প্রথম পাতা

জেনারেলদের পক্ষে ওকালতি

কূটনৈতিক রিপোর্টার ও মানবজমিন ডেস্ক

১২ ডিসেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন

জেনারেলদের পক্ষে ওকালতি করলেন অং সান সুচি। হেগে জাতিসংঘের আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার সময় তিনি হয়তো ভুলেই গিয়েছিলেন এই জেনারেলরাই তাকে বন্দি করে রেখেছিল, তার জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছিল দীর্ঘ ১৫টি বছর। ওই সময় তাকে কাটাতে হয়েছে গৃহবন্দি হয়ে। মানবাধিকার আর গণতন্ত্রের নেত্রী হয়েও তিনি ক্ষমতার কাছে কাবু হয়ে গেছেন- সে কথাই যেন গতকাল ফুটিয়ে তুলেছেন হেগে। এর মধ্য দিয়ে তার নৈতিক পরাজয় হয়েছে, এ কথা বলাই যায়। হেগে জাতিসংঘের আদালতে তিনি রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চালানো সেনাদের সহিংসতা, গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেনারা মুসলিমদের টার্গেট করে অভিযান চালিয়েছে বলে যে অভিযোগ তাও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে অভিযানের সময় সেনাবাহিনী অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছিল এমন অভিযোগ অস্বীকার করা যায় না বলে মন্তব্য করেন সুচি। বলেন, তবে এটা প্রমাণ করে না যে, সেনারা একটি সংখ্যালঘু গ্রুপকে উৎখাত করার চেষ্টা করেছে। বরাবরের মতো রোহিঙ্গা শব্দটি মুখে উচ্চারণ করেননি সুচি।

তিনি রোহিঙ্গাদের মুসলিম বা বেসামরিক নাগরিক বলে আখ্যায়িত করেন। সুচি বলেন, গণহত্যার অভিপ্রায়ের বিষয়ে কোনো প্রমাণ নেই। এক সময় মানবাধিকারের আইকন হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সুচি বলেন, সেনা সদস্যরা যুদ্ধাপরাধ করে থাকলে তা মিয়ানমারের দেশীয় তদন্ত ও বিচার ব্যবস্থায় নিষ্পত্তি করা হবে। একে আন্তর্জাতিকীকরণের সুযোগ নেই। ১৯৪৮-এর গণহত্যা সনদও এখানে প্রযোজ্য নয়। তিনি বলেন, আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির (আরসা) মতো স্থানীয় সশস্ত্র গ্রুপগুলোর হামলার জবাবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়েছে। রাখাইনে ২০১৭ সালের রক্তাক্ত নৃশংসতাকে ‘অভ্যন্তরীণ সংঘাত’ আখ্যায়িত করে হেগে অবস্থিত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মিয়ানমারের সেনাদের পক্ষে গতকাল এভাবেই বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন অং সান সুচি। এ সময় তিনি রাখাইন রাজ্যের ‘অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিমূলক চিত্র’ তুলে ধরার জন্য গাম্বিয়াকে দায়ী করেন। আইসিজেতে তার দেশের বিরুদ্ধে আনীত গণহত্যা মামলায় গতকাল বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকাল তিনটায় দেয়া বক্তব্যে এ অভিযোগ করেন তিনি। বক্তব্যে রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করেন।

অং সান সুচি প্রশ্ন রাখেন একটি রাষ্ট্রের কোনো একটি অংশে কি গণহত্যা হতে পারে, যে দেশ অন্যায়ের জন্য অভিযুক্ত তার সেনা কর্মকর্তা ও অফিসারদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে, বিচার করে এবং শাস্তি দেয়? যদিও এখানে সেনা কর্মকর্তাদের ওপর ফোকাস করা হয়েছে, আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, যথাযথ প্রক্রিয়ার অধীনে বেসামরিক পর্যায়ের অপরাধীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, বৌদ্ধ আরাকান আর্মি ও মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে চলা অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সংঘাতের শিকার রাখাইন। এই সংঘাতে মুসলিমরা কোনোভাবেই অংশ নন। সুচি তার বক্তব্যে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতিকে জটিল বলে আখ্যায়িত করেন। বলেন, সেখানকার পরিস্থিতি বোঝা খুব সহজ নয়। সেখানে সন্ত্রাসীদের থেকে ওই এলাকা মুক্ত করার জন্য অভিযান চালানো হয়েছে দাবি করে সুচি বলেন, রাখাইনে গণহত্যার ধারণার বাইরে আরো অনেক বিষয় আছে। গণহত্যা একটি অপরাধ বলে স্বীকার করেন তিনি। সুচি বলেন, ক্লিয়ারেন্স অপারেশনকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শুধু সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদ মোকাবিলার প্রশ্নে ব্যবহৃত হয়েছে। অং সান সুচি আরাকানে মুসলমানদের ইতিহাস বর্ণনা করে সামপ্রতিক ঘটনাগুলোকে সংঘাতের ফল হিসেবে অভিহিত করেন। কয়েকশ’ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বক্তব্য দিলেও তিনি বলেন যে, অভ্যন্তরীণ তদন্ত ও বিচার ব্যবস্থা কাজ করছে।

আইসিজেতে ১৭ সদস্যের বিচারক প্যানেলের সামনে দাঁড়িয়ে সুচি বলেন, ২০১৭ সালের আগস্টে আরসার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী যে ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চালিয়েছিল তা বিকৃত করা হয়েছে। রাখাইনের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ঢল নামে যখন বাংলাদেশে, তখন এর জন্য ভুলভাবে দায়ী করা হয় সেনাবাহিনীকে। মুসলিম অধিবাসীদের লক্ষ্য করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভিযান চালায়নি দাবি করে তিনি বলেন, যেসব সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ ছিল তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। রাখাইন বা মিয়ানমারের কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘন সহ্য করা হবে না। সুচি বলেন, এমন কোনো মেকানিজম নেই যা দিয়ে প্রমাণ করা যায় যে, রাখাইন মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা হয়েছে। যদি যুদ্ধাপরাধ করে থাকেন মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাহলে তাদের বিচার হবে মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী সামরিক বিচার ব্যবস্থায়। সুচি দাবি করেন তার দেশ গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু সেই প্রচেষ্টাকে খর্ব করার চেষ্টা করা হচ্ছে গাম্বিয়ার অভিযোগ। তিনি আরো বলেন, তাদের দেশের কমিশন অব এনকুয়ারির মতো অভ্যন্তরীণ গ্রুপগুলোর তুলনায় অন্য কোনো আন্তর্জাতিক বডি যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেনি।

তবে এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের তদন্তকারীদের রাখাইন রাজ্যে তদন্ত করতে যেতে তার সরকার অনুমতি দেয়নি- সুচি এ বিষয়টি উল্লেখ করতে ব্যর্থ হন। শুনানিতে সুচি রাখাইন রাজ্যের একটি ম্যাপ প্রদর্শন করেন। যেসব স্থানে ২০১৬ সালের শুরুর দিকে প্রথম সহিংসতা শুরু হয়েছিল। সুচি ওই ম্যাপ প্রদর্শন করে বলেন, সেখানকার সহিংসতার জবাব দিয়েছিল মিয়ানমারের নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। রাখাইন রাজ্যের এই অস্থিরতা গত কয়েক শতাব্দীর পুরনো। তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রাচীন আরাকান রাজ্য গঠনের উৎসাহে আরসা স্বাধীনতা চায় রাখাইনে। তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক সহিংসতা শুরু হয় ২০১৬ সালের অক্টোবরের শুরুর দিকে। ওই সময় আরসা বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে পুলিশ স্টেশনে হামলা চালায়। এতে পুলিশের ৯ সদস্য নিহত হন। নিহত হন কমপক্ষে ১০০ বেসামরিক ব্যক্তি। ৬৮টি অস্ত্র ও হাজার হাজার রাউন্ড গোলাবারুদ চুরি করে তারা। সুচি বলেন, লুটপাট ও সম্পদের ক্ষতি করা থেকে বেসামরিক লোকজনকে রক্ষায় ব্যর্থতা থাকতে পারে। তবে তা নির্ধারণ করা যেতে পারে যথাযথ ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায়। এটা মিয়ানমার সরকারের কোনো ব্যক্তিবিশেষ করতে পারে না।

সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ সম্পর্কে সুচি বলেন, ২০০৮ সালের সংবিধান অনুযায়ী মিয়ানমারে একটি সামরিক বিচার ব্যবস্থা আছে। রাখাইন রাজ্যে কোনো সেনা কর্মকর্তা বা অফিসার যদি যুদ্ধাপরাধ করে থাকেন তাহলে তার তদন্ত হতে হবে এবং বিচার হতে হবে সেই ব্যবস্থার অধীনে। গুতার পাইন গ্রামের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৫শে নভেম্বর জাজ এডভোকেট জেনারেল কোর্ট মার্শাল ঘোষণা করেন। সাম্প্রতিক খবরের শিরোনাম বলছে, যখন সামরিক বিচার ব্যবস্থা কাজ করে তখন তার বিপরীত চিত্রও পাওয়া যায়। মিয়ানমারেও এটা ঘটে থাকতে পারে। ইন ডিন গ্রামে ১০ মুসলিমকে হত্যার বিচার করা হয়েছে। এতে চারজন সেনাকর্মকর্তাকে ও তিনজন সেনা সদস্যের প্রত্যেককে কঠোর শ্রমসহ ১০ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। শাস্তির কিছু সময় জেল খাটার পর তারা সামরিক সাধারণ ক্ষমতায় মুক্তি পায়। এই ক্ষমা নিয়ে মিয়ানমারে আমরা অনেকেই অসন্তুষ্ট। তিনি আরো বলেন, যদি মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর কোনো সদস্য যুদ্ধাপরাধ করে থাকেন তাহলে তাদের বিচার হতে হবে মিয়ানমারের সংবিধান অনুসারে সামরিক বিচার ব্যবস্থায়।

এ ছাড়া যদি অসামঞ্জস্যভাবে শক্তির প্রয়োগ হয়, মানবাধিকারের লঙ্ঘন ঘটে থাকে, সম্পদ রক্ষায় ব্যর্থতা থাকে তাহলে তা প্রমাণিত হলে তার বিচার হতে পারে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অথবা মানবাধিকার বিষয়ক কনভেনশনের অধীনে। এর বিচার ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনের অধীনে হতে পারে না।

ওদিকে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেল সুচির বক্তব্যকে পুরোপুরি মিথ্যা বলে অভিহিত করেছেন নিউ ইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন গ্লোবাল জাস্টিস সেন্টার। এর প্রেসিডেন্ট আকিলা রাধাকৃষ্ণন বলেছেন, সুচি অভ্যন্তরীণ সামরিক সংঘাতের চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি কোনো গণহত্যার অভিপ্রায় ছিল না বলে দাবি করেছেন। তার এ দাবি পুরোপুরি মিথ্যা। বহু নিরপেক্ষ এজেন্সি ও বিশেষজ্ঞ গণহত্যা, ব্যাপক ধর্ষণ, সহায় সম্পদ ধ্বংসের ভয়াবহ সব তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেছে।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার আইসিজেতে ১৭ জন বিচারপতির উপস্থিতিতে প্রথম দিনের শুনানি হয়েছে। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ও আদালতে বিবাদী প্যানেলের দলনেতা অং সান সুচির উপস্থিতিতে অভিযোগকারী আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু মানবতাবিরোধী নৃশংসতার অভিযোগগুলোর সারাংশ তুলে ধরেন। আর এ নিয়ে বিস্তারিত বলেন বাদী প্যানেলের আইনজীবীরা। তারা গণহত্যা বন্ধসহ রাখাইনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফেরাতে জরুরি এবং সুস্পষ্ট নির্দেশনা সংবলিত একটি অন্তর্বর্তী আদেশ জারি করতে আদালতের প্রতি আর্জি জানান। শুনানিতে গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী তামবাদু বলেন, বিশ্ব বিবেকের কালিমা মোচনে আর এক মুহূর্তও দেরি করা ঠিক হবে না। একমাত্র এই আদালতই রাখাইনে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আশা জাগাতে পারে। আজ দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক হবে। সকালে আদালত বসবেন। সেখানে প্রথমে গাম্বিয়া এবং পরে মিয়ানমার যুক্তি খণ্ডনের সুযোগ পাবে। আন্তর্জাতিক আদালতের রেজিস্ট্রারের কার্যালয় সূত্রে খবর বেরিয়েছে, আজ শুনানি শেষ হলেও আদালতের অন্তর্বর্তী আদেশ বা সিদ্ধান্ত দিতে ৬ সপ্তাহের মতো সময় লাগতে পারে।

সূর্যের আলো ফোটার আগেই আদালতের দরজায় সুচি সমর্থকরা: নেদারল্যান্ডস-এ সূর্যের দেখা পেতে সকাল ৮টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু সুচি সমর্থকরা সে পর্যন্ত অপেক্ষা করেননি। বুধবার সূর্যের আলো প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই হেগের পিস প্যালেসের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন মিয়ানমারের নাগরিকেরা। ওই ভবনেই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে বিচার চলছে। সেখানে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুকে দেখতে পাওয়া যায়, যিনি মিয়ানমারের একটি টিভি চ্যানেলে সরাসরি সাক্ষাৎকার দেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং স্থানীয় মিডিয়ায় প্রচারিত ছবিতে দেখা যায়- হাতে সুচির ছবি আর প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছেন বর্মী নাগরিকরা। সেখানে লেখা ‘আমরা তোমার পাশে আছি’ (উই স্ট্যান্ড উইথ ইউ)। উল্লেখ্য, গণহত্যার মামলা লড়ছেন মিয়ানমারের অং সান সুচি। তার সঙ্গে বিকল্প এজেন্ট হিসেবে রয়েছেন স্টেট কাউন্সেলর দপ্তরের মন্ত্রী চ টিন্ট সোয়ে। আইনজীবী প্যানেলে রয়েছেন- দেশটির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মন্ত্রী ট টিন, বৃটেনের এসেক্স চেম্বারসের ক্রিস্টোফার স্টকার, কানাডিয়ান বংশোদ্ভূত মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক অপরাধ এবং মানবাধিকার বিষয়ের অধ্যাপক উইলিয়াম সাবাস, কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক আইনের পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল’র অধ্যাপক ও কেনিয়ার হাইকোর্টের আইনজীবী মিস ফোবে ওকোয়া, হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক অ্যান্ড্রিয়াস জিমারম্যান এবং বৃটেনের এসেক্স চেম্বারসের মিস ক্যাথেরিন ডবসন।

সুচিকে প্রকাশ্য আদালতে দায় স্বীকার করতে ৮ নোবেল বিজয়ীর আহ্বান: এদিকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানি চলাকালে প্রকাশ্য আদালতে দায় স্বীকার করে নিতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শান্তিতে ৮ নোবেল বিজয়ী। তারা বলেন, রাখাইনে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেনা কমান্ডারদের পাশাপাশি তার দায় সুচির ওপরও বর্তায়। নোবেল ওমেন’স ইনিশিয়েটিভের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে ইরানের শিরিন এবাদি, লাইবেরিয়ার লেমাহ গবোই, ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান, উত্তর আয়ারল্যান্ডের মাইরেড মাগুয়ের, গুয়াতেমালার রিগোবার্টা মেনচু তুম, যুক্তরাষ্ট্রের জোডি উইলিয়ামস, ভারতের কৈলাস সত্যার্থী ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা (সবাই) শান্তিতে নোবেল জয়ী হিসেবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ সব অপরাধ প্রকাশ্যে স্বীকার করে নিতে শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সুচির প্রতি আহ্বান জানাই।’ তারা রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিষয়ে সুচির অবস্থানে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে, এসব অপরাধের নিন্দা জানানোর পরিবর্তে অং সান সুচি এ রকম নৃশংসতা সরাসরি অস্বীকার করে আসছেন। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার জন্য দায়ী মিয়ানমারকে জবাবদিহি করতে এবং এসব অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের বিচার পাওয়ার পথ সুগম করতে এ পদক্ষেপ গ্রহণের (মামলা করার) জন্য আমরা গাম্বিয়াকে সাধুবাদ জানাই।’

শান্তির মানুষ হিসেবে আমরা রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিয়মতান্ত্রিক বৈষম্য মোকাবিলা ও রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা, ভূমির মালিকানা, আন্দোলনের স্বাধীনতা এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সুচির প্রতি আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রতি তার ব্যক্তিগত ও নৈতিক দায়িত্ববোধ পালন এবং তার অধীনে সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতি ও নিন্দা জানাতে অনুরোধ করছি।’ স্মরণ করা যায়, গত বছরের সূচনাতে ৩ নোবেল জয়ী তাওয়াক্কুল কারমান, শিরিন এবাদি ও মাইরেড মাগুয়ের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন। ঢাকা সফরের পর তারা অং সান সুচির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য মিয়ানমার যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সুচি সরকার তাদের ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে দেয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status