বিশ্বজমিন

প্রিন্স অব কলকাতা থেকে ভারতীয় ক্রিকেটের রাজা

মানবজমিন ডেস্ক

২৩ অক্টোবর ২০১৯, বুধবার, ১:১০ পূর্বাহ্ন

তিনি সৌরভ গাঙ্গুলি। তাকে বলা হয় প্রিন্স অব কলকাতা। তিনি ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক। অমায়িক ব্যবহার আর খেলোয়াড়িসুলভ মনোভাব নিয়ে তিনি জিতে নিয়েছেন কোটি কোটি মানুষের ভালবাসা। এখন তাকে বলা হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটের রাজা। কারণ, তিনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন আজ বুধবার। বোর্ডের কার্যকরী সভাপতি সিকে খান্নার হাত থেকে সেই দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। এ খবর দিয়ে অনলাইন এনডিটিভি লিখেছে, এক সময় সৌরভ পরিচিত ছিলেন প্রিন্স অব কলকাতা হিসেবে। সেখান থেকে ভারতীয় ক্রিকেট দলের দাদা। আর এবার তিনি তার এই যাত্রা সম্পূর্ণ করলেন ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়ে। একটা যাত্রা হয়তো এখানেই শেষ হলো। সৌরভ গাঙ্গুলি আর ভারতীয় ক্রিকেটের সম্পর্ক সারাজীবনের। তাই সেটা শেষ হওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। কিন্তু ক্রিকেট জীবনের একটা সার্কেল সম্পূর্ণ করলেন তিনি। সৌরভ ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন কঠিন সময়ে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে প্রশাসনে যখন এলেন তখন ভারতীয় ক্রিকেট দলের সোনার দৌড় চলছে। যদিও প্রশাসনের বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত ছিল বোর্ড। তাই কাজটা এবারও তার জন্য খুব সহজ নয়।
সৌরভ প্রশাসক হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসেবে। তিন বছর সেই পদের পর তিনি ২০১৪তে যুগ্ম সম্পাদক হন। ২০১৫তে তিনি সিএবির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। গত সেপ্টেম্বরে তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য আবার বাংলার ক্রিকেটের মসনদে বসেন।
সৌরভের একদিনের ক্রিকেটে (ওডিআই) অভিষেক হয়েছিল ১৯৯২-এ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। যখন তিনি মাত্র তিন রানই করতে পেরেছিলেন। তার পরই বাদ পড়েন দল থেকে। প্রশ্ন উঠেছিল তার ব্যবহার নিয়েও। কিন্তু তিনি তো হাল ছেড়ে দেওয়ার মানুষ ছিলেন না। তাই লড়াই চলতেই থাকে। রঞ্জি ট্রফি খেলে আবার নিজেকে প্রমাণ করার লড়াইয়ে নামেন এবং সফল হন। ১৯৯৬-এ আবার জাতীয় দলে ডাক পান তিনি। কিন্তু সময়টা ১৯৯২-এর থেকে আলাদা ছিল। চার বছরে নিজেকে অনেকটাই পরিণত করে ফেলেছিলেন সৌরভ।
টেস্ট অভিষেকেই সবাইকে চমকে দুরন্ত সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। লর্ডসের মাটিতে তার ১৩১ রানের ইনিংস অভিষেক হওয়া কোনও প্লেয়ারের সর্বোচ্চ রান। পরের ম্যাচেই ট্রেন্ট ব্রিজে আবারও সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। বিশ্ব ক্রিকেট তিনিই তৃতীয়, যিনি অভিষেক সিরিজের শুরুতে পর পর সেঞ্চুরি করেন।
২০০০-এ ভারতীয় ক্রিকেট ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যায়। ম্যাচ গড়াপেটায় জর্জরিত হয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় ভারতীয় ক্রিকেট দল। ওই কঠিন সময়ের চাপ নিতে না পেরে ভারতের ব্যাটিং গ্রেট শচিন টেন্ডুলকর দায়িত্ব ছেড়ে দেন। আর সেই সময়ই একমাত্র যিনি সামনে থেকে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন তিনি সৌরভ গাঙ্গুলি। ভারতীয় সিনিয়র ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব ওঠে তার কাঁধে। সেই অন্ধকার সময় থেকে ভারতীয় দলকে আলোয় ফিরিয়ে আনেন সৌরভ। ভারতীয় দলকে চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে সেখান সৌরভ। তার নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ার টানা ১৬টি টেস্ট ম্যাচ জয়ের রেকর্ড ভেঙে যায় ২০০১-এ।
ইডেন গার্ডেনের সেই ম্যাচ আজও বিশ্ব ক্রিকেটের আলোচ্য বিষয় হয়ে রয়ে গিয়েছে। স্টিভ ওয়ার অস্ট্রেলিয়া দলের সামনে ফলো-অনে পড়েও কী ভাবে ম্যাচ জিতে বেরিয়ে যাওয়া যায় সেটা সেদিন দেখিয়েছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি অ্যান্ড ব্রিগেড।
তার হাত ধরে ভারতীয় ক্রিকেটে রাজত্ব শুরু করেন এক ঝাঁক তরতাজা যুবক। যুবরাজ সিং, মহম্মদ কাইফের মতো প্লেয়াররা সমানে সমানে লড়াই দেওয়ার মানসিকতা খুঁজে পান। ২০০২-এর ন্যাট ওয়েস্ট সিরিজে ভারতের জয়ের থেকেও বেশি বিখ্যাত হয়ে যায় লর্ডসের ব্যালকনিতে সৌরভের জার্সি খুলে ওড়ানোর সেই দৃশ্য। এই যুবরাজ আর কাইফের অদম্য লড়াইয়ে সেদিন ট্রফি জিতেছিল ভারত। আর লড়াইটা পুরো দলের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন একমাত্র সৌরভ গাঙ্গুলি।
১৯৮৩-র পর সৌরভের হাত ধরেই আবার ২০০৩-এ বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছায় ভারত। যদিও ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যেতে হয়। সৌরভ সেই বিশ্বকাপে ৪৬৫ রান করে ৫৮.১২ গড় নিয়ে শেষ করেন।

সৌরভ ভারতীয় দলকে ৪৯টি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জিতেছেন ২১টি টেস্ট। ১৪৬টি একদিনের ম্যাচের মধ্যে ৭৬টি জিতেছেন তিনি অধিনায়ক হিসেবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status