প্রথম পাতা

কতজন কিনতে পারছে টিসিবি’র পিয়াজ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

৯ ডিসেম্বর ২০১৯, সোমবার, ৯:৩৫ পূর্বাহ্ন

পিয়াজের দাম স্থিতিশীল করতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কম দামে পণ্যটি ট্রাকে করে বিক্রি করছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। আবার বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে সরবরাহ বাড়িয়েও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি বিক্রি করছে সংস্থাটি। তারপরও পিয়াজের দাম অস্বাভাবিক। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক সেলের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও পিয়াজ কিনতে পারেন নাই অনেকেই। আবার টিসিবির বিক্রি করা বড় সাইজের পিয়াজ কেউ কেউ না নিয়েই ফেরত গেছেন। এদিকে সংকট মোকাবিলায় সরকারি সংস্থাটি কি পরিমাণ পিয়াজ আমদানি করেছে এবং দিনে কি পরিমাণ বিক্রি করছে তার কোনো পরিসংখ্যানও নাই। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও টিসিবি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ওদিকে পাতাসহ নতুন পিয়াজ প্রচুর পরিমাণে বাজারে উঠতে শুরু করেছে। পাওয়া যাচ্ছে নতুন মুড়িকাটা পিয়াজ। দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। খুচরা বাজারে দেশি পিয়াজ ২৬০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। আমদানিকৃত পিয়াজের দামও ২০০ টাকার ওপরে। ফলে ভোক্তাদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, তুরস্ক থেকে ২ হাজার ৫০০ টন পিয়াজ আমদানি করা হয়েছে। গত ৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ৪ হাজার ১৫৯ টন পিয়াজ আমদানি করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আমদানিকৃত পিয়াজের মধ্যে টেকনাফ হয়ে দেশে এসেছে ১ হাজার ২২৭ টন পিয়াজ এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর হয়ে এসেছে ২ হাজার ৯৩২ টন পিয়াজ। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে পিয়াজের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পণ্যটি আমদানি অব্যাহত থাকবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে আমদানি করা হলে পণ্যটির দাম কমবে বলে আশ্বাস দেয়া হচ্ছিল। তবে পিয়াজ না আসা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেরও আমদানি বিলম্বের কারণেই পিয়াজের অস্থিরতা কাটছে না। ফলে এখনও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি।
এদিকে ভারত থেকে আমদানি বন্ধ হওয়ার পর হঠাৎ করেই দেশের বাজারে পিয়াজের বড় সংকট দেখা দেয়। সংকট মোকাবিলায় ভারতের বিকল্প বাজার থেকে আমদানি বাড়ান ব্যবসায়ীরা। আর এ সময়ে সবচেয়ে বেশি পিয়াজ আমদানি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে। এ ধারাবাহিকতায় গত নভেম্বরে মিয়ানমার থেকে মোট ২১ হাজার ৫৬০ টন পিয়াজ আমদানি হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে এসব পিয়াজ বাংলাদেশে ঢুকেছে।

সূত্র জানায়, এস আলম গ্রুপ প্রায় ৬০ হাজার টন পিয়াজ আমদানির ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) ইস্যু করেছে। এর মধ্যে ১০টা চার্টার্ড ফ্লাইটে ১ হাজার টন পিয়াজ ঢাকায় পৌঁছেছে, যা টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রায় ২৫ হাজার টন পিয়াজের শিপমেন্ট হয়েছে, যা ১০ বা ১২ ডিসেম্বরের পর প্রতিদিন ২০-৩০ কনটেইনার করে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছাবে। পর্যায়ক্রমে আইপি করা সব পিয়াজ আসবে।
চট্টগ্রাম উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ আগ্রাবাদ স্টেশনের দেয়া তথ্যানুসারে, গত ১২ই অক্টোবর থেকে ২রা নভেম্বর পর্যন্ত ৬টি দেশ থেকে মাত্র ১১ হাজার ৪৬০ টন পিয়াজ আমদানি হয়েছে। আমদানির অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষ ২৪টি প্রতিষ্ঠান ৭৭ হাজার ৬৬০ টন পিয়াজ আনার অনুমোদন পেয়েছিল।

আমদানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দাম কমে যাওয়ার ভয়ে আইপি ইস্যু করেও পিয়াজ আমদানি করছেন না আমদানিকারকরা। আমদানি করা পিয়াজ আসতে আসতে দেশের বাজারে দাম কমে যেতে পারে বলে আমদানিকারকরা ভয় পাচ্ছেন।
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, প্রতিদিন ঢাকায় ৬০টির অধিক ট্রাক সেল হচ্ছে। আর সারা দেশে শতাধিক ট্রাকে সেল করা হচ্ছে। এসব ট্রাকে এক টন করে পিয়াজ সরবরাহ করা হয়। সে হিসাবে প্রতিদিন সারা দেশে ১০০ টনের অধিক পিয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিদিন কি পরিমাণ পিয়াজ কিক্রি করা হচ্ছে তার কোনো পরিসংখ্যান এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে কি পরিমাণ আমদানি করা পিয়াজ টিসিবিতে ঢুকছে তারও কোনো পরিসংখ্যান পাননি। বাজারের পিয়াজের প্রচুর চাহিদা থাকার কারণে আমদানি করা টিসিবিতে ঢুকছে আর বাজারে ছাড়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে টিসিবির দৈনিক বাজার মূল্য তালিকায় দেখা গেছে, গত এক মাসে আমদানি করা পিয়াজের মূল্য বেড়েছে ৩২ শতাংশ। অন্যদিকে এক মাসের ব্যবধানে দেশি পিয়াজের মূল্য বেড়েছে ৯১.৮৪ শতাংশ।
সূত্র জানায়, দেশে বছরে পিয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টন বলে ধরা হয়। প্রতি মাসে গড় চাহিদা ২ লাখ টন। দৈনিক চাহিদা ৭ হাজার টনের কিছু কম। আর টিসিবির ট্রাকে প্রতিদিন খোলাবাজারে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করছে। ফলে বিশাল চাহিদার বিপরীতে ১০০ টন বাজারে প্রভাব ফেলতে পারছে না।
বাজারে দেশি পুরনো পিয়াজ প্রতিকেজি ২৬০ টাকার ওপরে, নতুন পিয়াজ ১৯০ থেকে ২০০, মিয়ানমারের পিয়াজ ২২০ থেকে ২৩০, চীনা পিয়াজ ১০০ থেকে ১১০ ও মিসরীয় পিয়াজ ১৫০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে রাজধানীর শান্তিনগর কাঁচা বাজারের সামনে দেখা গেছে, শতাধিক মানুষের জটলা। খোঁজ নিয়ে জানা যায় টিসিবির পিয়াজ নিয়ে গাড়ি আসবে। তাই নারী-পুরুষ আগেই লাইন ধরেছেন। সাড়ে দশটার একটু পরেই মাঝারি আকারের একটি পিকআপ ভ্যান এসে দাঁড়ায়। তখনই লাইনের লোকজনের শুরু হলো হুড়োহুড়ি। টিসিবির পিয়াজ কিনতে আসা আব্দুল আজিজ বলেন, এখানে ৪৫ টাকায় পিয়াজ পাওয়া যাবে, সেজন্য দু’ঘণ্টা আগে লাইন ধরেছি। ২০০ টাকায় পিয়াজ কেনার ক্ষমতা নাই। তাই রোদের মধ্যে লাইন দাঁড়িয়েছি। গাড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা টিসিবির ডিলার বলেন, এক হাজার কেজি পিয়াজ আছে গাড়িতে। শেষ না হওয়া পর্যন্ত ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করবো।

টিসিবির পিয়াজ কেনার এ চিত্র শান্তিনগর কাঁচা বাজারেই নয় রাজধানীর খামারবাড়ি ও সচিবালয়-প্রেসক্লাব সংলগ্ন রাস্তায় ট্রাক সেলের সানের চিত্রও একই। তবে যোগান অনুযায়ী ক্রেতার সংখ্যা ছিল কয়েকগুণ। এছাড়া রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও ময়মনসিংহে টিসিবির পিয়াজ বিক্রির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের পেছনে দীর্ঘ লাইন ছিল বলে প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। পিয়াজ কিনতে যাওয়া মানুষের অনেককে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে খালি হাতেও ফিরতে হয়েছে। কিছু জায়গায় লাইনে দাঁড়ানো মানুষের বদলে অনিয়ম করে অন্যদের পিয়াজ দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

খামারবাড়ির টিসিবির পিয়াজ কিনতে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছেন ক্রেতারা। লাইনে সববয়সী মানুষের সঙ্গে রয়েছে ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুরাও। এদের একটি অংশকে দলবেঁধে লাইনে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
পিয়াজ কিনতে আসা আতিক বলেন, দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। পিয়াজ পাচ্ছি না। অথচ ওরা নিয়মিতই পিয়াজ কিনছে। ওরা (শিশুরা) সিন্ডিকেটের সদস্য বলে মনে হচ্ছে।
খামারবাড়ির ট্রাক সেলের দায়িত্বে থাকা মনির বলেন, কেউ লাইনে দাঁড়ালে তো আর ফিরিয়ে দেয়া যায় না। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সবাইকে পিয়াজ দেয়া হচ্ছে। সচিবালয়-প্রেসক্লাবে হামিদা বেগম বলেন, ঘণ্টা-দুয়েক লাইনে দাঁড়িয়ে পিয়াজ পেয়েছি। এই বাজারে এটা আমাদের জন্য অনেক।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status