দেশ বিদেশ

শাবি’র হল খোলা রাখার দাবিতে মানববন্ধন-মিছিল

শাবি প্রতিনিধি

২২ নভেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ৮:৪৩ পূর্বাহ্ন

শাহ্‌জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে শীতকালীন ছুটির মধ্যে আবাসিক হল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দ্বিতীয় দিনের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া বুধবার (২০শে নভেম্বর) আন্দোলনের প্রথমদিন মানববন্ধনে প্রক্টরিয়াল বডির বাধার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (২১শে নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে শতাধিক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে একটি বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাসের ইউনিভার্সিটি সেন্টার, একাডেমিক ভবন ‘ই’ এবং ‘সি’ ঘুরে ভিসি ভবনের সামনে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে ফয়সল আহমেদ শুভ’র সঞ্চালনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন- তানভীর আকন্দ, সুদীপ্ত ভাস্কর অর্ঘ্য, নিশাত জাহান নিসা, তাবিয়া তাসনিম আনিকা, নাজিরুল আজম, স্বপন আহমেদ।

সমাবেশে ফয়সল আহমেদ শুভ বলেন, ‘গতকাল যে দাবিতে আমরা মানববন্ধন করেছি তা একটি যৌক্তিক দাবি ছিল। আলোচনা সমালোচনার মাধ্যমেই একটি বিশ্ববিদ্যালয় উন্নতির দিকে এগিয়ে যায়। এমন সব নিয়মগুলোই প্রতিষ্ঠিত হয় যা সবার জন্য মঙ্গলজনক। কিন্তু গতকাল মানববন্ধনে প্রক্টরিয়াল বডির বাধা দেয়া ও মানববন্ধন করতে না দেয়া আমাদের জন্য লজ্জার, আমরা তার প্রতিবাদ জানাই। জানা মতে আর কোথাও মানববন্ধনের মতো একটি নিরীহ কার্যক্রমে বাধা দেয়া হয় না।’

সুদীপ্ত ভাস্কর অর্ঘ্য বলেন, ‘শীতকালীন ছুটি পিছিয়ে ক্যাম্পাস বন্ধ করেছে তাতে সমস্যা নাই কিন্তু আবাসিক হল কেন বন্ধ করবে? অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনের সময় হল বন্ধ করা হয় না। জানা মতে, সমাবর্তনের দিন কিংবা আগের দিন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত হল বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু প্রশাসন এটা কীভাবে বলে ৫ই জানুয়ারি থেকে ১৬ই জানুয়ারি পর্যন্ত হল বন্ধ থাকবে। ছাত্র-ছাত্রীরা জানুয়ারিতে টিউশনি করে। জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ সময় স্কুলের শিক্ষার্থীদের নতুন বর্ষের ক্লাস শুরু হয়। এর আগে কখনো হল বন্ধ থাকতো না। হঠাৎ করে বিভিন্ন ছুটির উপর ভর করে প্রশাসন সুযোগ পেলেই আবাসিক হল বন্ধ করে। ৮ তারিখ সমাবর্তন তাহলে ৯ থেকে ১৬ জানুয়ারি হল বন্ধের যুক্তিটা কী?’ তাবিয়া তাসনিম আনিকা বলেন, ‘ক্যাম্পাসকে যদি নিরাপদই মনে না করা হয় তাহলে সীমানা প্রাচীর দেয়ার কারণ কি, শোভাবর্ধন? আর শীতকালে মেয়েদের হলে প্রবেশের জন্য একঘণ্টা এগিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে কিন্তু ক্লাস-পরীক্ষা তো এক ঘণ্টা আগানো হয়নি।  ছেলেদেরকে হলে প্রবেশের সময় সীমা না দিলেও মেয়েদেরকে কেন ৭টার আগে হলে ঢুকতে হবে।’ তানভীর আকন্দ বলেন, ‘ক্যাম্পাসে কোনো সুস্থ কালচার তৈরি হতে দেয়া হচ্ছে না। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করতে দেয়া হচ্ছে না। ক্যাম্পাসকে শূন্য করে ফেলা হচ্ছে। উন্নয়ন মানে শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, সামাজিক উন্নয়নও। সুস্থ কালচার না থাকায় শিক্ষার্থীরা ডিপ্রেশনে ভুগছে এবং মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।’ এদিকে দীর্ঘ এক যুগ পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাঙ্ক্ষিত সমাবর্তন আগামী বছরের ৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সমাবর্তন সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু হঠাৎ করে দীর্ঘদিনের জন্য হল ও ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্তে এই মিলনমেলা বিঘ্নিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সমাবর্তনে উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। সমাবর্তনে নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শীতকালীন ছুটি ১৮ থেকে ৩১শে ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৫ই জানুয়ারি থেকে ১৬ই জানুয়ারি করা হয় এবং ক্যাম্পাস বন্ধের পাশাপাশি আবাসিক হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত সোমবার (১৮ই নভেম্বর) অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। হল বন্ধের বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করবো না। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত, সামনে সমাবর্তন আছে। আর এসএসএফ-এর নিদের্শনাও আছে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তাটি এবার নিশ্চিত করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে আমরা সিদ্ধান্ত নেই। আমরা সব সময় চাই আমাদের ছেলে-মেয়েরা ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক।’ প্রসঙ্গ, আবাসিক হল বন্ধের প্রতিবাদে ও নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সমাবর্তনের সময় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রবেশাধিকার দেয়ার জন্য গত বুধবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি না নিয়ে মানববন্ধন করায় এ সময় প্রক্টরিয়াল বডি মানববন্ধনে বাধা প্রদান করেন এবং শিক্ষার্থীরা ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status