বাংলারজমিন

সরাইলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আহত ২০

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

২৫ মে ২০১৯, শনিবার, ৯:৪৬ পূর্বাহ্ন

থানায় বসে নিষ্পত্তির মাত্র ১২ দিন পরই সরাইলে দু’দল গ্রামবাসীর দ্বিতীয় দফা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত হয়েছে ২০ জন। ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে একাধিক বসতঘর। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে ছুঁড়তে হয়েছে ৩৩ রাউন্ড রাবার বুলেট। পুলিশের হাতে আটক হয়েছে উভয় পক্ষের ৫ জন। গতকাল সকালে উপজেলার তেরকান্দা গ্রামে মামা ফজলু মিয়া ও ভাগিনা নাজিম উদ্দিনের লোকজনের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, আধিপত্য বিস্তার ও জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ওই গ্রামটি বারবার অশান্ত হয়ে উঠছে। নেতৃত্বে রয়েছেন ইউপি সদস্য ফজলু মিয়া ও তার ভাগিনা নাজিম উদ্দিন নজু। গ্রামের সাধারণ নিরীহ লোকজন মামা ভাগিনার এ তাণ্ডবের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সংঘর্ষ শুরু হলেই অনেকে নিজের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন। তারপরও যে কোনো দলের রোষানলে পড়তে হচ্ছে তাদের। নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে জায়গা সংক্রান্ত বিরোধ ছিল প্রতিবেশী নবির হোসেনের। নবির হোসেন ফজলু মিয়ার ছেলে শাব্বিরের শ্বশুর। শ্বশুরের পক্ষে কথা বলা অবস্থান নিতে যাওয়ায় এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে। গত ৮ই মে বুধবার উভয়পক্ষের লোকজন ঘণ্টার পর ঘণ্টা সংঘর্ষ চালায়। সেই সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন ফজলু মেম্বারের আরেক ছেলে মিলন (৩৮)। মিলনকে চিকিৎসাধীন রেখেই স্থানীয় গণ্যমান্য লোকদের চেষ্টায় গত ১০ই মে সরাইল থানায় বসে উভয়পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়। সকলেই আশায় বুক বেঁধে ছিলেন ওই গ্রামে শান্তির সুবাতাস বইবে। না সেই শান্তি স্থায়ী হলো না। নিষ্পত্তির মাত্র ১২ দিন পর গতকাল খবর ছড়িয়ে পড়ে আহত মিলনে অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। আবারও গতকাল সকালে দেশীয় অস্ত্রের ঝনঝনানিতে কেঁপে ওঠে তেরকান্দা গ্রাম। সকাল ১০ টায় উভয়পক্ষের সহস্রাধিক লোক দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রণক্ষেত্র তৈার করে। ঘণ্টাব্যাপী চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। গোত্র ও স্বজনদের অংশ গ্রহণে সংঘর্ষের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মফিজ উদ্দিনের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ। তাদের সঙ্গে যোগ দেন জেলা থেকে আসা এক প্লাটুন দাঙ্গা পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে ছুড়তে হয়েছে ৩৩ রাউন্ড রাবার বুলেট। সাথে টিয়ারশেল। ততক্ষণে পুলিশসহ উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন লোক আহত হয়েছে। ৩-৪টি বসতঘর ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৫ দাঙ্গাবাজকে আটক করেছে। আহতরা পুলিশি গ্রেপ্তারের ভয়ে সরাইলে চিকিৎসা না নিয়ে জেলা সদর হাসপাতালে ও আশপাশের প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছে। নামপ্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বলেন, গুটি কয়েকজন লোকের কারণে আজ গ্রামের এই অবস্থা। ভদ্র লোকগুলো ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না। ফজলু মেম্বার ও তার লোকজন যা ইচ্ছা তাই করছে। মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। সংঘর্ষের খবরে ঘটনাস্থলে হাজির হয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, এখানকার কিছু সর্দার নিজেদের লাভের জন্য দাঙ্গা লাগিয়ে রাখেন। আমরা যথা সময়ে না আসতে পারলে মার্ডার ও হতে পারতো। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। গ্রামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পুলিশ অবস্থান করছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status