বিশ্বজমিন

তিউনিশিয়ায় আটকা অভিবাসীদের দেশে ফিরতে বাধ্য করার অভিযোগ

মানবজমিন ডেস্ক

২৬ জুন ২০১৯, বুধবার, ১০:২৯ পূর্বাহ্ন

তিউনিশিয়া উপকূলে আটকে পড়া বাংলাদেশীরা দেশে ফিরতে না চাইলে তাদেরকে খাদ্য ও পানি থেকে বঞ্চিত রাখার হুমকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এমন হুমকির প্রেক্ষিতে কমপক্ষে ৩০ জন বাংলাদেশী দেশে ফিরতে সম্মতি দিতে বাধ্য হয়েছেন। মঙ্গলবার তাদের একটি দল দেশে এসেছেন। তবে তাদেরকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এসব বাংলাদেশী স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে রাজি হয়েছেন। এ খবর দিয়েছে ল্যাতিন আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলাভিত্তিক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টেলিসুর অনলাইন।

এতে বলা হয়েছে, কমপক্ষে ৩০ বাংলাদেশী অভিবাসীকে জোর করে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এমন অভিযোগ করেছেন তাদের অভিভাবকরা ও দাতব্য সংগঠনগুলো। ওইসব অভিবাসী লিবিয়া থেকে নৌপথে ইউরোপ যাত্রা করেছিলেন। তাদেরকে গত ৩১ শে মে চীনা মালিকানাধীন মেরিডাইভ ৬০১ নৌযান উদ্ধার করে অবস্থান করে তিউনিশিয়া উপকূলে। এই নৌযানটি অফসোর তেল কোম্পানিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। ওইসব অভিবাসীকে উদ্ধার করা হলেও তিউনিশিয়া তাদেরকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে কয়েক সপ্তাহ তারা তিউনিশিয়া থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের ভিতরে আটকা পড়ে ভাসতে থাকেন। এভাবে কেটে যায় আরো ২০ দিন।  এরপরে ১৮ই জুন তাদেরকে তিউনিশিয়ার একটি বন্দিশিবিরে নিয়ে রাখা হয়। কয়েক দিনের মধ্যে তাদের ১৭ জনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। অন্য ১৫ জনকে মঙ্গলবার দেশে পাঠানো হয়।


জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) বলছে, প্রায় ৩০ জন বাংলাদেশী দেশে ফিরে যেতে চেয়েছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে অন্য অভিবাসীরাও ফিরে যাবেন। কিন্তু এসব অভিবাসীর আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় দাতব্য সংগঠনগুলো বলছে, বাংলাদেশী একজন কর্মকর্তা ওইসব অভিবাসীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তিনি তাদেরকে ভয় দেখান। বলেন, যদি তারা সেখানে অবস্থান করতেই চান তাহলে তারা খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। এর ফলে তারা দেশে ফেরার অনুরোধ মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। একজন আত্মীয় দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, যখন সবাই উদ্ধারকারী বোটে ছিলেন তখন বাংলাদেশী ওই কর্মকর্তা তাদেরকে বলেছেন যে, যদি তারা দেশে ফিরতে রাজি না হন তাহলে কোনো খাদ্য ও পানি দেয়া হবে না তাদেরকে। এতে ওই বোটে মারা যাওয়ার ভয় পেয়ে বসে তাদেরকে। ফলে তাদেরকে দিয়ে জোর করে দেশে ফেরার সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করানো হয়েছে।
 
তিউনিশিয়ায় অভিবাসীদের অধিকার বিষয়ক নিরপেক্ষ সংগঠন দ্য ফোরাম তিউনিসিয়েন পোর লেস ড্রোইটস ইকোনোমিকস এট সোসিয়াউক্স বা তিউনিসিয়ান ফোরাম ফর ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রাইটস (এফটিডিইএস) বলছে, তারা বিশ্বাস করে না যে, এসব অভিবাসী স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে রাজি হয়েছেন। গ্রুপটি আরো বলেছে, যেখানে অভিবাসীদের আটক রাখা হয়েছে আমরা সেখানে বার বার ভিজিট করার চেষ্টা করেছি, জানার চেষ্টা করেছি তাদের ইচ্ছা সম্পর্কে। কিন্তু বার বার এমন অনুরোধ করা সত্ত্বেও আমাদেরকে বলা হয় নি, এসব অভিবাসীকে কোথায় রাখা হয়েছে।

তবে অভিবাসীদের কাউকে জোর করে দেশে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে আইওএম। তারা বলেছে, এসব অভিবাসীর সবাই স্বেচ্ছায় তাদের দেশে ফিরতে রাজি হয়েছেন। তিউনিশিয়ায় আইওএমের মিশন প্রধান লোরেনা ল্যান্ডো বলেছেন, সমুদ্রের ভিতর বসে থাকা কোনো সমস্যার সমাধান নয়। যদি তারা মনে করেন দেশে ফিরলে তাদের ওপর নিপীড়ন চালানো হবে তাহলে আশ্রয় প্রার্থনার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির। অথবা তারা দেশে ফিরতে চাইতে পারেন। অথবা সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য সময় নিতে পারেন।
 
ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপমুখী শরণার্থীদের উদ্ধার বিষয়ক হটলাইন হলো অ্যালার্ম ফোন। এর মুখপাত্র বলেছেন, আইওএম স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার কথা বলছে, যখন স্বেচ্ছায় ফেরার কিছুই ঘটে নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status