বই থেকে নেয়া
এফবিআই’র এক্স বস কোমির নতুন বই (পর্ব-১০)
ট্রাম্প বললেন, ইমেইল তদন্ত থেকে হিলারিকে বাঁচিয়ে দিলাম!
মানবজমিন ডেস্ক
৬ জুন ২০১৮, বুধবার, ৭:৪৮ পূর্বাহ্ন
সাবেক এফবিআই পরিচালক জেমস কোমি হোয়াইট হাউসের নৈশভাজে যোগ দিতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মুখে তার আনুগত্য চাওয়া অর্থাৎ রাষ্ট্রের স্বার্থ না দেখে তার ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষা করার প্রস্তাবে সায় দেননি। বরং কোমি তার সাড়া জাগানো বই ‘অ্যা হায়ার লয়্যালটি: ট্রুথ, লাইজ এন্ড লিডারশিপ’ এ ট্রাম্পের ওই মনোভাবকে নিন্দা করতে গিয়ে নিউ ইয়র্কভিত্তিক কুখ্যাত মাফিয়া গ্যাং স্যামি গ্রাভানো পরিবারের কোনো সদস্যের অভিষেক অনুষ্ঠানের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এই মাফিয়া গ্যাং বংশপরম্পরায় হত্যা, ছিনতাই, অপহরণ ও গুমের মতো রোমহর্ষক অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকছেন। পরিবারের সদস্যরা জেলে যাওয়া-আসার উপরেই থাকেন। ৭৩ বছর বয়স্ক সামি দি বুল খ্যাত গ্রাভানো (বর্তমান ফ্যামিলি বস) এর আগে স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি এপর্যন্ত ১৯টি খুনের সঙ্গে জড়িত।
কোমি লিখেছেন, যেন ওই মাফিয়া পরিবারের বস আমার আনুগত্যের পরীক্ষা নিচ্ছেন। কোমির ভাষায়, ‘আমি ট্রাম্পের প্রস্তাবে সায় দেইনি এবং কখনও দেব না। আমি দৃঢ়চিত্ত ছিলাম যে, প্রেসিডেন্টকে আমি সামান্যতম ইঙ্গিতও দেব না, যাতে আমি তার প্রস্তাবে সম্মত হয়েছি বলে ধরে নিতে পারেন। সুতরাং আমি তাঁর প্রস্তাব শোনার পর নীরব থাকলাম। আমরা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকলাম, যেন আমরা নিজেদের অনন্তকাল ধরে দেখছি। অবশ্য বাস্তবে এভাবে আমরা দুই সেকেন্ডের মতো অপলক চোখাচোখি ঘটেছিল। আমি তার ভাবলেশহীন নীল চোখের নিচের তুলতুলে শ্বেত পাউচের দিকে পুনরায় তাকালাম। আমি তখন ভাবছিলাম যে, প্রেসিডেন্ট হয়তো আমেরিকার জীবনে এফবিআই-র ভূমিকা কি সে বিষয়ে অবহিত নন। অথবা ওই ভবনে গত ৪০ বছর ধরে যারা বসছেন, তাদের বিষয়ে তিনি কোনো পাত্তা দিতেই নারাজ। আসলে তাঁর আদৌ কোনো ধারণা নেই।
আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে কিংবা আমার তরুণ বয়সে আমার নিশ্চয় এই পরিস্থিতিতে স্নায়ু নিয়ন্ত্রণ আয়ত্তের মধ্যে ছিল না। সমস্যাটা হলো শীতল দৃষ্টিকে পাল্টা দৃষ্টিবাণ দিয়ে না ভঙ্গ করা কিংবা এমন কিছু হেঁয়ালিপূর্ণ কথা বলা যাতে একটা সম্মতি প্রকাশ পায়। এমনকি ৫৬ বছর বয়সেও যখন বেশ কিছুটা দাগ অর্জন করেছি, এবং এফবিআইয়ের পরিচালক পদে চার বছর পার করে ফেলেছি, তখন আমি সেই পরিস্থিতিতেও নিজের সঙ্গে কথা বলে নিতেই প্রবৃত্ত হলাম। আর ভেতর থেকে কে যেন জানান দিল: ‘খবরদার, তুমি এমন কিছুই করবে না, তুমি নির্ভয় থাকবে।’
ট্রাম্প নিজেই সেই মলিন অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠলন। তিনি তাঁর পেটের দিকে নজর দিলেন। আর অন্য প্রসঙ্গ তুললেন। আমার শীতল মনোভাব তাকে আদৌ ম্লান করতে পেরেছে বলে প্রতীয়মান হলো না। ডিনার চলতে থাকলো এবং অন্তরঙ্গ পরিবেশ ভালোই টিকেছিল।
আমরা এনকাউন্টার চালাতে থাকলাম। এই আলোচনাকে আমি কি ‘কনভারসেশন’ বলতে চাই না। কারণ দুজনের মধ্যে যদি একজনের বক্তব্য একনাগাড়ে দীর্ঘতর হয়, তাহলে সেটা আর ‘কথোপকথন’ থাকে না। আমি আবারও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বোঝাতে চাইলাম যে, হোয়াইট হাউস এবং এফবিআইয়ের মধ্যে তফাতটি ঠিক কোথায়। কিন্তু তার মুখে কথার খৈ ফুটছিল, তার মধ্যে ঢুকে কিছু প্রকাশ করা কঠিন ছিল। আহার পর্বের অবশিষ্ট মেয়াদে তিনি শুধু খাবার গলাধঃকরণের মুহূর্তে যেটুকু বিরতি দিচ্ছিলেন, বাকি সময় তিনি আমাকে বিস্তারিত বলে চলেছিলেন যে, তার অভিষেক অনুষ্ঠানে মানুষের ঢল কতটা নেমেছিল। তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণায় স্বাধীন গণমাধ্যমের কভারেজ কতটা নিশ্চিত করতে পেরেছিলেন। এবং প্রচারণার অশুভ চক্রগুলো কিভাবে তাকে জ্বালাতন করেছিল। হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল তদন্তের বিষয়ে তাঁর মত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি মোট তিনবার আমার নাম উচ্চারণ করেন। প্রথমবার, কোমি, আমি ৫ই জুলাই আমি আমার ঘোষণার মাধ্যমে তাঁকে (হিলারি) মুক্ত করেছি যে, তার বিরুদ্ধে বিচারযোগ্য কোনো মামলা দায়ের করা হবে না। যদিও তিনি উল্লেখ করেছেন যে, আমি সেই বিষয়ে (হিলারির বিরুদ্ধে মামলা না করতে) যে উপসংহারে পৌঁছেছিলাম, সেটা সঠিক ছিল না এই প্রসঙ্গে তিনি দ্বিতীয়বার আমার নাম নিলেন। আমি কংগ্রেসকে জানিয়ে দিলাম যে, আমরা তদন্ত পুনরায় শুরু করে দিয়েছিলাম। কারণ সেটাই কংগ্রেসকে আমার জানানোর কথা ছিল। এরপর কংগ্রেসকে আমি যে চূড়ান্ত চিঠি দিয়ে তদন্ত বন্ধ করার বিষয় জানিয়েছিলাম, সেই প্রসঙ্গে তিনি তৃতীয়বার কোমি নামটি নিলেন। ট্রাম্পের কথায়, আমি পুনরায় হিলারিকে বাঁচিয়ে দিলাম। কিন্তু বিষয়টিকে হিলারি একেবারেই ‘মিসপ্লে’ করলেন।
ট্রাম্প এসব বলছিলাম এমনভাবে যাতে মনে হচ্ছিল তিনি তাঁর কোনো ফেভারিট টিভি শোর কাহিনীর রূপরেখা (প্লটলাইন) বর্ণনা করছিলেন।
(চলবে)
কোমি লিখেছেন, যেন ওই মাফিয়া পরিবারের বস আমার আনুগত্যের পরীক্ষা নিচ্ছেন। কোমির ভাষায়, ‘আমি ট্রাম্পের প্রস্তাবে সায় দেইনি এবং কখনও দেব না। আমি দৃঢ়চিত্ত ছিলাম যে, প্রেসিডেন্টকে আমি সামান্যতম ইঙ্গিতও দেব না, যাতে আমি তার প্রস্তাবে সম্মত হয়েছি বলে ধরে নিতে পারেন। সুতরাং আমি তাঁর প্রস্তাব শোনার পর নীরব থাকলাম। আমরা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকলাম, যেন আমরা নিজেদের অনন্তকাল ধরে দেখছি। অবশ্য বাস্তবে এভাবে আমরা দুই সেকেন্ডের মতো অপলক চোখাচোখি ঘটেছিল। আমি তার ভাবলেশহীন নীল চোখের নিচের তুলতুলে শ্বেত পাউচের দিকে পুনরায় তাকালাম। আমি তখন ভাবছিলাম যে, প্রেসিডেন্ট হয়তো আমেরিকার জীবনে এফবিআই-র ভূমিকা কি সে বিষয়ে অবহিত নন। অথবা ওই ভবনে গত ৪০ বছর ধরে যারা বসছেন, তাদের বিষয়ে তিনি কোনো পাত্তা দিতেই নারাজ। আসলে তাঁর আদৌ কোনো ধারণা নেই।
আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে কিংবা আমার তরুণ বয়সে আমার নিশ্চয় এই পরিস্থিতিতে স্নায়ু নিয়ন্ত্রণ আয়ত্তের মধ্যে ছিল না। সমস্যাটা হলো শীতল দৃষ্টিকে পাল্টা দৃষ্টিবাণ দিয়ে না ভঙ্গ করা কিংবা এমন কিছু হেঁয়ালিপূর্ণ কথা বলা যাতে একটা সম্মতি প্রকাশ পায়। এমনকি ৫৬ বছর বয়সেও যখন বেশ কিছুটা দাগ অর্জন করেছি, এবং এফবিআইয়ের পরিচালক পদে চার বছর পার করে ফেলেছি, তখন আমি সেই পরিস্থিতিতেও নিজের সঙ্গে কথা বলে নিতেই প্রবৃত্ত হলাম। আর ভেতর থেকে কে যেন জানান দিল: ‘খবরদার, তুমি এমন কিছুই করবে না, তুমি নির্ভয় থাকবে।’
ট্রাম্প নিজেই সেই মলিন অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠলন। তিনি তাঁর পেটের দিকে নজর দিলেন। আর অন্য প্রসঙ্গ তুললেন। আমার শীতল মনোভাব তাকে আদৌ ম্লান করতে পেরেছে বলে প্রতীয়মান হলো না। ডিনার চলতে থাকলো এবং অন্তরঙ্গ পরিবেশ ভালোই টিকেছিল।
আমরা এনকাউন্টার চালাতে থাকলাম। এই আলোচনাকে আমি কি ‘কনভারসেশন’ বলতে চাই না। কারণ দুজনের মধ্যে যদি একজনের বক্তব্য একনাগাড়ে দীর্ঘতর হয়, তাহলে সেটা আর ‘কথোপকথন’ থাকে না। আমি আবারও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বোঝাতে চাইলাম যে, হোয়াইট হাউস এবং এফবিআইয়ের মধ্যে তফাতটি ঠিক কোথায়। কিন্তু তার মুখে কথার খৈ ফুটছিল, তার মধ্যে ঢুকে কিছু প্রকাশ করা কঠিন ছিল। আহার পর্বের অবশিষ্ট মেয়াদে তিনি শুধু খাবার গলাধঃকরণের মুহূর্তে যেটুকু বিরতি দিচ্ছিলেন, বাকি সময় তিনি আমাকে বিস্তারিত বলে চলেছিলেন যে, তার অভিষেক অনুষ্ঠানে মানুষের ঢল কতটা নেমেছিল। তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণায় স্বাধীন গণমাধ্যমের কভারেজ কতটা নিশ্চিত করতে পেরেছিলেন। এবং প্রচারণার অশুভ চক্রগুলো কিভাবে তাকে জ্বালাতন করেছিল। হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল তদন্তের বিষয়ে তাঁর মত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি মোট তিনবার আমার নাম উচ্চারণ করেন। প্রথমবার, কোমি, আমি ৫ই জুলাই আমি আমার ঘোষণার মাধ্যমে তাঁকে (হিলারি) মুক্ত করেছি যে, তার বিরুদ্ধে বিচারযোগ্য কোনো মামলা দায়ের করা হবে না। যদিও তিনি উল্লেখ করেছেন যে, আমি সেই বিষয়ে (হিলারির বিরুদ্ধে মামলা না করতে) যে উপসংহারে পৌঁছেছিলাম, সেটা সঠিক ছিল না এই প্রসঙ্গে তিনি দ্বিতীয়বার আমার নাম নিলেন। আমি কংগ্রেসকে জানিয়ে দিলাম যে, আমরা তদন্ত পুনরায় শুরু করে দিয়েছিলাম। কারণ সেটাই কংগ্রেসকে আমার জানানোর কথা ছিল। এরপর কংগ্রেসকে আমি যে চূড়ান্ত চিঠি দিয়ে তদন্ত বন্ধ করার বিষয় জানিয়েছিলাম, সেই প্রসঙ্গে তিনি তৃতীয়বার কোমি নামটি নিলেন। ট্রাম্পের কথায়, আমি পুনরায় হিলারিকে বাঁচিয়ে দিলাম। কিন্তু বিষয়টিকে হিলারি একেবারেই ‘মিসপ্লে’ করলেন।
ট্রাম্প এসব বলছিলাম এমনভাবে যাতে মনে হচ্ছিল তিনি তাঁর কোনো ফেভারিট টিভি শোর কাহিনীর রূপরেখা (প্লটলাইন) বর্ণনা করছিলেন।
(চলবে)