প্রথম পাতা

ক্যাসিনোতে অভিযান

সেই যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

স্টাফ রিপোর্টার

১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:০৫ পূর্বাহ্ন

ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন বাটালিয়ন (র‌্যাব)। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে  গুলশানের বাসা থেকে তাকে আটক করেছে র‌্যাবের একটি টিম। অন্যদিকে ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ১৪২ জন নারী পুরুষকে আটক করেছে র‌্যাবের আরেকটি টিম। ওই অভিযানের নেতৃত্ব দেন র‌্যাব সদরদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। ওই ক্লাবের সভাপতি খালেদ মাহমুদ। ক্লাবের আড়ালে তিনি সেখানে জুয়া ও মদের আসর বসাতেন। সেখানে অভিযান চালিয়ে বিপুল জুয়া সামগ্রি, মাদক, ও নগদ ২৪ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে ক্লাবে অভিযান চালানোর পাশপাশি খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ তাকে আটক করা হয়। রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে বস্তিতে বেড়ে উঠা খালেদ যুবলীগের নেতা হওয়ার পর চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, জুয়া ও মদের আসর বসিয়ে অর্থ আয় করতেন। নিজে দেহরক্ষীসহ প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরতেন। তার বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন ও দলীয় সূত্রে তথ্য পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যও নির্দেশ দেন তিনি। খালেদসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আরেক নেতার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কঠোর বার্তার পর যুবলীগের পক্ষ থেকে অপরাধ তদন্তে ট্রাইব্যুনাল গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। তৎপরতা বাড়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। একটি সূত্র জানিয়েছে, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের এমন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শিগগির সাড়াশি অভিযান চালানো হবে। যাদের বিরুদ্ধে সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ আছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের পাকড়াও করবে। র‌্যাব জানিয়েছে, গতকাল বিকাল চারটা থেকে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারের জন্য তার গুলশান ২ নম্বরের ৫৯ নম্বর সড়কের বাসাটি ঘিরে রাখা হয়। বাড়িটির তিন তলার এ-৩ ফ্ল্যাটেই দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি থাকেন। গতকাল বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে তিনি বাসায় প্রবেশ করেন। রাত সাড়ে আটটার পর একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে খালেদকে নিয়ে যান র‌্যাব সদস্যরা। র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয় অবৈধভাবে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগ খালেদকে গেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তার বাসা থেকে একটি অবৈধ অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করার কারণে বাসায় থাকা আরও দুটি অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া নগদ ১০ লাখ টাকা ও কিছু ডলার উদ্ধার করা হয়েছে ওই বাসা থেকে । স্থানীয়রা জানিয়েছে, প্রায় চার বছর ধরে খালেদ ওই বাসায় থাকেন।

খালেদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ: যুবলীগের এই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে মতিঝিল, শাহজাহানপুর, রামপুরা, খিলগাঁও, মুগদা এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজিতে নেতৃত্ব দেন তিনি। এসব এলাকার সমস্ত টেন্ডার তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), রেলভবন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ওয়াসার বিভিন্ন জোনের টেন্ডারে তার হস্তক্ষেপ থাকে। খিলগাঁও, শাহজাহানপুর, গুলিস্তান এলাকায় যত লেগুনা চলে প্রতিটি লেগুনা থেকে তিনি চাঁদা নেন। কোরবানির ঈদে শাহজাহানপুর, মেরাদিয়া ও কমলাপুর গরুরহাটের নিয়ন্ত্রণ থাকে তার কাছে। সেখান থেকে বড় অংকের টাকা নেন। এছাড়া মতিঝিল, ফকিরাপুল ও আশেপাশের এলাকায় স্থায়ী অস্থায়ী অন্তত ১৭টি ক্যাসিনো তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। আর প্রতিটি ক্যাসিনো থেকে দিনে ১ লাখ টাকা করে নেন। খিলগাঁও রেলগেটে অবৈধভাবে একটি মাছের বাজার বসিয়ে সেখান থেকে চাঁদা তুলেন। খিলগাঁও কাঁচাবাজারে দীর্ঘদিন ধরে সভাপতিত্ব করছেন খালেদ। সেখান থেকেও চাঁদা নেন। রেলওয়ের জমি দখল করে ভবন নির্মান ও ফুটপাতের হকারদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status