দেশ বিদেশ

পণ্যের মান নির্ণয় চট্টগ্রামে হলেও সনদ আনতে হয় ঢাকা থেকে

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

২৫ মে ২০১৯, শনিবার, ৯:৪৭ পূর্বাহ্ন

দেশের অধিকাংশ শিল্প প্রতিষ্ঠান ও পণ্য উৎপাদনকারীর অবস্থান চট্টগ্রামে। একই সঙ্গে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত সিংহভাগ পণ্য আমদানি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়। এসব পণ্যের মান নির্ণয় বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) চট্টগ্রামে হলেও মান সনদ আনতে ঢাকায় যেতে হয় ব্যবসায়ীদের।
যা শুধুমাত্র ব্যয়ের প্রশ্ন নয়, সময়সাপেক্ষও বটে। সরকারের কিছু নীতিনির্ধারণী মহলের খামখেয়ালিপনার কারণেই এই দীর্ঘসূত্রতা। ফলে দেশে শিল্প ও উৎপাদনকারীদের ভোগান্তির মাত্রা যেমন বাড়ছে তেমনি এর উৎপাদন খরচও বাড়ছে। এমন তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম ড্রিংকিং ওয়াটার ম্যানুফেকচার এসোসিয়েশনের সাধারণ সমপাদক ফয়সাল আবদুল্লাহ আদনান অভিযোগ করে বলেন, চট্টগ্রামে শতাধিক প্রতিষ্ঠান ড্রিংকিং ওয়াটার উৎপাদন করে। চট্টগ্রাম বিএসটিআই কার্যালয়ে ড্রিংকিং ওয়াটারের মান যাচাই করা হলেও সনদ আনতে দৌড়ঝাঁপ করতে হয় ঢাকায়। সেখানেও নেই কোনো পরিত্রাণ। এই সনদ পেতে দিতে হয় মোটা অঙ্কের ঘুষ। দৌড়ঝাঁপ ও হয়রানি থেকে পরিত্রাণ পেতে অনেকে বিরক্ত হয়ে সনদ ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাতেও শান্তি নেই। সনদ না পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে গুনতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকা জরিমানা।
একই কথা বলেছেন, রেস্তরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ইলিয়াছ ভুঁইয়া, চকবাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সহ অনেকে। তারা বলেন, সনদের অভাবে জরিমানা দেয়ার পরও ব্যবসার সমূহ ক্ষতিসাধন হচ্ছে। জরিমানার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচারের পর উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ ও ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। ভোক্তারা মনে করছেন পণ্যের মান নিম্নমানের বা ভেজাল। এ কারণে পণ্য ক্রয়ে অনীহা প্রকাশ করছেন। চট্টগ্রাম ওমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেসমিন আক্তার বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন জায়গা থেকে ওজনে পণ্য কম দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভ ও তাড়াতাড়ি বড়লোক হওয়ার নেশায় ওজনে পণ্য কম ও পণ্যে ভেজাল দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে বিএসটিআই’র সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালনের কথা। কিন্তু তার প্রতি কোনো নজরই নেই বিএসটিআই’র। কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ওজন ও পরিমাপের ক্ষেত্রে ভোক্তারা প্রতিনিয়তই ঠকছে। বিশেষ করে কাপড় ব্যবসায়ীরা মিটারে কাপড় কিনে তা ক্রেতাদের কাছে গজে বিক্রি করছেন। এভাবে ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। আর প্রশাসন বারবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা করলেও অপরাধ থেমে নেই।
তাই এ সমস্ত অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। বিএসটিআই চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সেলিম রেজা বলেন, চট্টগ্রামে পণ্যের মান যাচাইয়ের আধুনিক ল্যাবরেটরি রয়েছে। তবে অটোমেশন পদ্ধতি চালু হলে ব্যবসায়ীদের ঢাকা থেকে আর সনদ আনতে হবে না। এই পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে গত এপ্রিলে। আগামী ডিসেম্বর মাস নাগাদ এটি চালুর সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এ পদ্ধতি চালু হলে উদ্যোক্তারা তাদের উৎপাদিত পণ্যের মান যাচাই বা পরীক্ষণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সনদ পাবেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, বিশুদ্ধ তথা মানসমপন্ন খাদ্য ও শিল্পপণ্য শনাক্তকরণে এই অটোমেশন পদ্ধতি ভোক্তাদের বড় সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। ভোক্তা জানতে পারবেন বিশুদ্ধ ও ভেজালের স্বরূপ এবং বেছে নিতে পারবেন ভালো-মন্দ পণ্য সামগ্রী।
সূত্র জানায়, পণ্যের জাতীয় মান প্রণয়ন, মান নিয়ন্ত্রণ, গুণগতমানের নিশ্চয়তা বিধান এবং ওজন ও পরিমাপে কারচুপি রোধসহ সর্বক্ষেত্রে মেট্রিক পদ্ধতি বাস্তবায়নে বিএসটিআই কাজ করে যাচ্ছে। দেশে উৎপাদিত ১৮১ শিল্প, খাদ্য ও কৃষিজাত পণ্যের গুণগতমান প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
মানহীন ও অনিরাপদ খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য ভোক্তার জন্য ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। তেমনি ওজন ও পরিমাপের সব ক্ষেত্রে মেট্রিক পদ্ধতির একক পরিমাপ (কেজি, লিটার, মিটার) ব্যবহার ও বিএসটিআই কর্তৃক পরীক্ষিত ওজনযন্ত্রে মেপে মালামাল ক্রয়-বিক্রয়ে ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব। এক্ষেত্রে ভোক্তারা বিএসটিআইয়ের স্টিকারযুক্ত ওজনযন্ত্র দেখে পণ্য ক্রয়ে সচেতন হতে হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status