প্রথম পাতা

বাবা-মা-ভাই ছাড়াই ছোঁয়ার দাফন

বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি

১৪ নভেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ছোঁয়ার পরিবারে চলছে শোকের মাতম। একই দুর্ঘটনায় মা-বাবা ও একমাত্র ভাইকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রেখেই আদিবা আক্তার ছোঁয়ার (২) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মা-বাবার কলিজার টুকরা আদরের ধন ছোট্ট ছোঁয়া। এক মুহূর্তের জন্যও মা-বাবাকে ছেড়ে থাকতো না, ট্রেন দুর্ঘটনার আগেও ছিল মা-বাবার কোলে। মা-বাবাকে সব সময় চোখের সামনে রাখতো। মা কিংবা বাবাকে সামনে না দেখলে কাঁদতো। ঘাতক ট্রেন কেড়ে নিয়েছে তার প্রাণ। ছোট্ট ছোঁয়ার লাশ হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে পৌঁছার পর থেকেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ছোঁয়াকে দেখতে গ্রামের বাড়িতে হাজারও মানুষের ভিড় জমায়। মা-বাবার অবর্তমানে মঙ্গলবার রাত ১০টায় নানাবাড়ি সৈদ্যাটুলা গ্রামে ছোঁয়ার লাশ নানা মাফিক উল্লার তত্ত্বাবধানেই দাফন করা হয়। দাফনের সময় ছোঁয়ার লাশ দেখে উপস্থিত সবাই কেঁদেছেন। মানুষের কান্নায় তখন আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। আদিবা আক্তার ছোঁয়ার নানা মাফিক উল্লা (৭০) মানবজমিনকে বলেন, আমার ঔরসে কোনো সন্তান নেই। সন্তানের অভাবে যখন আমার স্ত্রী দিশেহারা তখনই ছোঁয়ার মা নাজমা বেগমকে দত্তক আনি। ছোট বেলায় দত্তক আনার পর থেকে একদিনের জন্য ওকে বুঝতে দেইনি যে নাজমা আমাদের ঔরসের মেয়ে না।

ভিটেবাড়ি সব হারিয়ে অন্যের বাড়িতে থাকি। অভাব অনটন সত্ত্বেও মেয়ের কোনো চাহিদাকেই অপূর্ণ রাখিনি। তার মুখের দিকে তাকিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিচ্ছিলাম। তিনি আরো বলেন, গত কয়েক বছর পূর্বে উপজেলার তাম্বুলিটুলা গ্রামের সুহেল মিয়ার সাথে নাজমার বিয়ে দেই। স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে সুখেই ছিল আমার মেয়ে। জীবিকার তাগিদে জামাই সোহেল ও আমার মেয়ে দুজন চট্টগ্রাম একটি গার্মেন্টে চাকরি নেয়। সেখানে যেতেই স্বামী সন্তান নিয়ে উদয়ন ট্রেনে যাত্রা করে ছিল তারা। কিন্তুব্রাহ্মণবাড়িয়ার মন্দবাগে মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যায় আমার ছোট্ট নানা ভাই ছোঁয়া। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার বাবা, মা ও একমাত্র ভাইয়ের জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। এদিকে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার সময় লাশ দাফনের জন্য বানিয়াচং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিহত আদিবার পরিবারের কাছে তুলে দেন ইউএনও মো. মামুন খন্দকার। অন্যদিকে, মদনমুরত গ্রামের নিহত আল আমিনের পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ১৫ হাজার টাকা প্রদান করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status