দেশ বিদেশ

উত্তরাঞ্চলে ট্রাক্টর বিক্রি কমেছে ৫৫ শতাংশ

স্টাফ রিপোর্টার

১০ ডিসেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৮:৫৪ পূর্বাহ্ন

উত্তরাঞ্চলের জেলা রংপুর সদরের কৃষক মো. নুর হোসেন। নিজের ছাড়াও তিনি গ্রামের অন্যদের জমি চাষ করে থাকেন ট্রাক্টর দিয়ে। ট্রাক্টর দিয়ে কিছু পরিবহনের কাজও করেন মাঝে মাঝে। আর ট্রাক্টরের জন্য তেল আনতে যেতে হয় শহরে। জেলা সদরের সড়ক পার হয়ে শহরে যেতে বিভিন্ন সময়ে হয়রানির শিকার হতে হয় তাকে। মাঝে মধ্যে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করা হয়। একই অবস্থা গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের মুরাদ হোসেনের। গত কয়েক মাস ধরেই তাকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তাদের আশপাশের গ্রামে জমি চাষে ট্রাক্টর প্রয়োজন। বেশকিছু মানুষ ট্রাক্টর কিনতে চাইলেও হয়রানির কারণে পিছিয়ে যাচ্ছেন। ফলে জমি চাষে প্রথাগতভাবেই হালের লাঙ্গল দিয়ে চাষ করতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার নতুন করে ট্রাক্টর প্রয়োজন হলেও কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না কৃষকরা।
প্রতিবছর সাড়ে ৩-৪ হাজার ট্রাক্টর বিক্রি হয় উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে। কিন্তু ভীতিকর অবস্থায় ট্রাক্টর বিক্রি কমেছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলাতেই বিক্রি কমেছে।
গত মাসে জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের ক্ষেতলাল উপজেলার মালন্দ এলাকায় ট্রাক্টর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার মানিকপাড়া গ্রামের কৃষক শামসুল হুদা বকুল ও রিপন হোসেনের ট্রাক্টরটি স্থানীয় প্রশাসন পুড়িয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারাও এখন ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করতে সাহস পাচ্ছেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনও শতভাগ যান্ত্রিকীকরণের আওতায় আসেনি জমি চাষ। তাই চাষাবাদে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন খরচ কমানো ও মাটির গুণাগুন ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ট্রাক্টর। তাছাড়া শ্রমিক সংকট মেটাতেও কার্যকর ভূমিকা রাখছে যন্ত্রটি। জমি তৈরি ছাড়াও কৃষিপণ্য পরিবহন ও বহুমূখী ব্যবহারে কৃষকের আয়ের অন্যতম উৎস ট্রাক্টর। কিন্তু কৃষকের এ ধরণের আতঙ্কে ট্রাক্টর ব্যবহার অনেকটাই বন্ধের উপক্রম।
এ বিষয়ে দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সাদিদ জামিল বলেন, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর- এ তিন মাসই হলো ট্রাক্টর বিক্রির উপযুক্ত মৌসুম। সারাদেশেই এখন নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। উত্তরবঙ্গে কৃষকের সঙ্গে চলমান ঘটনায় এক ধরণের ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ট্রাক্টর চালানোর ক্ষেত্রে জটিলতা থাকলে তা সময় দিয়ে দ্রুত সমাধান করতে হবে। চালকদের লাইসেন্সিং করা এবং গাড়িগুলোকে রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে কৃষকের মনে আস্থাহীনতা তৈরি হবে। এতে যান্ত্রিকীকরণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কৃষিখাত বিপাকে পড়তে পারে। এগ্রিকালচারাল ট্রাক্টর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার ট্রাক্টর কার্যকরভাবে চালু রয়েছে। চলতি বছরে নতুন অনুষঙ্গ উত্তরাঞ্চলে ভীতিকর পরিবেশ। গত কয়েক মাস ধরেই চলতে দেয়া হচ্ছে না ট্রাক্টর। ট্রাক্টর পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা, তেলের পাম্প থেকে তেল নিতে গেলে কিংবা কোনোভাবে সড়কে উঠলে আটক করা হচ্ছে ট্রাক্টর। পাশাপাশি মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। বিক্রি বন্ধ থাকলে সরকারের যান্ত্রিকীকরণে চলমান ভর্তূকি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। তাই মালিকদের এক বছরের মধ্যে ট্রাক্টরগুলোকে লাইসেন্সের আওতায় আনা যেতে পারে। কিভাবে চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকদের আরও সহজ শর্তে এবং স্বল্প সুদে ঋণ দিতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি দেশে ট্রাক্টর পরিচালনার ক্ষেত্রে ভারতীয় মডেল অনুসরণ করার সুপারিশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, দেশের বাজারে ট্রাক্টর সংযোজন, আমদানি ও বিপনন করছে এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ট্যাফে, এসিআই মোটরসের সোনালিকা, র‌্যানকন ও কর্ণফূলী লিমিটেডের মাহিন্দ্র, মেটাল প্লাসের আইসার, পারফরমেন্স মোটরসের স্বরাজ, গেটকোর নিউ হল্যান্ড, ইফাদ অটোসের এসকর্ট ও এনার্জিপ্যাকের জন ডিয়ার ব্র্যান্ডের ট্রাক্টর বাজারে রয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status