দেশ বিদেশ
পাহাড়ে নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ
স্টাফ রিপোর্টার
৬ ডিসেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ৮:২৭ পূর্বাহ্ন
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত নিপীড়িত ও বঞ্চিত সকল মানুষের স্বার্থ রক্ষায় নতুন সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ-এর আত্মপ্রকাশ হয়েছে। গতকাল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এর ঘোষণা দেয়া হয়। মূল সংগঠনের সঙ্গে আরও দুটি অঙ্গ সংগঠনের যাত্রা একই দিন থেকে শুরু হলো বলে জানানো হয়। অঙ্গ সংগঠন দুটি হলো-পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা পরিষদ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাহাড়ের চারটি সশস্ত্র সংগঠন এখন একদিকে যেমন চাঁদাবাজী ও রাহাজানির মাধ্যমে জনজীবন বিপন্ন করে তুলেছে, অন্যদিকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে প্রায়ই তারা নিজেরাই সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে জীবন ও সম্পদের হানি ঘটিয়ে পাহাড়ের পরিবেশ আরো ঘোলাটে করে তুলেছে। তাদের আধিপত্য বিস্তারের অংশ হিসেবেই নিপীড়নের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ ক্ষেত্রে পাহাড়ি-বাঙালি কেউ সন্ত্রাসীদের নিপীড়ন থেকে রেহাই পাচ্ছে না। পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত বাঙালি জনগোষ্ঠী হলো সন্ত্রাসীদের টার্গেট আর পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানুষ বলির পাঠা। গোষ্ঠীভেদে নির্যাতনের মাত্রা কিছু কমবেশি হলেও একটি বিশেষ গোত্র ছাড়া অন্যান্য সকল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ আজ এই সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর নির্যাতনের শিকার। সম্ভাবনাময় পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র স্বাধীনতার পর থেকেই আমাদের তাড়া করে ফিরছে। এই ষড়যন্ত্র হয়তো অনেক আগেই বাস্তবায়িত হয়ে যেতো যদি না পার্বত্য চট্টগ্রামে আমাদের দেশপ্রেমিক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যগণ সার্বক্ষণিকভাবে দায়িত্ব পালন না করতো। কিন্তু সেই দেশপ্রেমিক নিরাপত্তা বাহিনীর নামেও ষড়যন্ত্রকারীগণ নানা অপবাদ এবং মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে সর্বদা তৎপর রয়েছে। তাদের অপপ্রচারের কারণেই পাহাড়ের বেশ কিছু অঞ্চল থেকে সেনা ক্যাম্প গুটিয়ে আনার ফলে ওই এলাকার মানুষদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পাহাড়ের বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের কারো অজানা নয়। প্রতিনিয়তই সবুজ পাহাড়ে রক্ত ঝরছে, কখনো বাঙালির আবার কখনো বা পাহাড়িদের। খুনের পাশাপাশি পাহাড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন শিল্প ও কৃষিখাত স্থবির হয়ে রয়েছে চাঁদাবাজির যাতাকলে। একইসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি ও উপজাতীদের মধ্যে সহিংসতা ও সংঘাত তৈরি করে এবং উপজাতীদের বিপন্নতা প্রদর্শন করে আন্তর্জাতিক মহলের সহানুভূতি অর্জনের মাধ্যমে (অশুভ উদ্দেশ্যে) বাংলাদেশের স্পর্শকাতর জাতীয় ইস্যুতে বিদেশি শক্তিকে জড়ানো হচ্ছে বলে সকল আলামত স্পষ্ট। এরই পাশাপাশি স্বার্থান্বেষী মহল উপজাতী জনগোষ্ঠীকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান এবং দুস্কৃতিকারীদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের স্বাধীন ‘জুম্মল্যান্ড’ তৈরির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার প্রয়াস চালাচ্ছে। এ অবস্থায় আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোলনরত সংগঠনগুলো তথা পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন, পার্বত্য নাগরিক পরিষদ, পার্বত্য অধিকার ফোরামসহ অন্যান্য সংগঠন এর সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম বিলুপ্ত করা হলো। সেই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি-বাঙালি সকল সমপ্রদায়ের গণমানুষকে সাথে নিয়ে এক ও অভিন্ন লক্ষ্যে ুপার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদচ নামে নতুন সংগঠনের নাম ঘোষণা করছি। নবগঠিত এই সংগঠনটি কোনভাবেই শুধু বাঙালিদের সংগঠন নয়। বরং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালি নির্বিশেষে সকল নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের জন্য এর দ্বার উন্মুক্ত থাকবে। পরিশেষে দ্ব্যার্থহীন কন্ঠে ঘোষণা করছি যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল শ্রেণীর ও পেশার মানুষের স্বার্থ রক্ষায় নবগঠিত এই সংগঠনটি উপজাতি সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মত চাঁদাবাজি বা সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত হবে না। আমাদের বিশ্বাস পাহাড়ের সর্বস্তরের ও সব সমপ্রদায়ের শান্তিকামী ও দেশপ্রেমিক মানুষ এই নব সংগঠনের ছায়াতলে এসে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হবে।