বাংলারজমিন

পিয়াজ চাষে ঝুঁকেছে কৃষকরা

জাভেদ ইকবাল, রংপুর থেকে

১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ৮:০০ পূর্বাহ্ন

ভালো দামের আশায় পিয়াজ চাষে ঝুঁকেছে রংপুর অঞ্চলের কৃষক। কন্দ লাগিয়ে পিয়াজ উৎপাদনকারী চাষীরা ইতোমধ্যে ফসলের উচ্চ মূল্য পাওয়ায়, অধিক পরিমাণ জমিতে পিয়াজ আবাদের লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে তারা। কেউ কেউ সাথী ফসল হিসেবে পিয়াজ চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। তবে ফসল ঘরে তোলার সময় পিয়াজের আমদানি বন্ধ ও পিয়াজ সংরক্ষণাগার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা। পিয়াজ আবাদে কৃষকদের পরামর্শসহ বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সরবরাহ সংকটে সারাদেশে আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে পিয়াজের দাম। দেশে দীর্ঘ সময় আলোচনায় রয়েছে পিয়াজ। পিয়াজের যোগান দিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আচমকা ভারত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় পিয়াজ সংকটের কবলে পড়ে দেশ। এনিয়ে সরকারের মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা চাহিদা মোতাবেক পিয়াজ দেশেই উৎপাদন করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বিভিন্ন ফোরামে। ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ কৃষি বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরকে পিয়াজের আবাদ বাড়ানোর নির্দেশও দেয়া হয়েছে। কৃষি দপ্তরগুলোর পিয়াজ চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তোলা ও পিয়াজের উচ্চ মূল্যের কারণে রংপুর অঞ্চলের ৫টি জেলার কৃষকরা পিয়াজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের তথ্য মতে, গত বছর রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলা রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারীতে পিয়াজের আবাদ হয়েছিল ৬ হাজার ১৪২ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে (২০১৯-২০) পিয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে।  যা থেকে উৎপাদন হবে ৬৫ হাজার ১৮৫ টন পিয়াজ। রোপনের মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে কন্দ ও চারা করে পিয়াজ আবাদ শুরু করেছে কৃষক। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার শতকরা ৩৭ ভাগ জমিতে পিয়াজের কন্দ ও চারা লাগিয়েছে তারা। রংপুর জেলায় ১ হাজার ৩৫ হেক্টর কন্দ ও ২৫ হেক্টর চারা, গাইবান্ধা জেলায় ২৩৫ হেক্টর কন্দ, কুড়িগ্রাম জেলায় ৫৬৪ হেক্টর কন্দ, লালমনিরহাট জেলায় ৭৯ হেক্টর কন্দ ও ২৫১ হেক্টর চারা, নীলফামারীতে ২২৫ হেক্টর কন্দ ও ৭ হেক্টর জমিতে পিয়াজের চারা লাগানো হয়েছে।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর এলাকায় সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, পিয়াজ আবাদের জন্য ইতিমধ্যে ছোট ছোট প্লট করে চারা উৎপাদন করেছে কৃষক। কিছু কিছু নার্সারিতে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করেছে পিয়াজের চারা। কন্দ লাগিয়ে আগাম যেসব পিয়াজ আবাদ করা হয়েছিল সেসব পিয়াজ উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে দিয়েছেন কৃষকরা। পিয়াজের দাম বাড়ায় আলুর সাথে কেউ কেউ সাথী ফসল হিসেবে পিয়াজ-রসুনেরও চাষ করেছেন।

কন্দ পিয়াজ চাষ করে উচ্চমূল্য পাওয়ায় খুশি ওই এলাকার কৃষক সামসুল হক (৫৬)। তিনি বলেন, আমি রাস্তার ধারে ১৫ শতক জমিতে কন্দ পিয়াজ লাগিয়েছিলাম। প্রতি ধারা (৫ কেজি) পিয়াজ সাড়ে ৩’শ থেকে ৪’শ টাকায় বিক্রি করেছি। যেহেতু দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে, তাই আবার চারা পিয়াজের ফাঁকে ফাঁকে পানি কুমড়ার লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই ১৫ শতক জমির পিয়াজ আমি ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আমার দাবী ফসল ঘরে উঠার সময় যেন বিদেশ হতে পিয়াজের আমদানি বন্ধ করে দেয়া হয়। না হলে আমরা পিয়াজের ন্যায্য মূল্য পাব না।

একই এলাকার কৃষক মমিনুর রহমান (৬৮) বলেন, বর্তমানে বাজারে পিয়াজের অনেক দাম উঠেছে। তাই আলুর ফাঁকে ফাঁকে পিয়াজ লাগিয়েছি। বাড়ির লোকজনের চাহিদা মিটিয়ে যদি কিছু থাকে তাহলে তা বাজারে বিক্রি করব। পীরগঞ্জ উপজেলা রায়পুর ইউনিয়নের কৃষক আমিনুল ইসলাম (৩২) বলেন, পিয়াজের যে দাম, তা তো কিনার নাগালের বাহিরে চলি গেছে। সেইজন্যে হামরা পিয়াজ আবাদের প্রস্তুতি নিছি। বীজ লাগে ফেলাইছি। পৌষ মাসোত জমিত পিয়াজ লাগামো, ২ মাস পর ঘরোত তুলবার পারমো। পিয়াজ লাগেয়া হইবে কি, রাখার জন্যে হিমাগার তো নাই। পিয়াজ সারা বছর রাখা গেইলে অন্য দ্যাশ থাকি তো আর আনা নাগিল না হয়। রংপুরোত ম্যালা সবজি, পিয়াজ, রসুন, আদা হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মোর অনুরোধ এইগুল্যা রাখবার জন্যে একটা হিমাগার করেন। তাইলে দ্যাশের টাকা দ্যাশোত থাকবে, বাহির থাকি পিয়াজ আনা লাগবার ন্যায়।  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, পিয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় পিয়াজ চাষে কৃষকদের উদ্বুব্ধ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক জমিতে পিয়াজের চারা লাগানো হয়েছে। এবার আশাকরছি আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে পিয়াজের আবাদ হবে। প্রণোদনার মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলের ৬৬০ জন কৃষককে প্রতিজনকে এক বিঘা করে পিয়াজ আবাদের জন্য সার ও বীজ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া রাজস্ব অর্থায়নে ৩৩০ জন চাষীকে ১ বিঘা করে বীজ ও সার সহায়তা দেয়া হয়েছে। কৃষকদের পিয়াজের ভাল জাত আবাদ ও পরিচর্যার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status