বিশ্বজমিন

মার্কিন প্রশাসনে চিঠি

কাশ্মীরে জোরপূর্বক গুম, ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, গণগ্রেপ্তার

মানবজমিন ডেস্ক

১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার, ১২:১১ অপরাহ্ন

কাশ্মীর পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন প্রশাসনে চিঠি লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাতজন আইন প্রণেতা। এর মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেসম্যান ও সিনেটর। চিঠিতে তারা বলেছেন, কাশ্মীরে ভয়াবহ সব ঘটনার অভিযোগ সংক্রান্ত রিপোর্ট পাচ্ছি আমরা। এর মধ্যে রয়েছে জোরপূর্বক গুম, গণগ্রেপ্তার, ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পর্যায়ের নেতাদের টার্গেট করে আটক রাখা। পাকিস্তানের অনলাইন ডন এ খবর দিয়ে বলছে, এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে মার্কিন প্রশাসনকে লেখা কংগ্রেসম্যান ও সিনেটরদের তৃতীয় চিঠি এটি। এ চিঠিতে ভারত দখলীকৃত জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি জোরালোভাবে ফুটিয়ে তেলা হয়েছে। বলা হয়েছে, এ উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। শুরু হতে পারে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ।
 
একটি চিঠিতে চারজন সিনেটর প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে কাশ্মীর সঙ্কট সহ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তিতে গঠনমূলক ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। এমন আহ্বানে দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক এই দুটি দেশের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রয়োজন হতে পারে। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে চিঠি লিখেছেন কংগ্রেসওম্যান জয়াপাল এবং কংগ্রেসম্যান জেমস পি ম্যাগভার্ন। এতে তারা জম্মু-কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের রিপোর্ট তদন্তের জন্য অবিলম্বে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ও নিরপেক্ষ মানবাধিকার বিষয়ক পর্যবেক্ষকদের প্রবেশের অনুমতি দেয়ার দাবি জানান।
 
এ সপ্তাহে কাশ্মীর পরিস্থিতি, বিশেষ করে সেখানকার মানবাধিকার নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক ডজন আইনপ্রণেতা। কেউ কেউ সতর্ক করেন যে, এই বিরোধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। আর তা থেকে দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আরেকটি যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। এখানে উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে যখন গ্রীষ্মকালীন অবকাশ চলছে, তখনই কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে ভারত। সেখানে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করে। কেড়ে নেয়া হয় জনগণের মৌলিক অধিকার। এমন অবস্থায় বেশ কিছু আইণপ্রণেতা নিন্দা জানিয়েছেন। কিছু আইন প্রণেতা উত্তেজনা প্রশমিত করতে নিজের প্রভাবকে ব্যবহার করতে আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি।

নিন্দার এই ঝড় ক্রমশ বাড়তে থাকে এই সপ্তাহে, যখন শরতকালীন অধিবেশনের জন্য ওয়াশিংটনে ফিরতে শুরু করেছেন আইন প্রণেতারা। এ মাসের শেষের দিকে কাশ্মীর ইস্যুতে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিষয়ক কংগ্রেশনাল প্যানেলে। অন্যদিকে কয়েক জডন আইন প্রণেতা বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছেন। অন্যসব প্যানেলেও একই রকম শুনানি হতে পারে। তবে যখন নতুন অধিবেশন শুরু হবে তখন পররাষ্ট্র বিষয়ক প্যানেলে সাধারণ বিতর্ক হতে পারে কাশ্মীর ইস্যুতে। এখন পর্যন্ত দেয়া বিবৃতিগুলোতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে ধরা হয়েছে। তা হলো- ১. কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর নিন্দা জানাতে হবে। ২. ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আরেকটি যুদ্ধ এড়াতে হবে এবং ৩. উত্তেজনা প্রশমনে যুক্তরাষ্ট্রকে অধিক সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট দলের আইন প্রণেতারা আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে ধরেছেন। তা হলো, পরিস্থিতির যাতে সুযোগ নিতে না পারে জঙ্গিরা তা নিশ্চিত করতে হবে পাকিস্তানকে। সাম্প্রতিক কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যে কংগ্রেসনাল একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ভারতের কর্মকান্ডে কাশ্মীরের প্রতি ক্যাপিটল হিলে যথেষ্ট সহানুভূতি সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এই সহানুভূতি নষ্ট হয়ে যেতে পারে, যদি এর ভিতর যুক্ত হয়ে পড়ে জঙ্গিরা। ওদিকে, বিরোধ মীমাংসায় যুক্তরাষ্ট্র বা তৃতীয় কোনো দেশের মধ্যস্থতার বিরোধী ভারত। কিন্তু মনে হচ্ছে ওয়াশিংটন অনেকটাই বুঝতে পেরেছে যে, কাশ্মীরের মতো বিরোধ বাইরের সহায়তা ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়।

 এরই মধ্যে চারজন সিনেটর চিঠিতে লিখেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করতে। প্রত্যাহার করতে হবে অচলাবস্থা ও কারফিউ। মুক্তি দিতে হবে কাশ্মীরের বন্দিদের। অন্যদিকে সিনেটর বব ক্যাসি বলেছেন, কয়েক দশকের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা পরিবর্তন করে ভারত ভয়াবহ এক অবস্থান নিয়েছে। এ নীতির কারণে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাবে। জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অন্যদিকে ভারতের কর্মকান্ডকে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেসওম্যান রাশিদা তৈয়বা। তিনি বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এতে ভারত ও কাশ্মীরের গণতন্ত্রের ভয়াবহ ক্ষতি করা হয়েছে। তাই অন্যায়ভাবে আটক, ধর্ষণ ও নির্যাতনের ভয়ে ভীত হওয়া উচিত নয় সেখানকার মানুষের। কাশ্মীরে যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, গণতান্ত্রিক আদর্শকে সমুন্নত রাখতে, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও কাশ্মীরের উত্তেজনা প্রশমনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কংগ্রেসওম্যান ইলহান ওমর।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status