শেষের পাতা

নয়া আবিষ্কার

ইশতিয়াক পারভেজ, ইন্দোর (ভারত) থেকে

১২ নভেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:২৪ পূর্বাহ্ন

জয় নিশ্চিত হতেই ভারতের ক্রিকেটাররা উল্লাস করে ছুটতে শুরু করলো। ৪৩ হাজার ধারণ ক্ষমতার নাগপুর স্টেডিয়ামের সমর্থকরাও বিজয় উল্লাসে রাতের নীরবতা ভেঙে খান খান করে দিচ্ছিল। তাদের আনন্দ দেখে কেউ হয়তো ভেবে বসতে পারেন, যেন বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত। রোহিত শর্মার দলের সেই উচ্ছ্বাস থামেনি ড্রেসিংরুমেও। ভেসে আসছিল তাদের উল্লাসধ্বনি আর বাজি ফোটানোর শব্দ। কেক নিয়েও ছুটতে দেখা গেল অনেককে। ঠিক তখন পাশেই বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে সুনসান নীরবতা। অথচ উল্টো চিত্রই হতে পারতো। ৭ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ২৭ বছর বয়সী দীপক চাহার তখন হিরো। তাকে ঘিরেই ভারতের সাবেক তারকাদের গল্প রচনা শুরু হয়ে গেছে।

কিন্তু  তার জায়গায় থাকতে পারতেন টাইগারদের ২০ বছর বয়সী তরুণ ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ১২ রানে ২ উইকেট পড়া দলকে টেনেছেন দারুণভাবে। ৪৮ বলে ১০ চার ও দুই ছক্কায় সাজিয়েছেন ৮১ রানের দারুণ এক ইনিংস। মোহাম্মদ মিঠুনকে সঙ্গে নিয়ে ৯৮ রানের জুটিতে দলও দেখছিল জয়ের সম্ভাবনা। দলীয় ১২৬ রানে তিনি আউট হন। তখনো হাতে ৫ উইকেট, কিন্তু কে জানতো সেখান থেকে ভেঙে যাবে ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন! তাই ছোট নাঈমের আক্ষেপটাও যেন ভীষণ বড়। গতকালই দেশের পথ ধরেন তিনি। তার আগে শুনিয়ে গেছেন তার গল্প। তিনি বলেন, ‘আক্ষেপতো অনেক বেশি। জিততে পারলে, সিরিজটা আমাদের হলে অনেক ভালো লাগতো। জিততে পারি নাই এখানে খারাপ লাগছে।’

লড়াকু নাঈমের বিদায়ের পর তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে দল। ক্রিজে মুশফিকুর রহীম, অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদরাও তাকে সঙ্গ দিতে ব্যর্থ । এক সময় জয়ের জন্য ৪৩ বলে দরকার ছিল ৬৫ রানের। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যা খুবই সম্ভব। কিন্তু সেখান থেকেই নেমে আসে দারুণ হতাশা। নাঈমের সঙ্গে জুটিতে ২৭ রানের অবদান রাখা মোহাম্মদ মিঠুন আউট হতেই শুরু হয় আসা-যাওয়ার মিছিল। দলের আর কোনো ব্যাটসম্যানই পৌঁছতে পারেননি দুই অঙ্কে। দলীয় মাত্র ১২ রানে দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস ও সৌম্য সরকার ফেরার পর বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যান টাইগারদের মাত্র ৩ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা তরুণ ব্যাটসম্যান নাঈম শেখ। তার সাবলীল ব্যাটিংয়ে ভাঁজ পড়তে শুরু করে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মার কপালে। কিন্তু তাকে আউট করেই চিন্তা দূর হওয়ার কথা ছিল না ভারতীয় শিবিরে। কারণ মাহমুদুল্লাহরা যে আছেন। কিন্তু জোড়ায় জোড়ায় আউট হয়ে সব ধুলিস্যাত করেন পরের ব্যাটসম্যানরা । তবে হারের জন্য অন্যদের নয় নিজেকেই দায়ী করছেন নাঈম। তিনি বলেন, ‘আমাদের আরেকটা জুটি হলে হয়তো আমরা জিততে পারতাম। অ্যাটাকিং না যেভাবে টার্গেট ছিল সেভাবে চেষ্টা করছি, অ্যাটাকিংয়ের কিছু নাই ওভাবে। যেভাবে খেলা দরকার সেভাবে চেষ্টা করছি।’

নাঈমের এমন ব্যাটিংয়ের সময় গোটা স্টেডিয়ামেই নেমে এসেছিল নীরবতা। বোঝাই যাচ্ছিল না প্রায় ৪০ হাজার দর্শক আছে নাগপুর বিদর্ভ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ম্যাচ শেষে দলের জয়ের পর ভারতের সাবেক গ্রেট ক্রিকেটার হরভজন সিংতো বলেই বসলেন, ‘সাকিব-তামিমরা নেই তা বুঝতেই দেয়নি তরুণ টাইগাররা। দারুণ খেলেছে বাংলাদেশ।’ তার ইঙ্গিত ছিল নাঈমের দিকেই। হরভজনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের কথাটি জানাতে ভুল করেননি নাঈম। তিনি বলেন, ‘টিম মেটরা অনেকে অনেক কিছু বলছে, ওদের কিছু প্লেয়ার ছিল তারাও অভিনন্দন জানিয়েছে, হরভজন সিং ছিলেন তিনি বলেছেন, আর দুই ওভার থাকলে হয়তো ম্যাচ জিততে পারতাম। ভালো খেলেছো, আরেকটা জুটি হলে হয়ে যেত।’

এক সময় মনে হচ্ছিল সেঞ্চুরি পেয়ে যাবেন নাঈম শেখ। কিন্তু সেই মুহূর্তে নিজের সেঞ্চুরির চেয়ে দলের রানের গতি বাড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন এই তরুণ। তার তখন একটাই চিন্তা ছিল দলের জয়। সেই সময়ের ভাবনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় পুরো ইনিংসে ওটা ওদের সেরা বল ছিল। আর সেঞ্চুরির জন্য খেলি নাই, দল জেতানোর জন্য খেলছিলাম। এই জায়গায় সফল হতে পারিনি, এটা হয়তো খারাপ লাগছে। আমাদের দুজনের কথা হচ্ছিল শেষ করলে আমাদের দুজনকেই শেষ করতে হবে। পিছনের দিকে যেন আমরা না যাই, আমরাই যেন শেষ করে আসতে পারি।’ আর নিজের চেয়ে দল জিতলেই যে তিনি খুশি হন তাও বলেছেন অকপটে। তিনি বলেন, ‘অভিষেক বলতে প্রথম ম্যাচেই যখন জিতেছি ভালো লেগেছে। জেতার কারণে ভালো লেগেছে। বেশি রান, সর্বোচ্চ রান এসব আমি চিন্তাই করি না। ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলার চেষ্টা করি যা হয় ম্যাচ শেষে দেখা যাবে।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status