বাংলারজমিন

নিলামের শর্ত না মেনেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মহাসড়কে গাছ কাটছেন যুবলীগ নেতা

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে

১০ অক্টোবর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:২৫ পূর্বাহ্ন

সরকারের ঘরে টাকা জমা না করেই কেটে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকার গাছ। এক লটের টাকা জমা করে কয়েক লটের গাছ কাটা হচ্ছে। এই গাছ বিক্রি করে আবার এক-দু’ লটের টাকা জমা দেয়া হচ্ছে। যে লটে মূল্যবান গাছ আছে সেগুলোই কাটা হচ্ছে আগে। অথচ কোন লটের গাছ কাটার আগেই এর মূল্য পরিশোধ করার নিয়ম। এরপর ওয়ার্ক অর্ডার নিয়ে গাছ কাটার কথা। কিন্তু তা না করে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্বরোড থেকে আখাউড়ার তন্তর পর্যন্ত একজন নিলাম গ্রহীতা তার ইচ্ছেমতো গাছ কেটে চলেছেন বলে অভিযোগ মিলেছে। সেই গাছ বিক্রি করে আবার কোনো একটি লটের টাকা জমা করছেন সরকারের হিসেবে। অর্থাৎ কৈ এর তেলেই কৈ ভাজছেন ওই ঠিকাদার। নিজের পকেট থেকে কোনো টাকা দিতে হচ্ছে না তাকে। জানা গেছে- সড়কের ওই অংশের সম্প্রসারণ কাজের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী বৃক্ষপালনবিদের কার্যালয় এ বছরের ১৬ই মে বর্তমানে মহাসড়কের পাশে থাকা গাছ অপসারণে নিলাম দরপত্র আহ্বান করে। মোট ২৩টি লটে রেইনট্রি, মেহগনি, তুলা, জাম, কড়ুই, সেগুন ইত্যাদি জাতের ১৪৮টি গাছ নিলামে ক্রয় করে ৮টি প্রতিষ্ঠান। যার মূল্য ৫৭ লাখ ৮০ হাজার ৩৮১ টাকা। এরমধ্যে ১ থেকে ৩নং লটের ২০টি গাছ নিলামে ক্রয় করেন কামরুল হোসেন ইকবাল। ৫ ৭ ও ৮ নম্বর লটে থাকা ১৩টি গাছের নিলাম পান মো. আলতাফ হোসেন। ৪,৬ ও ১০ নম্বর লটের ২৫টি গাছের নিলাম পায় মেসার্স রাফি এন্টারপ্রাইজ, ৯ নম্বর লটের ৯টি গাছ ক্রয়ের নিলাম পায় মেসার্স বঙ্গবন্ধু এন্ড সন্স, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর লটের ২৮টি গাছের নিলাম পায় মেসার্স দিদার এন্টারপ্রাইজ, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর লটের ২৩টি গাছের নিলাম পায় মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজ, ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর লটের ১৫টি গাছের নিলাম পায় মো. নাসির উদ্দিন, ২২ ও ২৩ নম্বর লটের ১৫টি গাছের নিলাম পায় মেসার্স টি ট্রেড কানেকশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তবে মেসার্স বঙ্গবন্ধু অ্যান্ড সন্স এর স্বত্বাধিকারী রেজাউল হক নিলামের সব গাছ একাই কাটার দায়িত্ব নিয়েছেন। বাকি ৭টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ ব্যাপারে তার চুক্তি হয় স্ট্যাম্পে। অভিযোগ উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরতলির নাটাই ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা রেজাউল নিলামের শর্ত ভঙ্গ করে ইচ্ছেমতো গাছ কাটছেন। এ পর্যন্ত ৩টি লটের টাকা সরকারি হিসেবে জমা হলেও রেজাউল তার সুবিধামতো অন্য লটের গাছও কেটে বিক্রি করছেন। ইতিমধ্যে সাড়ে ৪টি লটের গাছ কেটে ফেলেছেন রেজাউল। টাকা জমা না করেই ৫ নম্বর লটের গাছ কেটে নেয়া হয়েছে। ১৯ নম্বর লটে থাকা দামি গাছ কেটেও বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। ফলে এসব সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। বৃক্ষপালনবিদ কার্যালয় ঢাকার মিরপুরে হওয়ায় এবং এখানে তা দেখার কোনো লোক না থাকায় চলছে গাছ লুটের মহোৎসব। তবে রেজাউল হক দাবি করেন যে লটের গাছ কাটছেন সে লটের গাছের দাম পরিশোধ করেই কাটছেন। আরো জানান, ঢাকাইয়া যারা নিলাম পেয়েছিল তাদের কাছ থেকে তিনি নিলামের সব গাছ কিনে নিয়েছেন। এজন্য ৯ লাখ টাকা দিয়েছেন তাদেরকে। তার রাজনৈতিক পদ জানতে চাইলে বলেন যেহেতু ঠিকাদারি করি এতে এগুলো (রাজনৈতিক পরিচয়) চলে না। আমার পোস্টও আছে। বঙ্গবন্ধু অ্যান্ড সন্স নামের এই প্রতিষ্ঠান ৪ বছর আগে করেন রেজাউল। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী বৃক্ষপালনবিদ মীর মুকুট মো. আবু সাঈদ জানান, যে লটের টাকা জমা হবে সে লটের গাছই কাটতে পারবে। এ পর্যন্ত ৩টি লটের টাকা জমা হয়েছে। এখন ৬ নম্বর লটের গাছ কাটা হচ্ছে বলে তিনি জানান। তাদেরকে ম্যানেজ করে গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status