প্রথম পাতা

গ্যাস বন্ধ অর্ধেক ঢাকায় তীব্র দুর্ভোগ

স্টাফ রিপোর্টার

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, রবিবার, ১০:৩৯ পূর্বাহ্ন

রাজধানীর অর্ধেক অংশে হঠাৎ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর আজিমপুর থেকে ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর হয়ে মিরপুর পর্যন্ত তিতাসের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে জেগেই দুর্ভোগে পড়েন এসব এলাকার লাখ লাখ বাসিন্দা। কিছু কিছু এলাকায় চুলা মিটমিট করে জ্বললেও তাতে পানিও গরম হয়নি, ডিমও ভাজা যায়নি। পাড়া-মহল্লার হোটেলগুলোতেও  গ্যাস না থাকায় খাবার পেতে ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীবাসী। যেসব দোকানে সিলিন্ডারে রান্না হয়েছে সেখানে দেখা গেছে ক্রেতাদের দীর্ঘ সারি। সিএনজি স্টেশনগুলোতেও গ্যাস না থাকায় বের হতে পারেনি অনেক যানবাহন। সরজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে গ্রাহকদের এ দুর্ভোগের চিত্র পাওয়া গেছে।

সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় বাসাবাড়িতে রান্না করতে পারেন নি অনেক নগরবাসী। দুপুরের খাবারের জন্য নিরুপায় হয়ে ছুটতে হয়েছে খাবারের হোটেলে। সকাল থেকে মিরপুর, শ্যামলী, ধানমণ্ডি, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, আদাবর, গাবতলী, সাভার ও আশুলিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও এর আশেপাশে কয়েকটি এলাকায় যান্ত্রিক ত্রুটি মেরামতের জন্য গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে তিতাস গ্যাস বিতরণ কর্তৃপক্ষ। আজ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে বলে তিতাসের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন। মিরপুর-১ আনসার ক্যাম্প এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী শারমিন বলেন, হঠাৎ করে সকাল থেকে গ্যাস নেই। খাবার রান্না করতে গিয়ে দেখি চুলায় আগুন মিটমিট করে জ্বলছে। এতে পানিও গরম হয়নি, ডিমও ভাজা যায়নি। তিনি জানান, বিকাল নাগাদও তার বাসায় গ্যাস আসেনি। মাঝে মধ্যে গ্যাসের সমস্যায় পড়েন বলে উল্লেখ করেন এই গৃহিণী।

লালবাগের সুবল দাস রোডের গৃহিণী রোকেয়া বেগম বলেন, সকাল ৭টার পর মেচের কাঠি দিয়ে চুলার আগুন জ্বালাতে গিয়ে দেখি আগুন ভালোভাবে জ্বলছে না। কোনো রকম আগুন মিটমিট করে জ্বলছে, তাতে কোনো কিছুই রান্না করা সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে মুড়ি ও পাউরুটি জেলি দিয়ে খেয়ে সকালের নাস্তা সেরেছি। মোহাম্মদপুর এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে চুলা জ্বালাতে গিয়ে দেখি মিটমিট করে আগুন জ্বলছে। কিছুক্ষণ পর গ্যাস পুরোপুরি চলে যায়। একই কথা বলেন মিরপুর এলাকার অনেক বাসিন্দা। লালবাগ, আজিমপুর, কামরাঙ্গীরচর, গনকটুলী, মোহাম্মদপুর এলাকায় গ্যাস না থাকার কথা বলেছেন বাসিন্দারা।

মিরপুর-১ নম্বরের বিভিন্ন ব্লক, মিরপুর-২ এর ৩ নং রোড, ৪ নম্বর রোড, রাইনখোলা, গুদারাঘাট, কমার্স কলেজ এলাকায় গ্যাস না থাকার কথা বলেছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। মিরপুর-২ এর ৩ নম্বর রোডের বাসিন্দা আরেফিন সিদ্দিকা বলেন, সকাল থেকে চুলার আগুন জ্বলেনি। ফলে রান্নাবান্না বন্ধ ছিল। শুকনা খাবার দিয়ে নাস্তা করেছি। দুপুরে বাইরে খাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। মোহাম্মদপুরের টিক্কাপাড়ার গৃহিণী জাহানারা বেগম বলেন, গতকাল গ্যাস না থাকায় পরিবারের সদস্যদেরও বাসার খাবার খেতে পারেনি। হাজারীবাগ বাড্ডানগর পানির ট্যাংক এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী অনুফা আক্তার বলেন, গ্যাস নেই। আছে গ্যাস বিল। দিনে কেরোসিন তেল দিয়ে স্টোভ জ্বালিয়ে কোনো রকম গতকাল রান্না করেছেন। মাঝে মধ্যে সিলিন্ডারের চুলায় খাবার রান্না করতে হয় তার। মিরপুরের ডি-ব্লক ৫ নম্বর রোডের ভাড়াটিয়ারা জানান, তাদের বাসায় গতকাল হঠাৎ করে গ্যাসের চাপ একেবারে কমে যায়।

এদিকে, গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, যেসব এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে সেসব এলাকার খাবার দোকানগুলোর সামনে অপেক্ষা করছে দীর্ঘ লাইন। লোকজন দাঁড়িয়ে আছে খাবার কিনতে। হোটেলে গিয়ে খাবার না পেয়েও খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে অনেককে। অনেকে ঘুরছেন এক হোটেল থেকে অন্য হোটেলে। শ্যামলী এলাকার বাসিন্দা হালিমা খাতুন জানান, সকাল থেকে গ্যাস সংকটের কারণে রান্না করতে পারেননি। সকালের খাবার সংগ্রহ করতে হয়েছে পাশের হোটেল থেকে আর দুপুরের খাবারের জন্য সাহায্য নিতে হয়েছে ইলেকট্রিক চুলার। সব থেকে অসুবিধায় পড়েছেন পরিবারে শিশুদের নিয়ে। শ্যামলী ডেলিসিয়া হোটেলের ম্যানেজার রাসেল বলেন, রাজধানীতে সকাল ৬টা থেকে গ্যাস নেই।

তাই সকাল থেকে এ হোটেলে লোকজনের প্রচণ্ড ভিড়। সিলিন্ডারের গ্যাসে রান্না হওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যে সেই খাবার ফুরিয়ে যাচ্ছে। ভাত আছে তো তরকারি নেই, এভাবেই সারাদিন চলেছে। তেহারি ঘর হোটেলের সামনে খাবার নেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন মাহমুদ। তিনি বলেন, সকালের দিকে হোটেল থেকে পরিবারের সবার জন্য রুটি কিনে নিয়েছেন। গতকাল থেকে যে গ্যাস থাকবে না সে বিষয়ে আগে থেকে জানতেন না তিনি। গ্যাস না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, গ্যাস যে থাকবে না সেই বিষয়টি মাইকিং করে জানানো হয়নি। আগে জানতে পারলে সেই হিসেবে ব্যবস্থা নিতে পারতাম। তিনি আরো জানান, সব হোটেলে ভিড়। কোথাও খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। তাই কিছু করার নেই, বাধ্য হয়ে এ হোটেলের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।

গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানায়, জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য শনিবার সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য আশুলিয়া ও আ?মিনবাজার সি?জিএস প্যান্ট থেকে তিতাস সিস্টেমে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এর ফ?লে আশু?লিয়া, সাভার, আ?মিনবাজার, গাবতলী, মিরপুর, পাইকপাড়া, পীরেরবাগ, কল্যাণপুর, শ্যামলী, রিং?রোড, মনসুরাবাদ, কা?দিরাবাদ, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, ধানম?ণ্ডি, আজিমপুর, হাজারীবাগ ও এসব এলাকা সংলগ্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বি?ঘ্নিত হতে পারে। কোথায় কোথাও গ্যাসের চাপ খুব কমও থাকতে পারে।

জানা গেছে, তিতাস গ্যাস কোম্পানি বর্তমানে ১৩ হাজার ৭৪ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করছে। এর গ্রাহক সংখ্যা ২৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৩৪।
গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে মানবজমিনকে বলেন, আশুলিয়া এলাকায় ট্রান্সমিশন ভাল্বে শুক্রবার রাতে একটা সমস্যা দেখা দেয়। এতে গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। কারণ ওই এলাকা দিয়ে গ্যাস ঢাকায় প্রবেশ করে। এটা তিতাসের কোনো সমস্যা নয়। আশা করা যায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রশাসন) মোস্তফা কামাল, যিনি বর্তমানে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে আছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে আশুলিয়ায় একটা দুর্ঘটনা ঘটে। জিটিসিএল-এর ওই এলাকায় একটি পয়েন্টে লিকেজ হয়। ফলে সমস্যা তৈরি হয়েছে। ওখানে মেরামতের কাজ দ্রুত চলছে। আশা করি রাতের মধ্যেই গ্যাস লাইন স্বাভাবিক হবে। বিকল্পভাবে কিছু কিছু এলাকায় গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status