শেষের পাতা

দুর্ঘটনার কবলে বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাস, নিহত ৯

আরিফ হোসেন, শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) থেকে

২৩ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, ৯:১৩ পূর্বাহ্ন

ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে বাস ও বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের ৫ জনসহ ৯ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর বাসস্ট্যান্ডের দুইশ’ গজ উত্তর দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঢাকা থেকে মাওয়াগামী স্বাধীন পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৮১৯৪) একটি বাসের চলন্ত অবস্থায় চাকা ফেটে বিপরীতমুখী বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাসের (ঢাকা মেট্রো চ-১৫-৫৫৬৬) সামনে চলে এলে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এ ঘটনায় একই পরিবারের ৫ জনসহ মাইক্রোবাসের ৯ যাত্রী নিহত হন। মাইক্রোবাস যাত্রীদের সবাই লৌহজংয়ের কনকসার থেকে কামরাঙ্গীরচরে বিয়ের বরযাত্রী হিসেবে যাচ্ছিলেন।

শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পরপরই স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মাইক্রোবাসের ভেতরে আটকে পড়া নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে। নিহতদের মধ্যে বর রুবেলের বাবা আঃ রশিদ বেপারী (৭০), বোন লিজা (২৪), লিজার মেয়ে (ভাগনী) তাবাসসুম (৬), রুবেলের ভাই সোহেলের স্ত্রী রুনা আক্তার (২২), সোহেলের ছেলে তাহসান (৫) একই পরিবারের সদস্য। রুবেলের ভাবি রুনার ছোট বোন রেণু (১২) ও নিহত হয়।
নিহতদের মধ্যে অন্যান্যরা হলেন- মাইক্রোবাসচালক বিল্লাল (২৮), যাত্রী কেরামত বেপারী (৭১), মফিজুল মোল্লা (৬০)। এদের মধ্যে রুনা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন মাইক্রোবাসের অপর যাত্রী জাহাঙ্গীর (৪৫) এর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে তার স্বজনরা।

এই ঘটনায় আহত ১২ জন বাসযাত্রীকে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
হাঁসাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আবদুল বাসেদ জানান, মাওয়াগামী স্বাধীন পরিবহনের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঢাকাগামী মাইক্রোবাসের ওপরে গিয়ে পড়লে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মাইক্রোবাসের আরোহীরা সবাই আত্মীয়-স্বজন ছিল।

এ দুর্ঘটনার খবর পেয়েই মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম ঘটনাস্থল পরিদর্শনে ছুটে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে নিহতদের প্রত্যেককে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা অনুদান ও আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান, এ ঘটনায় শ্রীনগরের হাঁসাড়া হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। নিহতেদের লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বিয়েবাড়ি পরিণত হলো শোকেরবাড়িতে
এদিকে, গতকাল বিকালে লৌহজংয়ের কনসার গ্রামে রুবেলের বিয়েবাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বিয়েবাড়ি শোকেরবাড়িতে পরিণত হয়েছে। বর রুবেল ও তার ভাই সোহেল বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। একই সাথে এতোগুলো স্বজনের মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছে না। স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে বিয়েবাড়ির বাতাস। রুবেলের চাচাতো বোনদের আহাজারি যেন কিছুতেই থামছিল না। চাচাতো বোন রেহানা বেগম বুক চাপড়ে বলছিলেন, আমার কাকার মাঝেই বাবা হারানোর শোক ভুলে ছিলাম। এখন বাবাও নাই কাকাও নাই। এতো শোক সইব কেমনে।

নির্বাক বর রুবেল
দুর্ঘটনার সময় বর রুবেল ছিলেন পেছনের মাইক্রোবাসে। দুর্ঘটনা দেখে রুবেলের গাড়ি থামে। গাড়ি থেকে নেমেই বাবা, বোন, ভাগনী, ভাবী, ভাতিজাসহ মাইক্রোবাসের  ভেতর নিথর দেহগুলো দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। স্বজনরা তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর থেকে সে নির্বাক। তার মুখে কোনো কথা নেই। শুধুই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। একই অবস্থা রুবেলের ভাই সোহেলের তিনি তার স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ।

বরের মাইক্রোতে থাকা কনকাসার গ্রামের শফিকুল সিকদারের পুত্র নজরুল ইসলাম জানান, তারা দুইটি মাইক্রো নিয়ে রুবেলের বিয়ের কাবিন রেজিস্ট্রি করতে ঢাকার কামরাঙ্গীর চরে যাচ্ছিলেন।

বাল্যবিয়ে তাই কনে গ্রাম থেকে ঢাকায়
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মূলত গতকাল ছিল রুবেলের বিয়ের কাবিন অনুষ্ঠান। তাই বাড়িতে তেমন একটা ধুমধাম না থাকলেও পরিবারের মাঝে ছিল উৎসব আমেজ। রুবেলের বিয়ে ঠিক হয়েছিল লৌহজংয়ের নওপাড়া গ্রামের মেয়ে নিশি আক্তারের সঙ্গে। কিন্তু নিশির বিয়ের বয়স এখনও হয়ে উঠেনি। অর্থাৎ নিশি ছিল নাবালিকা। তাই গোপনে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল নিশির এক আত্মীয়ের বাসায় ঢাকায় কামরাঙ্গীর চরে।

তদন্ত কমিটি-
এই এদুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আসমা শাহীনকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্যান্যরা হলেন- শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার  মোসাম্মৎ রহিমা আক্তার, এএসপি হাইওয়ে ও বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মঈদুল ইসলাম ও স্থানীয় ষোলঘর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status