বাংলারজমিন

রাজনগরে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত বাবা-মেয়ে

রাজনগর (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

২৫ মে ২০১৯, শনিবার, ৮:৫৭ পূর্বাহ্ন

রাখাল দাস (৩৪) জন্মের পর থেকে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত। হাতের ও পায়ের চামড়া শক্ত ও খসখসে হয়ে গেছে। হাতের তালু ও পায়ের পাতার চামড়া ফেটে গেছে তার। শক্ত হয়ে যাওয়া চামড়া টুকরো-টুকরো হয়ে প্রায়ই খসে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা নিলেও সারছে না এই রোগ। যত সময় যাচ্ছে তত যেন রোগটি আরো বেড়ে চলেছে। ডাক্তারদের ব্যবস্থাপত্রে এই রোগকে ‘হাইপারকেরাটসিস’ উল্লেখ করলেও কোনো ওষুধে রোগটি নির্মূল হচ্ছে না। স্কুলপড়ুয়া মেয়ে সম্পা দাসের (১৪) হাত-পায়ে একই ধরনের রোগে আক্রান্ত। বাবার শৈশবে যেমন লক্ষণ ছিল মেয়ের হাতে-পায়ে একই লক্ষণ রয়েছে। নিজের ভিটামাটি কিংবা জায়গা জমি কিছুই নেই যে বিক্রি করে বাবা-মেয়ে চিকিৎসা করাবেন। তাই এই রোগের চিকিৎসায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছেন ভিটামাটিহীন দরিদ্র রাখাল দাস ও তার মেয়ে সম্পা দাস। তারা মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের উত্তরভাগ গ্রামের বাসিন্দা।
রাখাল দাসের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার মা নিবা রানী দাসের এই রোগ ছিল। তিনি বছর তিনেক আগে মারা গেছেন। রাখাল দাসও জন্মের পর থেকে এই রোগে ভুগছেন। শৈশব থেকে চিকিৎসা নিলেও ‘অজ্ঞাত’ এই রোগটি থেকে নিরাময় পাননি। বরং আগের চেয়ে রোগের বিস্তৃতি আরো বেড়েছে। হাত-পায়ের ব্যথার যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারেন না। পৈতৃক কোনো ভিটামাটি না থাকায় দরিদ্র রাখাল দাস তার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে প্রতিবেশী অসিত দাসের বাড়িতে বসবাস করছেন। সংসার চালাতে ৮ বছর সংবাদপত্র বিক্রি করেছেন। পরিবারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় সংবাদপত্র বিক্রি বাদ দিয়ে ২০১৭ সালে সামান্য পুঁজি নিয়ে ফেরি করে মোমবাতি-আগরবাতি বিক্রি করা শুরু করেন। ‘অজ্ঞাত’ এই রোগের চিকিৎসা ও ঔষধ কিনতে গিয়ে নিজের পুঁজিটুকুও শেষ হয়ে গেছে। এখন এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে রাখাল দাসের সংসার চালাতে হয়। প্রতিবন্ধী পরিচয়পত্র থাকলেও ভাতার সুবিধা পান না। মেয়ে সম্পা দাস উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের বিমলাচরণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ও ছেলে রাজু দাস একই বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। মেয়ে একই রোগে আক্রান্ত দেখে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন রাখাল। মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন তার শঙ্কা বাড়ছে। সংসার চালানো যেখানে তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না সেখানে এই জটিল রোগের চিকিৎসা করানোটা তার কাছে অকল্পনীয়। রোগটি পুরোপুরি নির্মূল হবে কিনা, হলে কত টাকা খরচ হবে ও কোথায় চিকিৎসা নিলে নির্মূল হবে তাও জানেন না তিনি। হঠাৎ পায়ের কনিষ্ঠ আঙুলে ব্যথা বেড়ে গেলে গত ৯ই মে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান রাখাল দাস। সেখানকার ডাক্তার তাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। তবে প্রয়োজনীয় ঔষধ কেনার মতো টাকা না থাকায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি না হয়েই ফিরে আসেন। আর্থিক সহায়তা পেতে রাখাল দাস উপজেলা সমাজসেবা অফিসে আবেদন করেছেন। তবে সেখান থেকে যে আর্থিক সহায়তা করা হয় ইতিপূর্বে তার চেয়ে বেশি টাকা খরচ করেও তিনি কোনো সুফল পাননি বলে জানান। এখন এই অজ্ঞাত রোগের চিকিৎসায় নিরুপায় হয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছেন অসহায় রাখাল দাস ও তার মেয়ে সম্পা দাস।
রাখাল দাস বলেন, জন্মের পর থেকে এই রোগে ভুগছি। চিকিৎসা করাতে গিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। মেয়েকেও এই অজানা রোগে আক্রমণ করেছে। এই রোগের চিকিৎসা আছে কিনা, থাকলে কত টাকা খরচ হবে তাও জানি না। বাপ-মেয়ে সুস্থ জীবন পেতে এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ বিত্তবানদের সহযোগিতা চাই। উত্তরভাগ ইউপি চেয়ারম্যান শাহ শাহিদুজ্জামান ছালিক বলেন, রাখাল দাস আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা। সে জন্মের পর থেকে অজানা এই চর্ম রোগে আক্রান্ত। তার স্কুলপড়ুয়া মেয়েরও একই রোগের লক্ষণ দেখা গেছে। চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিজের ব্যবসার পুঁজি হারিয়ে এখন মানুষের কাছে হাত পেতে সংসার চালাচ্ছে। সহযোগিতা পেলে বাবা-মেয়ের জীবন বেঁচে যেতে পারে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status