এক্সক্লুসিভ

ভুয়া জন্মসনদে খাদিজার বিয়ে ফেঁসে গেছেন চেয়ারম্যান

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে

৯ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, ৭:১৮ পূর্বাহ্ন

অপহরণ মামলা সামাল দিতে নকল জন্মসনদে বিয়ে দিয়ে ফেঁসে গেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া (৪২)। এ ছাড়াও ওই ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সুব্রত রায় (৩০) ও অপহৃতের নানা জলফু মীরকে (৫৫) এই অপরাধের জন্য দায়ী করা হয়েছে। আদালত তাদের ৩ জনকেই সমন দিয়েছেন। এর আগে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আদালতে এ বিষয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।

প্রতিবেদন এবং মামলার এজাহার থেকে জানা যায়- বিজয়নগর উপজেলার ছতুরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী খাদিজা আক্তারকে অপহরণ করা হয় গত ৭ই মে। বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের পর খাদিজা ছতুরপুরে তার নানার বাড়িতে থাকতো। এ ঘটনায় তার পিতা আখাউড়ার নূরপুর গ্রামের মো. মোর্শেদুর রহমান ছতুরপুর গ্রামের আলাই মিয়ার ছেলে রবিউল মিয়া (২২) এবং অপহৃতের নানা জলফু মীর (৫৫) এবং তার স্ত্রী আয়েশা বেগমসহ (৪৫) ৫ জনকে আসামি করে ১২ই মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে একটি মামলা (১৬৬/২০১৯) করেন। তাদের মধ্যে লিটন মিয়া ও আয়েশা বেগম জেলে গেলে আয়েশার স্বামী জলফু মীর ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ভূইয়া ও সচিব সুব্রত রায়ের সহযোগিতায় ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করেন। এরপর ওই জন্মসনদ দিয়ে রবিউল ও খাদিজার নিকাহনামা তৈরি করা হয়। যা দেখিয়ে ওই দু’জনের জামিন নেয়া হয়। বিষয়টি জানার পর মো. মোর্শেদুর রহমান ৭ই আগস্ট জলফু মীরকে প্রধান আসামি এবং ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া ও সচিব সুব্রত রায়কে ৭ ও ১২ নম্বর আসামি করে মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরেকটি মামলা (সিআর ২৪২/২০১৯) করেন। আদালত এ মামলাটি পিবিআইকে তদন্ত করার নির্দেশ দেয়। তদন্ত শেষে গত ২৫শে আগস্ট আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন পিবিআই’র ইন্সপেক্টর মো. আকতারুজ্জামান সরকার।

তদন্ত রিপোর্টে বলা হয় খাদিজার নানা জলফু মীরের কাছ থেকে চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া মূল জন্মসনদের একটি ফটোকপি সংগ্রহ করেন। তাতে উল্লিখিত জন্ম তারিখ: ১৮/০৩/২০০৪-এর মধ্যে সালের ৪ অঙ্কটি কলম দিয়ে শূন্য বানিয়ে ২০০০ করা হয়। এতে খাদিজার বয়স ৪ বছর বেড়ে যায়। খাদিজা ও রবিউলের বিয়েতে যাতে কোনো সমস্যা না হয় এবং বাল্যবিবাহ আইনের আওতায় পড়তে না হয় সে কারণে জালিয়াতি করে বয়স বাড়িয়ে দেন চেয়ারম্যান। এ ছাড়া খাদিজা ও তার পিতা-মাতার নামেও কিছুটা পরিবর্তন করা হয়। এরপর তার নির্দেশনামতো  জন্মসনদ তৈরি হয়। খাদিজা আক্তারের মূল জন্মসনদের নিবন্ধন নম্বর- ২০০৪১২১০৭৯৬১০১৮৩২, নিবন্ধন এবং সনদ ইস্যুর তারিখ-২৩/০২/২০১৬ইং। এই সনদে মোছা. খাদিজা আক্তার, মাতার নাম জাহারা খাতুন, পিতা:মো: মোর্শেদুর রহমান, জন্ম তারিখ-১৮/৩/২০০৪ইং উল্লেখ রয়েছে। অন্যদিকে ভুয়া জন্মসনদের নিবন্ধন নম্বর-২০০০১২১০৭৯৬১০৬০৮৫, নিবন্ধন এবং সনদ ইস্যুর তারিখ-২৫শে জুন, ২০১৯ইং, জন্ম তারিখ ১৮ই মার্চ, ২০০০ইং এবং মাতার নাম জাহানারা খাতুন ও পিতার নাম মোর্শেদুর রহমান উল্লেখ রয়েছে। এই ভুয়া জন্মসনদ দিয়ে করা নিকাহনামা দেখিয়ে জেলে থাকা ১ ও ৪ নং আসামি অর্থাৎ রবিউল মিয়া (২০) ও আয়েশা বেগম (৪৫)-এর জামিন নেয়া হয়েছে বলে তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়। মামলার আসামিরা সবাই চেয়ারম্যানের আত্মীয়। সে কারণে তাদের রক্ষায় চেয়ারম্যান এই পদক্ষেপ নেন। এই জন্মসনদ জুন মাসে ইস্যু করা হলেও পরিষদের জন্ম নিবন্ধন ফি আদায়ের রেজিস্টারে এর উল্লেখ করা হয়নি। মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মাসুদ আহমদ জানান- আদালত তদন্ত রিপোর্টটি গ্রহণ করে আসামিদের সমন পাঠিয়েছে। আগামী ১১ই নভেম্বর তাদের আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। ১৯শে সেপ্টেম্বর আদালত এই সমন দেয়। এদিকে মামলার বাদী মো. মোর্শেদুর রহমান অভিযোগ করেন মামলা উঠিয়ে না নিলে তাকে হত্যা করা হবে বলে প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়া হচ্ছে। মামলার আসামিদের হুমকির কারণে ছতুরপুর গ্রামে থাকা তার ডেকোরেটর গত ৩ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। ডেকোরেটরের মালামাল লুট করে নেয়ার হুমকিও দেয়া হয়েছে।

এবিষয়ে মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে গত ২২শে সেপ্টেম্বর পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। এর আগে মোর্শেদুর রহমান তাকে হুমকি দেয়ায় জুন মাসে আদালতে ফৌজাদারী কার্যবিধি আইনের ১০৭/১১৪/১১৭(গ) ধারায় মামলা করেন। চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে এটি ছাড়াও আরো ৩টি মামলা রয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status