অনলাইন

কম মূল্যে ধান কিনে চালকল মালিকদের মুনাফা পাইয়ে দিচ্ছে সরকার: ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার

২৫ মে ২০১৯, শনিবার, ১:২৯ পূর্বাহ্ন

বাজার থেকে কম মূল্যে ধান কিনে চালকল মালিকদের মুনাফা পাইয়ে দিচ্ছে সরকার। এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘বিপর্যস্ত কৃষক-বিপন্ন কৃষি’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন,  সরকার ধান/চাল সংগ্রহের মাধ্যমে দলীয় ব্যবসায়ী চাল কল মালিকদের মুনাফা পাইয়ে দিচ্ছে। বাজার থেকে কম মুল্যে ধান কিনে চাল কল মালিকরা চাল তৈরী করে সরকারের কাছে বিক্রি করে প্রতি কেজিতে মুনাফা করছে ১০ টাকা। আর কৃষক তার জমিতে উৎপাদিত ধান বাজারে বিক্রি করে কেজি প্রতি লোকসান গুনছে ১০-১২ টাকা।

গত বছরের উৎপাদনকে হিসেবে নিলে বোরো ধানের উৎপাদন হবে প্রায় ২ কোটি মেট্রিক টন। আর সরকার সংগ্রহ করবে মাত্র ১৩ লক্ষ টন, যা উৎপাদনের মাত্র ৬.৫ শতাংশ। আমাদের দাবি ধান অথবা চাল সংগ্রহের পরিমাণ কমপক্ষে বোরো উৎপাদনের ১৫ শতাংশ করা হোক। এতে বেশী পরিমান কৃষককে সহায়তা দেয়া যাবে।

মির্জা আলমগীর বলেন, বহুস্থানে ধানের জমিতে আগুন দিয়ে রাস্তায় ধান ফেলে দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। কৃষকদের বিশেষ করে ধান চাষীদের চাওয়া হচ্ছে- সরকার ন্যায্য মূল্যে চাষীদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করুক। কৃষকদের চাওয়া খুবই সামান্য ও যৌক্তিক। আমরা কৃষকদের এই যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একমত। সরকার কৃষকদের ন্যায্য দাবির কথা কানেও নিচ্ছে না বরং সরকারের একজন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কৃষকদের এই বিক্ষোভকে ‘স্যাবোটেজ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কৃষকদের বাস্তব এই সেন্টিমেন্টকে সরকার দলীয় শীর্ষ নেতার এহেন মন্তব্যে নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই।

তিনি বলেন,  এ দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগানদাতা কৃষক পরিবারের অবস্থা আজ খুবই নাজুক ও দুর্বিসহ। কিন্তু কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত। দেশের প্রায় দেড় কোটি কৃষক পরিবারের আজ ত্রাহি অবস্থা।  খাদ্য শষ্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে কৃষকের বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে। দেশের কৃষককুল তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মুল্য না পেয়ে বহু স্থানে ধানের জমিতে আগুন দিয়ে রাস্তায় ধান ফেলে দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। কৃষকদের বিশেষ করে ধান চাষীদের চাওয়া হচ্ছে-সরকার ন্যায্য মুল্যে চাষীদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করুক। কৃষকদের চাওয়া খুবই সামান্য ও যৌক্তিক। আমরা কৃষকদের এই যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একমত।

সরকার কৃষকদের ন্যায্য দাবির কথা কানেও নিচ্ছে না বরং সরকারের একজন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কৃষকদের এই বিক্ষোভকে ‘স্যাবোটেজ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কৃষকদের বাস্তব এই সেন্টিমেন্টকে সরকার দলীয় শীর্ষ নেতার এহেন মন্তব্যে নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। এদেশের কৃষকদের বর্তমানে যে দুরাবস্থা তা সরকারের ভুল নীতির প্রতিফলন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমানে ব্যাংক ব্যবস্থায় খেলাপী ঋণের পরিমান প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকা। এই খেলাপী ঋণ গ্রহীতাদের জন্য সরকার বিশেষ ছাড় দিয়েছে। যদিও এই ছাড় হাইকোর্ট আটকে দিয়েছে। সরকার ব্যাংক লুটপাটকারীদের দুধকলা দিয়ে পুষছেন। অথচ এই খেলাাপী ঋণের মাত্র ১০ শতাংশ বরাদ্দ দিলে সরকার আরো প্রায় ৩৬ লাখ মেট্রিক টন ধান কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারে। এতে দেশের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা উপকৃত হবে। এ সময় তিনি বলেন, বর্তমানে কৃষকদের যে দুরাবস্থা তা দুর করতে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

মির্জা আলমগীর বলেন, কৃষকদের উৎপাদিত ধানের বিপরীতে সরকার ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী কৃষককে কমপক্ষে ৩ মাসের জন্য সমপরিমান টাকা বিনা সুদে প্রদান করা। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তদারকীর মাধ্যমে সঠিকভাবে ক্ষুদ্র চাষীকে চিহ্নিত করে এই কাজ করতে পারে সরকার। এতে কৃষকরা বর্তমান অবস্থা হতে পরিত্রান পাবে। সরকারি পর্যায়ের ধান চাল গুদামজাত করনের ক্ষমতা হলো প্রায় ২১.৮ লাখ মে. টন। এই ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে বেশী পরিমানে সরকারকে ধান ক্রয় করতে হবে। কৃষকদের হয়রানি কমিয়ে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান বা চাল কিনতে হবে। প্রান্তিক বা ক্ষুদ্র কৃষকরা উৎপাদন মৌসুমে অর্থের প্রয়োজনে তার ধান সস্তায় বিক্রি করে এবং কিছু দিন পর আবার নিজে বেশী দামে ক্রয় করে বাজার থেকে চাল কিনে খায়।

সে কারণে প্রান্তিক চাষী ও ক্ষেত  মজুরদের জন্য বিশেষ সুদবিহীন ঋণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ধান চাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে অসৎ কর্মকর্তাদের জড়িত করা যাবে না এবং অসৎ কর্মকর্তাদের শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দলীয় নেতাকর্মীদের পকেট ভারী করার জন্য তাদের ধান কেনার অনুমতি দিয়ে সরকার কৃষকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে। দেশে ধান উৎপাদন সম্পর্কে সরকার মিথ্যাচার করছে। সরকার বলছে দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন, অথচ প্রতি বছর ২০ থেকে ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন চাল আমদানী করছে। সরকার জনগণের সাথে মিথ্যাচার করে আসল সত্যকে আড়াল করছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী,  সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার প্রমুখ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status