প্রথম পাতা

আঙ্কটাডের প্রতিবেদন

বৈদেশিক ঋণ নির্ভরতা বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২১ নভেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:১৮ পূর্বাহ্ন

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মনে করে, জাতীয় উন্নয়নে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরতা কমলেও   বৈদেশিক ঋণ নির্ভরতায় দেশের ঝুঁঁকি বাড়ছে। নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার (এলডিসি) শর্তগুলো পূরণ করায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে পাওয়া ঋণের সুদ বাড়ছে। যা একটি দেশের উন্নয়নের অন্যতম বাধা। গতকাল জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (আঙ্কটাড) প্রকাশিত স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি প্রতিবেদন-২০১৯ এ বাংলাদেশ সম্পর্কে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। আঙ্কটাডের পক্ষে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। রাজধানীর পল্টনের ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। বর্তমানে বাংলাদেশসহ ৪৭টি এলডিসি আছে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অনুষ্ঠানে এলডিসি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সাহায্যের পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। তবে সেই সহায়তা পাওয়া বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে সিপিডি। এছাড়া গত ৫ বছরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, যা উদ্বেগজনক। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমিয়ে ২ শতাংশে এসেছিল। সামপ্রতিক বছরে তা বেড়ে আবারও ৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। দায়দেনা সঠিক ব্যবস্থাপনার স্বার্থে বাংলাদেশকে কঠিন শর্তের বৈদেশিক ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হতে হবে।

আঙ্কটাডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এলডিসির টেকসই উন্নয়নের জন্য রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত ১৫ শতাংশ দরকার। এলডিসিগুলোর গড় রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ২০০০ সালে ছিল মাত্র ১১ শতাংশ। ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ শতাংশ। বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত এখনো ৯ শতাংশের মতো। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশের কর আহরণ এখনো দুর্বল। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫ সালে দেশ থেকে যে পরিমান অর্থ পাচার হয়েছে তা ওই বছরে দেশের রাজস্ব আয়ের ৩৬ শতাংশ। দেশ থেকে পাচারের ৮০ শতাংশ অর্থই আমদানি ও রপ্তানির মাধ্যমে হচ্ছে বলে জানায় সিপিডি।

প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, বৈদেশিক অনুদান নির্ভরতা কমলেও বৈদেশিক অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়নি। তবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ায় আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী দেশগুলো আর্থিক সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দিয়েছে। অনুদানের তুলনায় বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের পরিমাণ এখন বেশি। যা উন্নয়নশীল দেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি আরো বলেন, যতটুকু বৈদেশিক অর্থায়ন আমাদের দেশে আসছে সেটাও সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছি না। অবৈধ লেনদেনের কারণে রাজস্ব হারাচ্ছে দেশ। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে হলে বিদেশি বিনিয়োগ নির্ভরশীলতা অবশ্যই কমাতে হবে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করেন তিনি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অর্থ পাচারের পরিমাণ আমাদের দেশের মোট আহরিত রাজস্বের ৩৬ শতাংশ। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে এটাকে অন্যতম বাধা বলে মনে করেন তিনি।

ড. দেবপ্রিয় জানান, উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলে দেশের সামাজিক ব্যবস্থা এবং পরিবেশগত ভারসাম্য ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। কারণ বাংলাদেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৩৭ শতাংশ বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ হয়ে গেলে সামাজিক উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই বৈদেশিক অনুদান এবং ঋণ সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য নীতিগত পুনর্বিবেচনা করার সময় এসেছে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধিতেও নীতিগত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ এখন অনুদান বা নমনীয় ঋণ থেকে কঠিন শর্তের ঋণের দিকে যাচ্ছে। অবকাঠামো খাতে কঠিন শর্তের ঋণ পাওয়া যাবে। কারণ অবকাঠামো নির্মাণ করলে দ্রুত সুবিধা পাওয়া যাবে। কিন্তু স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো সামাজিক খাতে কঠিন শর্তের ঋণ পাওয়া যাবে না। তাই এই খাতের অর্থায়ন চাহিদা মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সম্পদ আহরণ বাড়াতে হবে।

বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিদেশি ঋণ নিলেও দায়দেনা পরিস্থিতি যেন আয়ত্তে থাকে। সাশ্রয়ীভাবে বিদেশি অর্থ ব্যবহারে একটি পর্যালোচনা করার সময় এসেছে। স্বল্পোন্নত অনেক দেশ বেশি ঋণ নিয়ে নিজেদের পরিস্থিতি কঠিন করে ফেলেছে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, বর্তমানে বিশ্বে মোট ৪৭টি স্বল্পন্নত দেশ রয়েছে। তারা সকলেই বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভর। কিন্তু ক্রমান্বয়ে সাহায্যের পরিমাণ ও গুণগত দিক দুটোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেখা যাচ্ছে সাহায্যের পরিমাণ কমছে এবং কার্যকরি ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশের ইতিহাসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এই দুটো দেশই ২০১৮ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের তিনটি মানদণ্ডের সবগুলোতেই নির্দিষ্ট মান অর্জন করেছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০১২ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বেসরকারি পর্যায়ে মূলধন বিন্যাসে প্রথম ৪টি দেশের মধ্যে একটি বাংলাদেশ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status