বাংলারজমিন

গণপূর্তের প্রকৌশলীর দুর্নীতি তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি

আমিনুল ইসলাম লিটন, ঝিনাইদহ থেকে

৮ নভেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ৮:০৯ পূর্বাহ্ন

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাঈখের দুর্নীতি তদন্তে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। গত ২৪শে অক্টোবর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অধিশাখা-১ এর উপ-সচিব মোসা. সুরাইয়া বেগম এক অফিস আদেশে উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটিকে কাজ শুরু করার নির্দেশনা দেন। মন্ত্রণালয়ের ১৫.০০.০০০০.০১৩. ২৭.০০১.১০.১০৯০/১(৪) নং স্মারকে চিঠিতে বলা হয়েছে ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আনীত অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তপূর্বক ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। শুক্রবার (৮ই নভেম্বর) এর মধ্যে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত তদন্ত কমিটির কোনো সদস্য তদন্তের জন্য ঝিনাইদহ গণপূর্ত অফিসে আসেন নাই। এই তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-২ এর অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ইয়াকুব আলী পাটওয়ারী। সদস্য সচিব করা হয়েছে সিনিয়র সহকারী সচিব তারিক হাসান। এ ছাড়া তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মো. মঈনুল ইসলাম। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নন্দিতা রানী সাহা গত ২রা অক্টোবর ‘ভুয়া কাজ ও বিল ভাউচারে লোপাট ১০ কোটি টাকার বিষয়ে তদন্ত প্রসঙ্গে’ শিরোনামে তার দপ্তরের ২৫.৩৬.০০০০.২১৩.২৭৫৫৯. ১৯.১০৮৭ নং স্মারকে একটি চিঠি ইস্যু করেন। তদন্ত পূর্বক ৩ কর্মদিবসের মধ্যে সুস্পষ্ট মতামত প্রেরণ করার জন্য তদন্ত দলকে নির্দেশ দেন। গত ৭ই অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যশোর আঞ্চলিক অফিসের উপ-পরিচালক নাজমুস সায়াদাত ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগের ১০ কোটি টাকা লোপাটের বিষয়ে খোঁজখবর নেন। ঝিনাইদহে অবস্থানকালে তিনি গণপূর্ত অফিসের ঠিকাদারি কাজের নথি, বিল, ভাউচার দেখেন এবং নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাঈখকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ওই তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত রিপোর্টে কর্তৃপক্ষের নিকট কি তদন্ত দাখিল করেছিলেন তা আজও জানা যায়নি।

উল্লেখ্য ঝিনাইদহ গনপুর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাঈখ কাজ না করেই কোটি কোটি টাকার বিল উত্তোলন করেছেন বলে বিভিন্ন পত্রিকা ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলে খবর প্রচার হয়। দুর্নীতির খবর ফাঁস হয়ে পড়লে জুনের আগে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে বিল তুলে নেয়া প্রকল্পগুলো তড়িঘড়ি করে আবারও সম্পন্ন করেন। ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়া ডরমেটরি ভবন, নন হেজেটেড ডরমেটরি ভবন, জেলা জজের বাসা, সাবডিভিশন অফিস ও গণপূর্তের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর বাসাসহ বিভিন্ন অফিস মেরামত ও রং করেন। অথচ এই সব কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে দেখিয়ে জুনের আগেই ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বিল তুলে নিয়েছিলেন তিনি। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগে গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ই-জিপি টেন্ডারের মাধ্যমে দরপত্র আহবান করা হয়। কিন্তু বিধি ভঙ্গ করে মেন্যুয়ালি নোটিফিকেশন অফ এওয়ার্ড (নোয়া) দেয়া হয়। যা পিপি’র বিধি বহির্ভূত কাজ। প্রশ্ন উঠেছে ই-জিপি টেন্ডার আহ্বান করলে একজন ঠিকাদার অর্ধশত কাজ কি ভাবে পায় ? এ ভাবেই তিনি ২/৩টি লাইসেন্সের বিপরীতে ছোট বড় শত শত কাজ পাইয়ে দিয়েছেন, এর মধ্যে কিছু  কাজ না করে আবার  কিছু কাজ আংশিক করে ৯ কোটি টাকারও বেশি টাকা লোপাট করেছেন। তার এই সব দুর্নীতির মূল সহায়ক হিসাবে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন কার্র্যসহকারি প্রকৌশলী  ফিরোজ আহম্মেদ । সব কাজ পরিচালনা করতেন এবং ভুয়া প্রত্যয়ন পত্র বানিয়ে দিয়ে কাজের সমাপ্ত দেখাতেন। এভাবেই দুর্নীতি করে  ফিরোজ আহম্মেদ ও কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।  এত দুর্নীতির পরেও নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাঈখের খুটোর জোর কোথই যে তিনি এখনো পূর্বের মতোই দাপটের সঙ্গে অফিস পরিচালনা করে যাচ্ছেন ? এ প্রশ্ন এখন ঝিনাইদহের সকল সাধারণ ঠিকাদারদের। অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাঈখ বলেছেন, সাংবাদিকরা যে যাই লিখুক তাতে আমার কিছুই হবে না। আর যত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটিই আসুক না কেন তারা আমার বিরুদ্ধে কোনো কিছুই লিখবে না। তবে এই অফিসের কর্মকর্তা  ও কর্মচারী যারা আমার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কাছে বিভিন্ন তথ্য দিচ্ছে আমি তাদের চাকরির বারোটা বাজিয়েই  ছাড়বো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status