ঢাকা, ৮ মে ২০২৪, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

স্বপ্নের স্বদেশের সন্ধানে

শতবর্ষী অসহযোগ আন্দোলন থেকে মানুষ কি পেয়েছে?

সুবাইল বিন আলম
২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, শুক্রবার
mzamin

মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় হাজিরা না দেয়ার যে আহ্বান জানানো হয়েছে, তাও কিছুটা কার্যকর হবে। বিবিসি বাংলার একটা রিপোর্টে দেখা গিয়েছে যে, যারা জামিনে আছে তারা এই অনুরোধ না মানলেও বাকিরা হাজিরা কমিয়ে দিয়েছে। গান্ধীর অসহযোগে সব থেকে সফল ছিল পণ্য বয়কট। যা এই আন্দোলনে অনুপস্থিত। এত সবকিছুর মধ্যে অহিংস পথে কতোটুকু সফলতা পাবে বিএনপি তা সময়েই দেখা যাবে। অসহযোগের মূল চাওয়া হচ্ছে অহিংস থাকা। কিন্তু বাস্তবতাতে কোনো অসহযোগই শেষে আর অহিংস থাকতে পারে নাই। কিন্তু এখন পর্যন্ত যত অসহযোগ হয়েছে সবগুলাতেই শেষ পর্যন্ত বিজয় এসেছে। মানুষের চাওয়া-পাওয়া পূরণ হয়েছে। এক একটা অসহযোগ আমাদের ইতিহাসের বাকের সাক্ষী।

বিজ্ঞাপন
কিন্তু খেয়াল করে দেখবেন- বিজয় আসলে সেই চাওয়া-পাওয়াগুলো কি পূরণ হয়েছে? আমরা কি এখনো সেই আগের দাবিগুলো নিয়েই আটকে আছি না? ১০০ বছর বা ৫০ বছর আগের যাই বলি না কেন, সময় বদলেছে, কিন্তু আমাদের দিন বদলায়নি। সামনে কি বদলাবে? তা সময়েই বলবে

 

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যতই খারাপ হচ্ছে- আমরা নতুন নতুন কথা শুনছি। আমাদের জেনারেশন ‘জেড’ গ্রুপের মানুষজনের কাছে এগুলা পুরাই অপরিচিত। হবেই বা না কেনো? তারা এখনো জন্মের পর ভোট দিতে পারে নাই, তাদেরকে শেখানো হয়েছে রাজনীতি খারাপ, “আই হেট পলিটিক্স” গ্রুপের মানুষ তারা। কিন্তু ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে গড়ে তোলার দায়িত্ব তো এই জেনারেশনকেই নিতে হবে। আর আই হেট পলিটিক্স না করে বরং জেনেশুনে বুঝে কোনো জিনিসকে হেট করা প্রয়োজন, সেটা জরুরি। আর এর জন্য ইতিহাস জানতে হবে। 
নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি এবং তার সহযোগীরা  অনেকে না জেনেই জিনিস নিয়ে হাসি ঠাট্টা করছে। কিন্তু এই দুই শব্দের ইতিহাস প্রায় শতবর্ষী। 

বৃটিশ আমল: অসহযোগ মানে সরকারকে অসহযোগিতা প্রথম শুরু করেন বৃটিশ শাসনামলে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, যিনি মহাত্মা গান্ধী নামে পরিচিত। ১৯২০ সাল থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত চলেছিল সে আন্দোলন। অসহযোগ আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল বৃটিশদের প্রণয়ন করা রোলাট আইন থেকে যেটি ভারতীয়দের কাছে কালো আইন নামে পরিচিত। রাষ্ট্রদ্রোহী বৃটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে কেউ চক্রান্ত করছে এমন সন্দেহ হলেই তাকে বিনা বিচারে দুই বছর পর্যন্ত জেলে বন্দি করে রাখা যাবে। যদি কারও কাছে বৃটিশ বিরোধী কোনো পত্রিকা পাওয়া যায় তাহলেও তার সন্দেহের তালিকায় পড়ার সুযোগ ছিল। 
এই আইনের প্রতিবাদে শুরু হলো বিক্ষোভ। পুলিশ অ্যারেস্ট করে মূল নেতাদের। চালায় গুলি। সব থেকে ভয়াবহ হয় জালিয়ানওয়ালা বাগে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডায়ার নিরীহ মানুষের সমাবেশে গুলি চালায়। যেখানে সরকারি হিসেবে ২৯১ জন এবং বেসরকারি হিসেবে ৫০০ এরও অধিক মানুষ মারা যায়। 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের পরাজয় এবং ভাঙনের প্রেক্ষাপটে “ইসলামের পবিত্র স্থানসমূহের ওপর খলিফার অভিভাবকত্ব নিয়ে ভারতে আশঙ্কা দেখা দেয়। বৃটিশ এবং তাদের মিত্র দেশগুলো যেন তাদের সিদ্ধান্ত বাতিল করে সুলতানের কর্তৃত্ব ফিরিয়ে দেয় সেই দাবিতে মুসলিম লীগ ও ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির শীর্ষ মুসলিম নেতারা একত্রিত হয়ে খিলাফত কমিটি গঠন করে। শুরু হয় খেলাফত আন্দোলনের। 

১৯২০ সালের মাঝামাঝির দিকে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীও সমর্থন জানিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেন। গান্ধীর মূল ইস্যু রোলাট আইন থেকে শুরু করে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড হলেও এই পদক্ষেপের মধ্যদিয়ে গান্ধী তার অহিংস আন্দোলনে যেমন মুসলিমদের একটা বড় অংশের সমর্থন পেয়ে যান, আবার ততদিনে পরিচিত হয়ে ওঠা কংগ্রেসের গান্ধীর বদৌলতে মুসলিমরাও হিন্দুদের সমর্থন লাভ করেন। ১৯২০ সালের ১লা ও ২রা জুন খিলাফত কমিটি এক সম্মেলন আহ্বান করে যেখানে অসহযোগের প্রস্তাব গৃহীত হয়। অগাস্ট মাসের ১ তারিখ গান্ধীর নেতৃত্বে খিলাফত কমিটি হরতাল ঘোষণা করে। সে সময়ই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলনের। সেই সময়ের সিদ্ধান্ত মতে- সরকার প্রদত্ত সব উপাধি, সামাজিক পদ ও স্থানীয় সরকারের পদ থেকে পদত্যাগ, সরকারি দরবার বা সরকারি সম্মান আয়োজন বর্জন, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বর্জন ও ‘জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান’ স্থাপন, আদালত বর্জন ও সালিশি আদালত প্রতিষ্ঠা, সামরিক-বেসামরিক পদে চাকরি অস্বীকার, বিধান পরিষদের নির্বাচন বর্জন, যারা বর্জন করবে না তাদের ভোট না দেয়া এবং বিদেশি দ্রব্য বর্জন বা বয়কট। তবে অসহযোগ আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে ১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৪ তারিখের একটি ঘটনার মধ্যদিয়ে। ক্ষুব্ধ জনতার একটি দল বিহারের গোরখপুরে চৌরি-চৌরা পুলিশ স্টেশনে আগুন দেয় যেখানে ২৩ জন পুলিশ সদস্য মারা যায়। অহিংস আন্দোলনের নেতা গান্ধী এই সহিংসতার ঘটনা মেনে নিতে পারেননি। ১২ই ফেব্রুয়ারি অসহযোগের সমাপ্তি টানেন তিনি।

১৯৩০ থেকে ১৯৩৪ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ভারতে পুনরায় অহিংস গণআন্দোলন শুরু করেন গান্ধী, যা ছিল অহিংস কর বিরোধী আন্দোলন। লক্ষ লক্ষ দেশবাসী লবণ সত্যাগ্রহের মাধ্যমে বিশ্বের সামনে ভারতের অহিংস আন্দোলনের উজ্জ্বল ভাবমূর্তিটি তুলে ধরেন। এই আন্দোলনের মাধ্যমেই আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা হয়। সত্যাগ্রহ শেষ হয় গৌরবময় সাফল্যমণ্ডিত হয়ে। ভারতীয়দের দাবি মেনে নেয়া হয় এবং কংগ্রেস ভারতীয় জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধির মর্যাদা লাভ করে। ভারত শাসন আইন-১৯৩৫ দেশের মানুষকে প্রথম গণতন্ত্রের স্বাদ দেয় -স্বায়ত্তশাসন। (উইকিপিডিয়া এবং বিবিসি বাংলা)

পাকিস্তান আমল: অসহযোগ আন্দোলন ১৯৭১ সালের মার্চে পাকিস্তানের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণ কর্তৃক পরিচালিত একটি ঐতিহাসিক আন্দোলন। ১লা মার্চে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণার পর জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন শুরু হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ২রা মার্চে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়ে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত চলমান থাকে। মোট ২৫ দিন স্থায়ী হয় এই আন্দোলন।আন্দোলনের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা। এই সময়কালে ক্রমশ পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক প্রশাসনের উপর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রায় অচল হয়ে পড়ে। আন্দোলনের একপর্যায়ে সেনানিবাসের বাইরে পুরো পূর্ব পাকিস্তান কার্যত শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে চলছিল। এই নজিরবিহীন আন্দোলন ঠেকাতে না পেরেই ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানিরা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে- ফলাফল স্বাধীন বাংলাদেশ। (বাংলাপিডিয়া)

বাংলাদেশ আমল: ১৯৯৪ সাল থেকে সে সময়ের বিরোধী দল আওয়ামী লীগ তার জোট সঙ্গীদের নিয়ে সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে মোট ১৭৩ হরতাল করে। ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিলে সেটি বন্ধের দাবিতে ১৪ ও ১৫ই ফেব্রুয়ারি টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকে আওয়ামী লীগ। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ সময় পুলিশের গুলি ও সংঘর্ষে ১৫ জন নিহত হন। এর মধ্যেই নির্বাচন শেষে সরকার গঠন করে বিএনপি। এরপর বিএনপি সরকারের পতনের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলো ৯ই মার্চ থেকে লাগাতার অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে। টানা ২০ দিন এই অসহযোগ কর্মসূচি চলে। ২৮শে মার্চ রাষ্ট্রপতি সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল আনলে ৩০শে মার্চ অসহযোগ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। ওইদিন খালেদা জিয়া পদত্যাগ করেন এবং বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। এই আন্দোলন চলাকালে পুলিশ ও বিএনপি’র সঙ্গে সংঘর্ষে ১৯ জন মারা যান। ১৯৯৪ সাল থেকে কেয়ারটেকার আন্দোলনে নিহত হয় মোট ৮২ জন লোক এবং আহত হয় ৮ সহস্রাধিক। এই আন্দোলনে দেশ পুরো অচল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও এই আন্দোলন আর অহিংস থাকে নাই। ব্যাপক নাসকতার সঙ্গে এখানে সংযোজিত হয়েছিল পথচারীদের দিগম্বরের ঘটনা এবং সরকারি কর্মচারীদের জনতার মঞ্চে যোগদানের মাধ্যমে আইন ভেঙ্গে রাজনীতিতে যোগদান। যার বিচার কখনোই হয় নাই। (প্রথম আলো)

বর্তমান অসহযোগঃ 
হরতাল-অবরোধের টানা কর্মসূচির পর ২০শে ডিসেম্বর অসহযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্যই। তাদের অসহযোগের আওতায় থাকা- ট্যাক্স, খাজনা, ইউটিলিটিসহ প্রদেয় বিল দেয়া বন্ধ করার যে আহ্বান জানানো হয়েছে তা সফল হওয়া এই সময়ে অসম্ভব। যদিও গান্ধীর অসহযোগের মধ্যে এই ধারা ছিল। ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার আহ্বান- যা সরকারের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এই আহ্বানে কর্মকর্তাদের কেউ সাড়া দেয়ার অবস্থানে নেই। ভোট বর্জনের আহ্বানে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরা তো বটেই সাধারণ মানুষও যে ব্যাপকভাবে সাড়া দিতে পারে। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকাতে আগে থেকেই বিজয়ী ঠিক হয়ে গেছে। ব্যাংক লেনদেন থেকে বিরত থাকার আহ্বানও কিছুটা কার্যকরী হতে পারে। দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা এখন এমনিতেই অনেক কম। লোকে টাকা ব্যাংকে রাখার চেয়ে ঘরে বা অন্য খাতে বিনিয়োগ করে রাখতেই পছন্দ করছে। তবে, রেমিট্যান্সের উপর যদি প্রভাব পড়ে তাহলে তা রিজার্ভের উপর চাপ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় হাজিরা না দেয়ার যে আহ্বান জানানো হয়েছে, তাও কিছুটা কার্যকর হবে। বিবিসি বাংলার একটা রিপোর্টে দেখা গিয়েছে যে যারা জামিনে আছে তারা এই অনুরোধ না মানলেও বাকিরা হাজিরা কমিয়ে দিয়েছে। গান্ধীর অসহযোগে সব থেকে সফল ছিল পণ্য বয়কট। যা এই আন্দোলনে অনুপস্থিত। এত সবকিছুর মধ্যে অহিংস পথে কতোটুকু সফলতা পাবে বিএনপি তা সময়েই দেখা যাবে। 

অসহযোগের মূল চাওয়া হচ্ছে অহিংস থাকা। কিন্তু বাস্তবতাতে কোনো অসহযোগই শেষে আর অহিংস থাকতে পারে নাই। কিন্তু এখন পর্যন্ত যত অসহযোগ হয়েছে সবগুলাতেই শেষ পর্যন্ত বিজয় এসেছে। মানুষের চাওয়া-পাওয়া পূরণ হয়েছে। এক একটা অসহযোগ আমাদের ইতিহাসের বাঁকের সাক্ষী। কিন্তু খেয়াল করে দেখবেন- বিজয় আসলে সেই চাওয়া-পাওয়াগুলো কি পূরণ হয়েছে? আমরা কি এখনো সেই আগের দাবিগুলো নিয়েই আটকে আছি না? ১০০ বছর বা ৫০ বছর আগের যাই বলি না কেন, সময় বদলেছে, কিন্তু আমাদের দিন বদলায়নি। সামনে কি বদলাবে? তা সময়েই বলবে।  

লেখক: টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক কলামিস্ট

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status