অনলাইন

‘একতরফা অনেককেই ভালবেসেছিলাম’

কাজল ঘোষ

১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার, ১:৪৬ পূর্বাহ্ন

ছবিঃজীবন আহমেদ

অনেক আগেই দেশ হারিয়ে গেছে। আমি এ দেশের লোক নই। এটা ভাবতে আমার কষ্ট হয়। আমার আইডেন্টিটি হারিয়ে গেছে। কিন্তু টানটা রয়ে গেছে। রাজনীতির কারণে যে দেশভাগ তার ফলে আজও এই কষ্ট বইতে হচ্ছে। এ দেশে যতদিন ছিলাম, তার চেয়ে অনেক বেশি আছি সেই দেশে। দ্যাটস নট এ হোম, জাস্ট হোম। এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলছিলেন দু বাংলার জনপ্রিয় লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। শরতের সকালে এক চিলতে রোদ মাথায় নিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রশ্বস্ত লাল দালানের উঁচুতলায় বসে কথাগুলো বলছিলেন তিনি।

ছেলেবেলায় ময়মনসিংহের সময়কাল মনে করে খ্যাতনামা এই লেখক বলেন, এটা আমার জন্মভূমি। দেশভাগের বাস্তবতায় আজ ওপাড়ে। তবুও পরিযায়ী পাখির মতো আমি এখানে ছুটে আসি।

নিজের লেখক সত্ত্বা নিয়ে নিজেরই প্রশ্ন। শীর্ষেন্দু মনে করেন, তিনি বাইচান্স লেখক। বলেন, লেখক হব এমন চিন্তা মাথায় নিয়ে লিখেছি বিষয়টি তা নয়। আমি আসলে বাই চান্স লেখক। প্রথাগত লেখক সংজ্ঞার মধ্যে আমি পরি না।
ছেলেবেলায় দুরন্ত ছিলাম। এতটাই দুরন্ত ছিলাম যে আমার ডাক নাম হয়ে গেল দুষ্টুর সমার্থক। পাড়ার সকলে রুনু নামে ডাকত। পাড়ায় কোন দুষ্টু ছেলে মেয়ে দেখলে বলত এটা রুনুর মতো হয়েছে। খেলাধুলা ছিল আমার পছন্দের বিষয়। আর বই পড়ার অভ্যেস ছিল। হাতের কাছে যা পেতাম তাই পড়তাম।

জীবনে প্রেম করতে পারেন নি শীর্ষেন্দু মুখোপাধায়। বলেন, আমার কোনও প্রেমিক ছিল না। আমার প্রেমগুলো ছিল একতরফা। একতরফাভাবে আমি অনেককেই ভালবেসেছিলাম। পরে একজনই আমাকে ভালবেসেছিল। যাকে পেয়ে যাওয়ায় আর কাউকে খুঁজতে হয়নি। এখনও পর্যন্ত সেই আছে আমার সঙ্গে।  

সাম্প্রতি সময়ে ভারত সরকারের করা এনআরসি নিয়ে তিনি বলেন, এনআরসির নামে আসামে যা হচ্ছে তা বিপজ্জনক। সরকার যেভাবে তাড়াতে চাইছে সেটা সম্ভব নয়। এতগুলো লোককে এভাবে তাড়ানো সম্ভব এটা মনে হয় না। পশ্চিমবঙ্গের চিত্র ভিন্ন। সেখানে ব্যাবসায়িক, চাকরিসহ নানা কারণে বহু ধরণের লোকের বাস। তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এর বিরুদ্ধে।

বাংলা ভাষা কি সঙ্কটে আছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বাংলা হচ্ছে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা। ভাবুনতো যদি এর সঙ্গে বাংলাদেশ যুক্ত হতো; বাংলাদেশ যদি আলাদা রাষ্ট্র না হতো তাহলে বাংলা হতো পুরো ভারতের বৃহত্তম রাষ্ট্রভাষা। কাজেই সব মিলিয়ে যে পরিস্থিতি তাতে বাংলা ভাষা কোন ধরণের হুমকিতে আছে আমার কাছে তা কখনই মনে হয় না।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অনেক লেখায় চোরদের প্রতি মমতার প্রকাশ রয়েছে। আবার ভুতদেরও তিনি তাঁর লেখায় এঁকেছেন অনেক মানবিকভাবে। বিজ্ঞানমনষ্কতার এ যুগে এগুলো একধরণের রহস্যের জন্ম দেয়। শীর্ষেন্দুর সোজা সাপটা জবাব, চোরদের নিয়ে আমি নির্মম হতে পারি না। মনে হয়, চোর আমার বাসায় এলে তাকে কাছে বসিয়ে দু চারটি কথা বলি। চোর ডাকাত এই চরিত্রগুলো নানাভাবে আমাকে ভাবায়। ভুত বিষয়ক অনেক লেখা পড়ে বাচ্চারা আমাকে ফোন করে বলে, যে সে আর ভুতকে ভয় পাচ্ছে না। তখন আমার ভাল লাগে। মনে হয়, যাক লেখাটি মনে ধরেছে।

আশির্ধ্বো এই লেখকের জীবনবোধ, সাহিত্য চর্চা, লেখক হওয়া, নানা বিশ্বাসে বন্দি জীবন নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। পাঠকের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন বাতিঘরে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status