প্রথম পাতা

২২ হাজার রিয়ালে বিক্রি করে দেয়া হয় সুমিকে

স্টাফ রিপোর্টার

১৬ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, ৯:০৬ পূর্বাহ্ন

অবশেষে দেশে ফিরেছেন সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার সুমি আক্তার (২৬)। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টায় এয়ার এরাবিয়ার জি৯-৫১৭ নম্বর ফ্লাইটে হযরত শাহ্‌জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। সুমি আক্তার পঞ্চগড় জেলার বোদা থানার রফিকুল ইসলামের মেয়ে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সচ্ছলতার আশায় দালালের মাধ্যমে সৌদি আরবে পাড়ি জমান সুমি আক্তার। সৌদি আরব যাওয়ার সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই মারধর আর যৌন হয়রানিসহ নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হন সুমি। সমপ্রতি ফেসবুকে ভিডিওতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সেই নির্যাতনের কথা তুলে ধরে দেশে ফেরার আকুতি জানান তিনি। পরে জেদ্দা বাংলাদেশ কনস্যুলেটের হস্তক্ষেপে সুমিকে নিয়োগকর্তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে নাজরান পুলিশ। শুরুতে সুমির নিয়োগকর্তার দাবিকৃত ২২ হাজার সৌদি রিয়াল পরিশোধ না করা পর্যন্ত তাকে ফাইনাল এক্সিট- অর্থাৎ দেশে ফিরতে দেয়া হবে না বলে জানালেও পরে নাজরান শহরের শ্রম আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়। আদালত সুমির দেশে ফেরার আবেদন মঞ্জুর করায় তার দেশে ফেরার বাধা কেটে যায়।

ওদিকে দেশে ফেরার পর সুমি আক্তার জানিয়েছেন, গত ৩০শে মে তার স্বামী নুরুল ইসলাম ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’র মাধ্যমে তাকে সৌদি আরব পাঠান। সেখানে যাওয়ার পর রিয়াদে প্রথম কর্মস্থলে মালিক তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতো, মারধর করতো, হাতের তালুতে গরম তেল ঢেলে দিতো। চিৎকার করলে ঘরের ভেতর আটকে রাখা হতো। একপর্যায়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে ওই মালিক তাকে না জানিয়েই সৌদি আরবের ইয়ামেন সীমান্ত এলাকা নাজরানের এক ব্যক্তির কাছে প্রায় ২২ হাজার রিয়ালে বিক্রি করে দেয়। তিনি জানান, ওই মালিকও একইভাবে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে।

পরিবারের কাছে হস্তান্তর
পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার সুমি আক্তারকে বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল বিকালে প্রশাসনের মাধ্যমে তাকে হস্তান্তর করা হয়। হস্তান্তরের সময় প্রবাসী কল্যাণ ডেক্সের সহকারী পরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল, বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহমুদ হাসান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীর প্রধান, তার বাবা-মা, স্বামীসহ আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকাল সোয়া ৭টায় বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। সুমির পরিবারের সদস্যরা জানান, চলতি বছরের ৩০শে মে রিক্রুটিং এজেন্সি ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’র মাধ্যমে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস (এসভি) ৮০৫ যোগে সৌদি আরব যান আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকার নুরুল ইসলামের স্ত্রী সুমি। সেখানে যাওয়ার পর নিয়োগকর্তা (কফিল) ও অন্যদের পাশবিক নির্যাতনের মুখে পড়েন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এ মাসের শুরুর দিকে একপর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভিডিওবার্তায় কান্নায় ভেঙে পড়ে দেশে ফেরার আকুতি জানান সৌদি প্রবাসী সুমি। ভিডিওতে সুমি বলেন, ‘ওরা আমারে মাইরা ফালাইবো, আমারে দেশে ফিরাইয়া নিয়া যান। আমি আমার সন্তান ও পরিবারের কাছে ফিরতে চাই। আমাকে আমার পরিবারের কাছে নিয়া যান। আর কিছু দিন থাকলে আমি মরে যাবো। ভালো কাজের’ কথা বলে এনে এখন তার ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে।’ এরপর জেদ্দা কনস্যুলেটের হস্তক্ষেপে সুমিকে নিয়োগকর্তার (কফিল) বাড়ি থেকে এলে রাখা হয় সেইফ হোমে। কিন্তু ৫ই নভেম্বর পাওনা ২২ হাজার রিয়াল পাওয়ার আগে তাকে ‘ফাইনাল এক্সিট’ দেবেন না বলে তখন জানিয়েছিলেন কফিল। সৌদি আরবের নাজরান শহরের শ্রম আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তির পর সুমির দেশে আসার পথ তৈরি হয়। ১০ই নভেম্বর আদালত সুমির কফিলের (নিয়োগকর্তা) দাবি করা ২২ হাজার সৌদি রিয়াল পরিশোধের আবেদন নামঞ্জুর করে এবং সুমিকে দেশে ফেরার অনুমতি দেয়।

সুমির বাড়ি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার পাঁচপীর ইউনিয়নের বৈরাতী সেনপাড়া গ্রামে। সুমির বাবা রফিকুল ইসলাম পেশায় একজন দিনমজুর। চার-ভাই বোনের মধ্যে সুমি বড়। দুই বছর আগে আশুলিয়ার চারাবাগের নূরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয় সুমির। বিয়ের পর সুমি জানতে পারেন, আগেও একটি বিয়ে করেছেন তার স্বামী। বিয়ের দেড় বছর পর তার একটি সন্তানও হয়। কিন্তু সতীনের বিভিন্ন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ও সন্তানকে মানুষ করার স্বপ্নে বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সুমি।

সুমির মা মলিকা বেগম জানান, আমরা মেয়েকে দেশে ফিরিয়ে এনে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, অভাব অনটনের সংসারে কিছু টাকা কামানোর জন্য বিদেশে গিয়েছিল মেয়েটা (সুমি)। কোনোদিন ভাবতে পারিনি এমন অবস্থার শিকার হবে আমার এই মেয়েটি। বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহমুদ হাসান বলেন, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে আমাদের এখানে তাকে পাঠানো হয়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামালের উপস্থিতিতে বাবা-মায়ের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status