প্রথম পাতা

ঢাকায় জানাজা-শ্রদ্ধা, রংপুরের নেতাদের হুঁশিয়ারি

স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা ও রংপুর

১৬ জুলাই ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:১৪ পূর্বাহ্ন

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দুই দফা জানাজা হয়েছে গতকাল। এছাড়া দলীয় কার্যালয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। আজ রংপুরে জানাজা ও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তার দাফনের কথা রয়েছে। যদিও গতকাল রাত পর্যন্ত কোথায় এরশাদকে দাফন করা হবে এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি দলের পক্ষ থেকে। রংপুর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা এরশাদকে রংপুরে দাফনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। যদিও শনিবার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল এরশাদকে সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
গতকাল সকাল ১১ টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এরশাদের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ, ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, চিফ হুইপ নুর-ই আলম চৌধুরী লিটন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ নানা স্তরের সাধারণ মানুষ। এসময় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার সামরিক সচিব এরশাদের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া বিরোদলীয় উপনেতা ও এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। নামাজের পূর্বে এরশাদের জীবনী তুলে ধরেন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ ও জাপা মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন, জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের। সংসদ ভবনের জানাজা শেষে দুপুর ১২ টায় এরশাদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কাকরাইলে পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সেখানে পার্টির বিভাগ, জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

পার্টির নেতাকর্মীরা চোখের জলে বিদায় জানান তাদের প্রিয় নেতাকে। পার্টির কার্যালয়ের সামনে বর্তমান মহাসচিব ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং পত্নী নাসরীন জাহান রত্না উপস্থিত ছিলেন। প্রেসিডিয়ামের সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, হাজী সাইফুদ্দিন মিলন, মীর আবদুস সবুর আসুদ, মিজানুর রহমান, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, সাঈদুর রহমান টেপা, আলমগীর শিকদার লোটন, জাপার সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, আদেলুর রহমান আদেল, ভাইস চেয়ারম্যান জহিরুল আলম রুবেল, দপ্তর সম্পাদক সুলতান মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ নোমান এসেছিলেন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জাসদ (রব) এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন এরশাদের কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এরশাদের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে অনেকেই এরশাদের স্মৃতিচারণ করেন। প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ বলেন, এরশাদ আমাদের পিতার মত। তার অবদান বলে শেষ করা যাবে না। তিনি এদেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। জাতীয় পার্টি অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরশাদের আদর্শ নিয়েই তারা দলকে এগিয়ে নিবেন।

এরশাদ না থাকলেও বর্তমান নেতৃত্ব মেনেই এগিয়ে যাবেন। জাপার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য নজরুল ইসলাম পিরোজপুর থেকে আসেন প্রিয় নেতাকে বিদায় জানাতে। তিনি বলেন, তিন মাস আগে স্যারের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তিনি সবসময় বলতেন, তোমরা শান্ত থাক। ধৈর্য্য রাখতে বলেছিলেন। বিকাল ৪ টায় এরশাদের মরদেহ কাকরাইল কার্যালয় থেকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে নেয়া হয়। বাদ আছর সেখানে তৃতীয় দফা জানাজা হয়। জানাজায় ইমামতি করেন, বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা মিজানুর রহমান। জানাজায় অংশ নেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। রাতে এরশাদের লাশ রাখা হয় সিএমএইচের হিমঘরে। আজ সকাল ১০টায় এরশাদের মরদেহ হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হবে তার নিজের সংসদীয় আসন রংপুরে। রংপুর ঈদগাহ মাঠে বাদ জোহর জানাজার কর্মসূচি রয়েছে।

এরশাদকে রংপুরে সমাহিত করতে না দিলে
রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়ার ঘোষণা
জাভেদ ইকবাল, রংপুর থেকে জানান, এরশাদকে রংপুরে সমাহিত করতে না দিলে, রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। এরশাদের সমাধি নিয়ে যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছেন বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

এরশাদের মৃত্যুতে রংপুরজুড়ে চলছে শোকের মাতম। নগরজুড়ে লাগানো হয়েছে শোক পতাকা। মোড়ে মোড়ে মাইকে বাজানো হচ্ছে কোরআন তেলাওয়াত। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, পেশাজীবী সংগঠনের শোক ব্যানারে ছেয়ে গেছে রংপুরের রাস্তাঘাট, অলি-গলিসহ সর্বত্রই। মাইকে এরশাদের জানাজার সময়সূচি ঘোষণা করে জানাজায় শরিক হওয়ার আহ্বান জানাতে নগরজুড়ে চলছে সমানতালে প্রচারণা। সেন্ট্রাল রোডস্থ দলীয় কার্যালয় ছেয়ে গেছে নেতাকর্মীদের শোক ব্যানারে। গতকাল সকালে দলীয় কার্যালয়ে রংপুর-রাজশাহী বিভাগ জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে জরুরি সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে নেতাকর্মীরা যেকোনো মূল্যে এরশাদের সমাধি রংপুরে করা হবে বলে ঘোষণা দেন। বাধা এলে শক্ত হাতে প্রতিহত করার হুঁশিয়ারিও দেন তারা।

মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, আমরা প্রিয় নেতার সমাধি করতে ঢাকায় ২টি স্থান পছন্দ করে ছিলাম, সেখানে তাকে জায়গা দেয়া হয়নি। তাকে বনানী সামরিক কবরস্থানে দাফন করে সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করার একটি অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। শরীরের এক ফোঁটা রক্ত থাকতে সেখানে আমরা তাকে সমাহিত করতে দিব না। আজ মঙ্গলবার যথাযোগ্য মর্যাদায় আমাদের প্রিয় নেতার মরদেহ ক্যান্টনমেন্ট থেকে কালেক্টর ঈদগাহ মাঠে নিয়ে আসা হবে। সেখানে বৃহৎ জানাজা হবে।

যে পল্লী নিবাস থেকে তিনি রাজনীতি করেছেন, যে পল্লী নিবাসকে তিনি নতুনভাবে গড়েছেন, সেখানেই তাকে সমাহিত করা হবে। মোস্তফা আরো বলেন, কেন্দ্রের গুটি কয়েক নেতাকর্মীর দালালিপনা, স্বার্থান্বেষী সিদ্ধান্তের কারণে এরশাদের মরদেহ ঢাকায় ফেরত নেয়ার চেষ্টা চলছে। ঢাকায় দাফনের চেষ্টা চালালে রক্ত দিয়ে এর প্রতিবাদ করা হবে। এরশাদের সঙ্গে তার হাজার সৈনিককে দাফন করে তবেই লাশ ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে। পর্দার আড়ালে যেসব মুখোশধারী নেতা কলকব্জা নাড়ছে, তাদেরকে আমরা চিহ্নিত করেছি।

জাতীয় পার্টির মহানগর সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির বলেন, এরশাদের লাশ ঢাকা থেকে রংপুরে না আনার ষড়যন্ত্র চলছে। আবহাওয়া খারাপের অজুহাত দেখিয়ে লাশ না আনার পাঁয়তারা চলছে। লাশ আনা নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হলে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে লাগাতার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।
এদিকে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতি কোরবানি ঈদের নামাজ আদায় করতেন রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ ময়দানে। সেজন্য ত্রিপলের নিচে সামিয়ানা ও তার নিচে আলাদা করে একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে তার লাশ রাখার জন্য। তার পাশে সাদা কাপড় দিয়ে বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে।

এদিকে, এরশাদের জন্মস্থান দিনহাটায় শোকের মাতম চলছে। দিনহাটার এই কৃতী মানুষটি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ায় শোক পালন করছে ওই এলাকার মানুষ। এরশাদকে শেষবারের মতো দেখতে তার ভাতিজা আহসান হাবীব ছুটে এসেছেন রংপুরের পল্লী নিবাসে।
আহসান হাবীব বলেন, রোববার এরশাদের মৃত্যুর খবর দিনহাটায় পৌঁছালে সেখানে শোকের ছায়া নেমে আসে। তিনি যে স্কুলে লেখাপড়া করেছেন সেই স্কুল দিনহাটা উচ্চ বিদ্যালয় সঙ্গে সঙ্গে ছুটি ঘোষণা করা হয়। সোমবারও স্কুল বন্ধ ছিল। একজন সাবেক রাষ্ট্রপতির মৃত্যু হয়েছে, আমাদের দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এখানে তার কিছুই নেই। যেটি দেখে আমি খুবই মর্মাহত হয়েছি। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবেও তার কবর জনসম্মুখে হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কি হচ্ছে তা আমি বুঝতে পারছি না। এদিকে, এরশাদের পল্লী নিবাস বাসভবনের পার্শ্বে এরশাদের বাবার নামে করা মকবুল হোসেন জেনারেল ও ডায়াবেটিক হাসপাতালের লিচু গাছের তলায় এরশাদের সমাধিস্থল রচনা করতে স্থান নির্ধারণ করে কবর খোঁড়ার কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল বিকালে সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে জায়গা নির্ধারণ করে দেন। এরশাদের নিজ হাতে লাগানো লিচুবাগানেই তাকে সমাহিত করার আয়োজন করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status