বিশ্বজমিন
‘আমি কাউকে বিশ্বাস করি না, অস্ত্র নীরব হলে জনতা কথা বলে’
মানবজমিন ডেস্ক
৫ ডিসেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১০:০৫ পূর্বাহ্ন
ভোলোদিমির জেলেনস্কি। খুব করে হলেও ৬ মাস হয়েছে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। এরই মধ্যে প্রত্যাশার বিষয়ে অনেক কিছু শিখেছেন। ক্ষমতার প্রথম মেয়াদে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি সংলাপ নিয়ে আলোচনার বিষয়ে তার তেমন কোনো প্রত্যাশা নেই। এই সংলাপ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ৯ই ডিসেম্বর প্যারিসে। এর মধ্য দিয়ে গত ৫ বছর আগে তাদের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে যে যুদ্ধ গজিয়ে উঠেছিল তা নিয়ে একটি সমাধানে আসার কথা। এ বিষয়ে পশ্চিমা মিত্ররা কিছু করে দেবে এমনটাও আশা করেন না তিনি। এ বিষয়ে গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনকে একটি বিস্তারিত সাক্ষাতকার দিয়েছেন ভোলোদিমির জেলেনস্কি।
কিয়েভে সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন সিমন শাস্টার। টাইম ম্যাগাজিনের এই সাংবাদিক এবং ইউরোপের তিনটি শীর্ষ স্থানীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন জেলেনস্কি। এতে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে অভিশংসনের তদন্ত শুরু হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা এখনও প্রয়োজন ইউক্রেনের। জেলেনস্কি কৌতুক অভিনেতা থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট। ইউক্রেনকে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা প্রায় দুই মাস আটকে রাখার বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে তার কোনো আলোচনা হয়েছিল এ বিষয়টি তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে ট্রাম্প সম্প্রতি ইউক্রেনকে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বলে মন্তব্য করেছেন। তার এ মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন জেলেনস্কি। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা জব্দ করায় ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের যথার্থতা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। জেলেনস্কি ট্রাম্পের উদ্দেশে বলেন, যদি আপনি আমাদের কৌশলগত অংশীদার হন তাহলে আমার বিরুদ্ধে কোনো কিছুই আটকে দিতে পারেন না। আমি মনে করি বিষয়টি যথার্থতার বিষয়। বিষয়টি কোনো কিছুর বিনিময়ে বলে আমি মনে করি না। এখানে ওই সাক্ষাতকারটির চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: ৯ই ডিসেম্বর শান্তি সংলাপ নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কি?
উত্তর: অভিজ্ঞতা বলে যে, এসব সংলাপ বৈঠক অনেক ঘন্টা ধরে হয়। ভিন্নতা আছে এক্ষেত্রে। একটি বৃত্তাকার পদ্ধতিতে মিটিং হয়, যেখানে লোকগুলো একই জিনিস একে অন্যকে বলতে থাকেন। এখান থেকে আমার লব্ধ অভিজ্ঞতা হলো, এসব মিটিং থেকে কিছু হবে না এমনটাই ধরে নেয় মানুষ।
প্রশ্ন: তাহলে কি আপনি বলতে চাইছেন অতীতের সব সমঝোতা হলো স্রেফ ভান?
উত্তর: আমি এমনটাই অনুভব করি। হয়তো তারা ভিন্ন লক্ষ্য স্থির করেছেন। প্রতিটি দেশেরই তার নিজস্ব অবস্থান আছে। কোনো সন্দেহ নেই যে, আসন্ন সংলাপ যাতে হয় সে জন্য জার্মানি ও ফ্রান্স উভয় দেশই অনেক কিছু করেছে। এটা এক বিজয় বলবো। এটা বিজয় এ জন্য যে, যখন অস্ত্র নীরব হয়ে যায় তখন জনতা কথা বলে। এটা হলো প্রথম পদক্ষেপ।
প্রশ্ন: পরবর্তী পদক্ষেপ কি?
উত্তর: প্রথমেই আসে বন্দিবিনিময়। একটি সুস্পষ্ট সময়সীমার মধ্যে বাস্তব বিনিময়। দ্বিতীয় বিষয়টি আমি মনে করি অনেক কঠিন হবে। তা হলো যুদ্ধবিরতি। আগের সব চুক্তিতে এ বিষয়গুলো বলা হয়েছিল। আমাদেরকে দেখতে হবে গুলি কমেছে কিনা। সত্যি হলো তা থামেনি। তাই যখন আমরা বলি যুদ্ধবিরতি, আমাদেরকে তখন এই গুলির বিষয়টি থামাতে হবে। এ বিষয়গুলো হলো মানুষের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ জন্যই আমার কাছে এ দুটি বিষয় হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।
প্রশ্ন: সীমান্ত সম্পর্কে কি বলবেন? বর্তমানে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সহ রাশিয়া ইউক্রেনের যে এলাকার সীমান্ত তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, তা কখন আবার ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে আসবে?
উত্তর: হ্যাঁ, এটা সবচেয়ে জটিল প্রশ্ন। সবচেয়ে জটিল। সমঝোতায় এটাই হবে আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি সততার সঙ্গে আপনার কাছে স্বীকার করবো যে, আগের চুক্তিতে যেমনটা বলা হয়েছিল আমি সেই পদ্ধতিকে সমর্থন করবো না। ওই চুক্তির অধীনে নির্বাচন হওয়ার কথা। তারপর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ যাবে ইউক্রেনের হাতে। এ বিষয়ে আমি একমত হতে পারি না।
প্রশ্ন: যদি এই সংলাপ থেকে কিছুই অর্জিত না হয় তাহলে কি হবে?
উত্তর: দেখুন আমরা আমাদের দেশেই আছি। আমাদের একখন্ড জমি কেড়ে নেয়া হয়েছে। ডোনব্যাসে আমি তো যুদ্ধে যেতে রাজি নই। আমি জানি অনেকে মাথাগরম আছেন। এসব মাথাগরম মানুষের মধ্যে ওইসব মানুষ আছেন, যারা র্যালি করেন এবং বলেন, চলো যুদ্ধ করি এবং জিতে আসি। কিন্তু কিসের বিনিময়ে? কতটা মূল্য দিতে হয় তাতে? এটা হলো জীবন ও দেশভূমির কাহিনী। আমি যদি সমাজকে সন্তুষ্ট করতে না পারি তাহলে নতুন নেতা আসবেন। তিনিই এসব দাবি পূরণ করবেন। আমি কখনোই এসবের জন্য লালায়িত নই। কারণ, জীবন সম্পর্কে আমার মূল্যায়ন হলো সবার উপরে মানুষের জীবন।
প্রশ্ন: ভ্লাদিমির পুতিনের কাছ থেকে আপনার প্রত্যাশা কি?
উত্তর: রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন দফা ফোনে কথা হয়েছে। আমি মনে করি তারা ফলপ্রসূ মনোভাব পোষণ করেন। আমরা আমাদের নাবিকদের বন্দিবিনিময়ের মাধ্যমে ফেরত পেয়েছি। ভয়াবহ অবস্থায় আমাদের যেসব সদস্য, রাজনৈতিক বন্দি জেলখানায় আহত হয়েছিলেন তাদের ফেরত পেয়েছি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: পুতিনের সঙ্গে এই সংলাপের বিষয়ে আপনার কি কোনো আস্থা আছে?
উত্তর: কারো ওপর মোটেও আস্থা নেই আমার। সততার সঙ্গে আমি এটা বলছি। রাজনীতি কোনো নিরেট বিজ্ঞান নয়। এ জন্যই স্কুলজীবনে আমি গণিত পছন্দ করতাম। কারণ, গণিতের সব কিছুই আমার কাছে ছিল পরিষ্কার। এতে আপনি একটি চলক ব্যবহার করে সমীকরণ সমাধান করতে পারবেন। কিন্তু এক্ষেত্রে একটি মাত্র চলক নয়। এখানে রয়েছেন দেশের রাজনীতিকরা। এসব মানুষকে আমি জানি না। তারা মনে কি ভাবছেন তা আমি বুঝতে পারি না। এ জন্যই আমি মনে করি কারো আস্থা থাকতে পারে না। সবারই রয়েছে নিজস্ব স্বার্থ।
প্রশ্ন: রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি সংলাপে বৃহত্তর ভূমিকা রাখতে পারে যুক্তরাষ্ট্র এমনটা দীর্ঘ সময় ধরে বলে আসছে ইউক্রেন। শান্তি প্রক্রিয়া বিষয়ক ট্রাম্প প্রশাসনের বিশেষ দূত কুর্ট ভোলকার এটাই চেষ্টা করছিলেন।
উত্তর: তিনি চেষ্টা করেছেন। কঠোর চেষ্টা করেছেন সত্যি। তার অনেক সফলতা আছে বলে আমি মনে করি। তিনি যা করেছেন তার সবকিছু আমি দেখতে পাইনি। কারণ, তখন আমি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ছিলাম না। তবে যখন আমাদের সাক্ষাত হয়েছে তারপর থেকে বিষয়টা দেখতে পেয়েছি। সক্রিয়ভাবে তিনি আমাদের পক্ষ অবলম্বন করেছেন।
প্রশ্ন: কিন্তু ট্রাম্পকে অভিশংসন তদন্তকে কেন্দ্র করে পদ ছেড়ে গেছেন ভোলকার। অন্য কিছু কর্মকর্তাও তাই করেছেন। এর প্রেক্ষাপটে শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কেমন হবে বলে আপনি দেখছেন? বিষয়টি গত দু’এক মাসে কতটা পাল্টেছে?
উত্তর: সম্প্রতি এক সরাসরি টেলিভিশন সম্প্রচারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেন দুর্নীতিগ্রস্ত। তারা অর্থ চুরি করছে। তার মানসিকতা পরিবর্তন করার কোনো প্রয়োজন নেই। তার সঙ্গে আমার বৈঠকের সময়ে আমি তাকে বলেছি, আমি চাই না আমাদের দেশের ভাবমূর্তি এমন হোক।
প্রশ্ন: ট্রাম্প এবং পুতিন?
উত্তর: আমাদের অনুপস্থিতিতে কেউ আমাদের নিয়ে কথা বলুক এটা আমি পছন্দ করি না। ইউক্রেন এখন ভিন্ন চেহারার। নিজের বিরুদ্ধে এমন প্রচারণা বন্ধ করতে চায় ইউক্রেন। এখানে কোনো উগ্রপন্থি নেই। কেউ কাউকে হত্যা করছে না। একজন অন্যের জিনিস ভোগ করছে না। ফলে সারা বিশ্ব ইউক্রেনকে সমর্থন করবে।
(সংক্ষেপিত)
কিয়েভে সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন সিমন শাস্টার। টাইম ম্যাগাজিনের এই সাংবাদিক এবং ইউরোপের তিনটি শীর্ষ স্থানীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন জেলেনস্কি। এতে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে অভিশংসনের তদন্ত শুরু হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা এখনও প্রয়োজন ইউক্রেনের। জেলেনস্কি কৌতুক অভিনেতা থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট। ইউক্রেনকে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা প্রায় দুই মাস আটকে রাখার বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে তার কোনো আলোচনা হয়েছিল এ বিষয়টি তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে ট্রাম্প সম্প্রতি ইউক্রেনকে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বলে মন্তব্য করেছেন। তার এ মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন জেলেনস্কি। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা জব্দ করায় ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের যথার্থতা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। জেলেনস্কি ট্রাম্পের উদ্দেশে বলেন, যদি আপনি আমাদের কৌশলগত অংশীদার হন তাহলে আমার বিরুদ্ধে কোনো কিছুই আটকে দিতে পারেন না। আমি মনে করি বিষয়টি যথার্থতার বিষয়। বিষয়টি কোনো কিছুর বিনিময়ে বলে আমি মনে করি না। এখানে ওই সাক্ষাতকারটির চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: ৯ই ডিসেম্বর শান্তি সংলাপ নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কি?
উত্তর: অভিজ্ঞতা বলে যে, এসব সংলাপ বৈঠক অনেক ঘন্টা ধরে হয়। ভিন্নতা আছে এক্ষেত্রে। একটি বৃত্তাকার পদ্ধতিতে মিটিং হয়, যেখানে লোকগুলো একই জিনিস একে অন্যকে বলতে থাকেন। এখান থেকে আমার লব্ধ অভিজ্ঞতা হলো, এসব মিটিং থেকে কিছু হবে না এমনটাই ধরে নেয় মানুষ।
প্রশ্ন: তাহলে কি আপনি বলতে চাইছেন অতীতের সব সমঝোতা হলো স্রেফ ভান?
উত্তর: আমি এমনটাই অনুভব করি। হয়তো তারা ভিন্ন লক্ষ্য স্থির করেছেন। প্রতিটি দেশেরই তার নিজস্ব অবস্থান আছে। কোনো সন্দেহ নেই যে, আসন্ন সংলাপ যাতে হয় সে জন্য জার্মানি ও ফ্রান্স উভয় দেশই অনেক কিছু করেছে। এটা এক বিজয় বলবো। এটা বিজয় এ জন্য যে, যখন অস্ত্র নীরব হয়ে যায় তখন জনতা কথা বলে। এটা হলো প্রথম পদক্ষেপ।
প্রশ্ন: পরবর্তী পদক্ষেপ কি?
উত্তর: প্রথমেই আসে বন্দিবিনিময়। একটি সুস্পষ্ট সময়সীমার মধ্যে বাস্তব বিনিময়। দ্বিতীয় বিষয়টি আমি মনে করি অনেক কঠিন হবে। তা হলো যুদ্ধবিরতি। আগের সব চুক্তিতে এ বিষয়গুলো বলা হয়েছিল। আমাদেরকে দেখতে হবে গুলি কমেছে কিনা। সত্যি হলো তা থামেনি। তাই যখন আমরা বলি যুদ্ধবিরতি, আমাদেরকে তখন এই গুলির বিষয়টি থামাতে হবে। এ বিষয়গুলো হলো মানুষের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ জন্যই আমার কাছে এ দুটি বিষয় হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।
প্রশ্ন: সীমান্ত সম্পর্কে কি বলবেন? বর্তমানে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সহ রাশিয়া ইউক্রেনের যে এলাকার সীমান্ত তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, তা কখন আবার ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে আসবে?
উত্তর: হ্যাঁ, এটা সবচেয়ে জটিল প্রশ্ন। সবচেয়ে জটিল। সমঝোতায় এটাই হবে আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি সততার সঙ্গে আপনার কাছে স্বীকার করবো যে, আগের চুক্তিতে যেমনটা বলা হয়েছিল আমি সেই পদ্ধতিকে সমর্থন করবো না। ওই চুক্তির অধীনে নির্বাচন হওয়ার কথা। তারপর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ যাবে ইউক্রেনের হাতে। এ বিষয়ে আমি একমত হতে পারি না।
প্রশ্ন: যদি এই সংলাপ থেকে কিছুই অর্জিত না হয় তাহলে কি হবে?
উত্তর: দেখুন আমরা আমাদের দেশেই আছি। আমাদের একখন্ড জমি কেড়ে নেয়া হয়েছে। ডোনব্যাসে আমি তো যুদ্ধে যেতে রাজি নই। আমি জানি অনেকে মাথাগরম আছেন। এসব মাথাগরম মানুষের মধ্যে ওইসব মানুষ আছেন, যারা র্যালি করেন এবং বলেন, চলো যুদ্ধ করি এবং জিতে আসি। কিন্তু কিসের বিনিময়ে? কতটা মূল্য দিতে হয় তাতে? এটা হলো জীবন ও দেশভূমির কাহিনী। আমি যদি সমাজকে সন্তুষ্ট করতে না পারি তাহলে নতুন নেতা আসবেন। তিনিই এসব দাবি পূরণ করবেন। আমি কখনোই এসবের জন্য লালায়িত নই। কারণ, জীবন সম্পর্কে আমার মূল্যায়ন হলো সবার উপরে মানুষের জীবন।
প্রশ্ন: ভ্লাদিমির পুতিনের কাছ থেকে আপনার প্রত্যাশা কি?
উত্তর: রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন দফা ফোনে কথা হয়েছে। আমি মনে করি তারা ফলপ্রসূ মনোভাব পোষণ করেন। আমরা আমাদের নাবিকদের বন্দিবিনিময়ের মাধ্যমে ফেরত পেয়েছি। ভয়াবহ অবস্থায় আমাদের যেসব সদস্য, রাজনৈতিক বন্দি জেলখানায় আহত হয়েছিলেন তাদের ফেরত পেয়েছি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: পুতিনের সঙ্গে এই সংলাপের বিষয়ে আপনার কি কোনো আস্থা আছে?
উত্তর: কারো ওপর মোটেও আস্থা নেই আমার। সততার সঙ্গে আমি এটা বলছি। রাজনীতি কোনো নিরেট বিজ্ঞান নয়। এ জন্যই স্কুলজীবনে আমি গণিত পছন্দ করতাম। কারণ, গণিতের সব কিছুই আমার কাছে ছিল পরিষ্কার। এতে আপনি একটি চলক ব্যবহার করে সমীকরণ সমাধান করতে পারবেন। কিন্তু এক্ষেত্রে একটি মাত্র চলক নয়। এখানে রয়েছেন দেশের রাজনীতিকরা। এসব মানুষকে আমি জানি না। তারা মনে কি ভাবছেন তা আমি বুঝতে পারি না। এ জন্যই আমি মনে করি কারো আস্থা থাকতে পারে না। সবারই রয়েছে নিজস্ব স্বার্থ।
প্রশ্ন: রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি সংলাপে বৃহত্তর ভূমিকা রাখতে পারে যুক্তরাষ্ট্র এমনটা দীর্ঘ সময় ধরে বলে আসছে ইউক্রেন। শান্তি প্রক্রিয়া বিষয়ক ট্রাম্প প্রশাসনের বিশেষ দূত কুর্ট ভোলকার এটাই চেষ্টা করছিলেন।
উত্তর: তিনি চেষ্টা করেছেন। কঠোর চেষ্টা করেছেন সত্যি। তার অনেক সফলতা আছে বলে আমি মনে করি। তিনি যা করেছেন তার সবকিছু আমি দেখতে পাইনি। কারণ, তখন আমি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ছিলাম না। তবে যখন আমাদের সাক্ষাত হয়েছে তারপর থেকে বিষয়টা দেখতে পেয়েছি। সক্রিয়ভাবে তিনি আমাদের পক্ষ অবলম্বন করেছেন।
প্রশ্ন: কিন্তু ট্রাম্পকে অভিশংসন তদন্তকে কেন্দ্র করে পদ ছেড়ে গেছেন ভোলকার। অন্য কিছু কর্মকর্তাও তাই করেছেন। এর প্রেক্ষাপটে শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কেমন হবে বলে আপনি দেখছেন? বিষয়টি গত দু’এক মাসে কতটা পাল্টেছে?
উত্তর: সম্প্রতি এক সরাসরি টেলিভিশন সম্প্রচারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেন দুর্নীতিগ্রস্ত। তারা অর্থ চুরি করছে। তার মানসিকতা পরিবর্তন করার কোনো প্রয়োজন নেই। তার সঙ্গে আমার বৈঠকের সময়ে আমি তাকে বলেছি, আমি চাই না আমাদের দেশের ভাবমূর্তি এমন হোক।
প্রশ্ন: ট্রাম্প এবং পুতিন?
উত্তর: আমাদের অনুপস্থিতিতে কেউ আমাদের নিয়ে কথা বলুক এটা আমি পছন্দ করি না। ইউক্রেন এখন ভিন্ন চেহারার। নিজের বিরুদ্ধে এমন প্রচারণা বন্ধ করতে চায় ইউক্রেন। এখানে কোনো উগ্রপন্থি নেই। কেউ কাউকে হত্যা করছে না। একজন অন্যের জিনিস ভোগ করছে না। ফলে সারা বিশ্ব ইউক্রেনকে সমর্থন করবে।
(সংক্ষেপিত)