলম, তিন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী তাহাজ্জুদ হোসেন, আহমেদ সাজ্জাদ খান ও মোস্তফা কামাল, উপসহকারী প্রকৌশলী আবু সাইদ, জাহিদুল হক, শফিকুল ইসলাম ও রওশন আলী, সহকারী প্রকৌশলী সুমন কুমার নন্দী, মোর্শেদ তারেক ও আমিনুল ইসলাম এবং দুই ঠিকাদার সাজিন কনস্ট্রাকশনের মালিক শাহাদাত হোসেন ও মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশনের মালিক আসিফ হোসেন। এর আগে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক চারটি মামলা দায়ের করেন দুদকের উপপরিচালক নাসির উদ্দিন।

 চার মামলায় মোট ৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। বালিশকাণ্ডসহ দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগের বিষয় গত ১৭ই অক্টোবর দুদক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করে। অপর দুই সদস্য হলেন- দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আতিকুর রহমান ও উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ। রূপপুর প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য নির্মাণাধীন গ্রিনসিটি আবাসন প্রকল্পের ২০ ও ১৬ তলা ভবনের আসবাব ও প্রয়োজনীয় মালামাল কেনা ও ভবনে উত্তোলন কাজে অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে গত ১৯শে মে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। দুর্নীতির নমুনা তুলে ধরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সেখানে একটি বালিশের পেছনে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬ হাজার ৭১৭ টাকা। এর মধ্যে বালিশের দাম ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা, আর আর সেই বালিশ ফ্ল্যাটে ওঠানোর খরচ ৭৬০ টাকা দেখানো হয়েছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দুই কমিটির তদন্তেই ৬২ কোটি ২০ লাখ ৮৯ হাজার টাকার অনিয়মের কথা উঠে আসে। হাইকোর্টের নির্দেশে গত জুলাই মাসে আদালতে জমা দেয়া ওই তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্নীতির জন্য ৩৪জন প্রকৌশলীকে দায়ী করা হয়। গ্রিন সিটি আবাসন পল্লীর নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা ও তা ভবনে তোলায় অনিয়ম নিয়ে গত ১৬ই মে একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে প্রকল্পের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের থাকার জন্য গ্রিন সিটি আবাসন পল্লীতে ২০ তলা ১১টি ও ১৬ তলা আটটি ভবন হচ্ছে। এরই মধ্যে ২০ তলা আটটি ও ১৬ তলা একটি ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ২০ তলা ভবনের প্রতিটি ফ্ল্যাটের জন্য প্রতিটি বালিশ কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৫৭ টাকা। আর ভবনে বালিশ ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা। প্রতিটি রেফ্রিজারেটর কেনার খরচ দেখানো হয়েছে ৯৪ হাজার ২৫০ টাকা। রেফ্রিজারেটর ভবনে ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ১২ হাজার ৫২১ টাকা। একেকটি খাট কেনা দেখানো হয়েছে ৪৩ হাজার ৩৫৭ টাকা। আর খাট ওপরে ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ১০ হাজার ৭৭৩ টাকা। প্রতিটি টেলিভিশন কেনায় খরচ দেখানো হয়েছে ৮৬ হাজার ৯৭০ টাকা। আর টেলিভিশন ওপরে ওঠাতে দেখানো হয়েছে ৭ হাজার ৬৩৮ টাকার খরচ। বিছানার খরচ ৫ হাজার ৯৮৬ টাকা দেখানো হয়েছে। তা ভবনে তুলতে খরচ দেখানো হয়েছে ৯৩১ টাকা। প্রতিটি ওয়ারড্রোব কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে ৫৯ হাজার ৮৫৮ টাকা। আর তা ওঠাতে দেখানো হয়েছে ১৭ হাজার ৪৯৯ টাকার খরচ। এরকম বৈদ্যুতিক চুলা, বৈদ্যুতিক কেটলি, রুম পরিষ্কারের মেশিন, ইলেকট্রিক আয়রন, মাইক্রোওয়েভ ইত্যাদি কেনাকাটা ও ভবনে তুলতে অস্বাভাবিক খরচ দেখানো হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status