বিশ্বজমিন

ব্যাঙ্গালোরে বাংলাদেশী কথিত অবৈধ অভিবাসীদের অনিশ্চিত ভবিষ্যত

বালা চৌহান

১৩ নভেম্বর ২০১৯, বুধবার, ১২:১৪ অপরাহ্ন

ব্যাঙ্গালোর থেকে অনেক দূরে। ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে এজেন্টচক্র হতদরিদ্র গ্রামবাসীদের ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখায়। এসব গ্রামবাসী ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত একটি জীবনের জন্য তাদের শেষ সম্বলটুকু ব্যয় করে ভারতে যাওয়ার জন্য। পাচার প্রক্রিয়ায় ঘটে তা। এই স্বপ্ন দেখানো মার্চেন্টরা বাংলাদেশের বেকার ও হতদরিদ্র মানুষকে প্রলুব্ধ করে। তাদেরকে ভারতের শহর এলাকাগুলোতে ছুটে যেতে টোপ দেয়। ভারতে নিতে তাদের প্রতিজনের কাছ থেকে আদায় করে ৬০০০ থেকে ৭০০০ রুপি। এমনই একজন বাংলাদেশের শাহনাজ। অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমাদের কোনো কাজ ছিল না। অনাহারে থাকতাম। তাই ভারত আসার জন্য যা কিছু ছিল তার সবটাই বিক্রি করে দিই আমরা। তারপর ওই এজেন্ট আমাদেরকে গাদাগাদি করা একটি বাসে তুলে নিলেন। মধ্যরাতে তা আমাদেরকে সীমান্ত পাড় করে দিল। সেখান থেকে আমাদেরকে একটি ট্রেনে করে নিয়ে যাওয়া হয় ব্যাঙ্গালোরে। পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় অন্য বাংলাদেশীদের সঙ্গে। এসব বাংলাদেশীকে তিনি আগেই সেখানে নিয়ে গিয়েছেন।

শাহনাজ এখন তিন সন্তানের মা। তার বয়স ৩৮ বছর। হোসুর রোডে সরকারের নারী ও শিশু বিষয়ক একটি আশ্রয়শিবিরে ১২ জন নারী ও ৬টি শিশু সহ অবস্থান করছেন। ২৭ শে অক্টোবর পুলিশ হোয়াইটফিল্ড এবং রামমূর্তিনগরের বস্তি এলাকায় ঘেরাও দিয়ে আটক করে অবৈধভাবে বসবাস করা কথিত ৫৮ জন বাংলাদেশীকে। নারী ও ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে রাখা হয় হোসুর রোডে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে। পুরুষদের নিয়ে রাখা হয় সরকারি আরেকটি স্থাপনায়। ৯ বছর ও ১৪ বছর বয়সী চারটি শিশুপুত্রকে নিয়ে রাখা হয় ছেলেদের জন্য নির্মিত আরেকটি আশ্রয়কেন্দ্রে। ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস থেকে আটক এসব অবৈধ অভিবাসীদের চলাচল সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের সহযোগিতায় ভারতের পুলিশ এসব বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠানোর ডকুমেন্ট প্রস্তুত করেছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তাদের ডকুমেন্ট প্রস্তুত। তবে ফেরত পাঠানো একটু বিলম্বিত হচ্ছে। এর কারণ হতে পারে অর্থের সঙ্কট।

সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারী ১৩ জন নারীর সামনে এখন এক আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা। তা তাদের মুখমন্ডলে এক হতাশার ছায়া ফেলেছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী যে, তাকে দেখতে একজন টিনেজারের মতো। তিনি মেঝের ওপর গম্ভীর হয়ে বসে ছিলেন। তারা মাথা ঢাকা। তার দু’বছর বয়সী সন্তান কোনো রকম যতœ ছাড়াই তার কোলের মধ্যে ঘুমিয়ে ছিল। তার স্বামী ফেলে দেয়া জিনিস কুড়িয়ে বেড়াতেন। তিনিও সরকারি আরেকটি আশ্রয়কেন্দ্রে আটক। এখন স্বামী ও ভাইদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় এসব নারী হতাশাগ্রস্ত, আতঙ্কিত ও নার্ভাস হয়ে পড়েছেন।

তাদের একজন রাবেয়া (২৭)। তিনি দু’সন্তানের মা। বলেছেন, আমাদের সঙ্গের পুরুষরা কে কোথায় কেউ জানি না। তাই ভীষণ আতঙ্কিত আমরা। এ এক ভয়ঙ্কর স্থান। এখানে আমরা খাবার ও আশ্রয় পাচ্ছি। কিন্তু কারো মনে হচ্ছে না, আমরা খাবার খাচ্ছি। পুলিশ বলেছে, তারা আমাদেরকে দেশে ফেরত পাঠাবে। তবে কখন ফেরত পাঠাবে সে বিষয়ে কিছু বলে নি। আমাদের ফোন নিয়ে গেছে পুলিশ। আপনি কি তাদেরকে অনুরোধ করবেন আমরা যেন আমাদের স্বামীদের সঙ্গে একবার কথা বলতে পারি।

বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসীদের কাহিনী ক্ষুধায় ক্ষুধায় ভরা। একটি অচেনা দেশে পাচার হয়ে আসতে তারা তাদের শেষ সম্বলটুকু তুলে দেয় দালালের হাতে। তাদের আশা কাঙ্খিত দেশে যেতে পারলে দু’বেলা অন্তত খাবার যোগাড় করতে পারবে। তাদের মাথার ওপর ছাদ হবে। একবার যখন তারা ব্যাঙ্গালোরে পৌঁছে তখন পুরুষরা ফেলে দেয়া জিনিস কুড়িয়ে বেড়ানোর কাজ করেন। নারীরা এপার্টমেন্টে ছোটখাট কাজ পেতে জাতীয়তা সম্পর্কে মিথ্যা বলেন। এ বিষয়ে শাহনাজ বলেন, ব্যাঙ্গালোরে কেউই বাংলাদেশীকে কাজে নিতে চায় না। তাই মুখের আহার যোগাড় করার জন্য আমাদেরকে মিথ্যা বলতে হয়। আমাকে যিনি কাজে নিয়েছিলেন তাকে বলেছি আমি আসামের অধিবাসী। আমি হিন্দি শেখার জন্য হিন্দি ছবি দেখেছি। আমার স্বামী ফেলনা জিনিস কুড়িয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রুপি আয় করতেন। আমার দুটি সন্তানের জন্ম ব্যাঙ্গালোরের বস্তিতে।

শাহনাজের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক যুবতী। তিনি অঝোরে কাঁদছিলেন। বলছিলেন, এক সকালে পুলিশ আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যায়। আমরা আর্তনাদ করছিলাম। পুলিশ ভ্যানে উঠিয়ে নেয়া হলো। আমরা তো ক্রিমিনাল নই। আমরা গরিব মানুষ। নিজের দেশে আমাদের কিছুই নেই।
(ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত প্রতিবেদনের অনুবাদ)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status