ঢাকা, ৮ মে ২০২৪, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

স ম য়ে র চালচিত্র

আত্মপরিচয়ের দর্পণে স্থপতি মাজহারুল ইসলাম

তৌফিকুর রাহমান খান
২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, সোমবার
mzamin

ব্যক্তি মাজহারুল ইসলামও তাঁর রাজনীতির গতিপথ পাল্টেছেন। তবে মনে-প্রাণে বাঙালি হয়েও তিনি তাঁর স্থাপত্যে কখনো কোনো প্রতীক বা sign/symbol ব্যবহার থেকে বিরত থেকেছেন খুব সচেতন ভাবে। বাঙালি পরিচয়ের ধারণাকে তিনি স্থাপত্যে এনেছেন বিমূর্তভাবে, সমকালীন স্থাপত্যের ভাষায়। তিনি একদিকে বাঙালি অন্যদিকে বৃহৎ ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল আবার তেমনি তিনি মনে করেন তিনি একজন বিশ্ব-মানব। তাঁর নকশাকৃত চারুকলা ভবনে যেমন প্রকৃতির সঙ্গে দালান মিশে গেছে আবার ভবনটি জলবায়ু সংবেদনশীলও। এখানে উপকরণ ব্যবহারে কোনো আতিশয্য নেই, সব দেশি উপকরণ। নিচ তলাকে ফাঁকা করে দিয়ে এই অঞ্চলের প্যাভিলিয়ন ফর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে। সহজগম্যতার কারণে মনে হয় যেন সবাই এই ভবনে আমন্ত্রিত, সেদিক দিয়ে ভবনটি অনেক ডেমোক্রেটিক। বঙ্গভঙ্গের প্রাক্কালে নির্মাণ করা কলোনিয়াল ভবন কার্জন হলের সঙ্গে তুলনা করলেই এই পার্থক্যটি ধরা পড়ে সহজে। চারুকলা ভবন আজ বাঙালি সংস্কৃতির এক তীর্থস্থানস্বরূপ


বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন শেষ হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই ঢাকা চারুকলা ইনস্টিটিউট ভবনের নকশা প্রণয়নের সুযোগ পাওয়া একজন নবীন স্থপতির জন্য সৌভাগ্যজনক এবং ঐতিহাসিক একটি ঘটনা।

বিজ্ঞাপন
১৯৫৩ সালে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার স্থপতি মাজহারুল ইসলাম করেছেন পরম নিষ্ঠায়।

“ভালোবাসার সাম্পান” বইতে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ১৯৬৫ সালের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে স্থপতি মাজহারুল ইসলামের নকশাকৃত পাবলিক লাইব্রেরি (বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি), চারুকলা ভবন সম্পর্কে লিখেছেন: 
‘ঢাকা শহরের সেকালের একঘেয়ে দালানকোঠার ভেতর এই ভবনগুলোর পারিপাট্য, নতুনত্ব ও স্থাপত্যের চমৎকারিত্ব আমাদের চোখে বিস্ময় ছড়াতো। যে নিখাদ নান্দনিকতা, পারিপাট্য, বুদ্ধিপ্রাধান্য ও ঋজুতা- এক কথায় আধুনিকতা-সেকালের শিল্পের আদর্শ হিসেবে আমাদের অন্বিষ্ট-শেষের কবিতার গদ্যের পর, দু-চারটা বিক্ষিপ্ত উদাহরণ বাদ দিলে, এই দালানগুলোতেই আমরা তখন যেন তার সৌকর্যময় প্রতীক দেখতে পেতাম।’ 

স্থপতি, শিল্পী-সাহিত্যিক সহ অনেকে মাজহারুল ইসলামের কাজ থেকে অনুপ্রেরণা পেলেও স্বয়ং তিনি বলেন যে- তিনি তাঁর কাজের প্রেরণা পেয়েছেন বাংলার মাটিতে। আমেরিকাতে পড়াশোনা করাকালিন সময়ে ট্রপিক্যাল আর্কিটেকচার বা ক্রান্তীয় স্থাপত্য ভাবনা তাঁকে প্রভাবিত করে থাকবে নিশ্চয়ই। স্থপতি কাজী খালিদ আশরাফ সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের স্থপতি: সংলাপে মাজহারুল ইসলাম’ বইটি তাঁকে বোঝার ব্যাপারে অনেক সহায়ক। কথোপকথনের এক পর্যায়ে মাজহারুল ইসলাম বলেন: 
‘Crudely বলা যায়, বারবার খুঁজতে চেষ্টা করেছি নিজের মাটি।’ তিনি আরও বলেন: ‘আমার রক্তে থাকতে পারে ২% চাইনিজ, ৪% পর্তুগিজ, ৫% মাদ্রাজি, ৬% কালো, ৭% অমুক... ও dont care, ও give a dam। আমার আসল পরিচয় আমি বাঙালি। আমার এত সব আছে বলেই আমি enriched, আমি pure কোন blood-এর নই।’

রাজনৈতিক চিন্তার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন মার্ক্সবাদী। প্রশ্ন জাগতেই পারে একজন মার্ক্সবাদী কীভাবে জাতীয়তাবাদী হয়ে ওঠেন যেখানে তাঁর যুবা বয়সে বাঙালিকে তিনি দেখেছেন ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্যদিয়ে দেশ ভেঙে ফেলতে? এর কারণ সম্ভবত কমিউনিস্ট আন্দোলন চীন-সোভিয়েত শিবিরে ভাগ হয়ে যাওয়া, বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের প্রভাব ইত্যাদি। তবে প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিক কামরুদ্দীন আহমদ তাঁর “বাংলার এক মধ্যবিত্তের আত্মকাহিনী” বইতে চমকপ্রদ আরেকটি কারণ উল্লেখ করেন সে সময়কার মধ্যবিত্তের মননে বাঙালি জাতীয়তাবাদ উন্মেষের। 

১৯৫৩ সালে যুক্তফ্রন্টের ম্যানিফেস্টো তৈরি হলে তার জোর প্রচারণার জন্য যে কৌশল নেয়া হয় তার প্রেক্ষিতে তিনি বলেন-‘২১ দফা তৈরি করার পর স্ট্র্যাটেজি হিসেবে প্রতিপক্ষ দাঁড় করানোর প্রয়োজন। ১৯৪৫-৪৬ সালে হিন্দু ও মুসলমান একে অন্যের প্রতিপক্ষ ছিল। এবার সেটা নেই। সুতরাং প্রতিপক্ষ পশ্চিম পাকিস্তান এবং পাঞ্জাব। সেই পুরাতন মধ্যবিত্তের সংগ্রাম।’ 
বাঙালি বৃটিশের সংস্পর্শে সবার আগে এসে তাকে অনুকরণ না করে আত্তীকরণ করেছে, শিল্প সাহিত্যে প্রভূত উন্নতি করেছে, রেনেসাঁস ঘটিয়েছে। আর পাঞ্জাব বৃটিশের দখলে এসেছে সবার শেষে। পাঞ্জাবিরা কেবল বৃটিশকে অনুকরণ করেছে, মহান সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারেনি। ইত্যাদি যুক্তি দিয়ে বাঙালি-পাঞ্জাবি পার্থক্য নির্ধারণ করা হয়। 

অর্থাৎ বিশ শতকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রেরণার একটা উৎসমুখ ধরা হয় বেঙ্গল রেনেসাঁস।
সেই উৎস মুখ সম্পর্কে মাজহারুল ইসলামের মধ্যেও আবেগ ও দুর্বলতা ছিল। তিনি বলেন-‘এখানে আমাদের দেশে রেনেসাঁস আন্দোলন যাঁরা শুরু করেছিলেন তাঁদের মূল উৎসটা ছিল অসম্ভব রকম দেশকে ভালোবাসার একটা আবেগ।’ দু’শ বছরের কলোনিয়াল বিচ্যুতি সম্পর্কে তিনি সজাগ থাকলেও বেঙ্গল রেনেসাঁসের সাম্প্রদায়িক দিকটি হয়তোবা তাঁর নজর এড়িয়ে গেছে। 
অধুনা বিখ্যাত ভারতবিদ রিচার্ড এম ইটন বলেন- বেঙ্গল রেনেসাঁস ছিল একটি ‘কলোনিয়াল প্রজেক্ট’। ইউরোপ তাঁর ইতিহাস লিখতে গিয়ে ক্লাসিক্যাল যুগ, অন্ধকার যুগ, রেনেসাঁস না নবজাগরণ এভাবে ভাগ করেছিল। অথচ ইউরোপে যখন অন্ধকার যুগ, মুসলমানদের তখন স্বর্ণযুগ। তারা ইতিহাস থেকে মুসলমানদের অবদানকে অস্বীকার করার প্রবণতা দেখায়। ভারতীয় ইতিহাসের মধ্যেও তারা সেই ইউরোপীয়  ইতিহাসের চিন্তাকে প্রতিস্থাপন করে এবং ভারতে ইসলামিক শাসনকে তারা অন্ধকার যুগ হিসেবে দেখাতে চায়। ভারতীয়রা ইংরেজের সংস্পর্শে এসে আলোকিত হয়েছে এই ধারণা প্রচার ছিল অন্তর্নিহিত কারণ। কিন্তু এটা করতে গিয়ে হিন্দু-মুসলিম বিভেদের জন্ম দেয় তারা। বাংলা ভাষা থেকে আরবি, ফারসি শব্দ বাদ দিয়ে যথেচ্ছভাবে সংস্কৃত শব্দ আমদানি করে। ইটন এই ভ্রান্ত ধারণা ভেঙে দিয়ে দেখান সংস্কৃত ও ফার্সি ভাষা, সাহিত্য তথা সংস্কৃতির মেলবন্ধনে ভারতে এক বৈচিত্র্যময় সভ্যতার উদ্ভব হয়।

এদিকে ‘India in the Persianate Age ১০০০-১৭৬৫’ বইতে বাংলা ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ উন্মেষ সম্পর্কে ইটন চমকপ্রদ আলোচনার সূত্রপাত করেন। তাঁর মতে-সুলতানি আমলে দিল্লি থেকে যখনই সুবেদারগণ বাংলায় শাসক হয়ে এসেছেন তাদের মধ্যে দিল্লির কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন সালতানাত প্রতিষ্ঠার প্রবণতা দেখা গেছে। দিল্লিও বারবার সামরিক আক্রমণ চালিয়ে তাদেরকে নিজের করায়ত্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। চতুর্দশ শতকে সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ কৌশলগত কারণে প্রবর্তন করেন শাহ্-ই-বাংলা, এটাকে বলা যেতে পারে বাংলাকে কেন্দ্র করে প্রথম সার্বভৌম প্রশাসনিক কাঠামো। কেন্দ্রের আক্রমণ প্রতিহত করতে বাংলার জনগণকে সম্পৃক্ত ও ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য ভাষাভিত্তিক এক জাতীয়তাবাদের বুনিয়াদ গড়ে তোলেন তিনি। হিন্দু অমাত্যবর্গও রাজকার্যের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হন। শাসকগণ নিজেদের ভাষা প্রবর্তন না করে বাংলাকে করেন দাপ্তরিক ভাষা। রামায়ণ, মহাভারত এবং আরবি কিতাব অনূদিত হয় বাংলায়। আরবি, ফারসি ভাষার মিশেলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিকশিত হয়। স্থাপত্যেও বাংলার নিজস্ব দোচালা ঘরের আদলে ভবন নির্মাণ করা হয় জাতিগত পরিচয়কে স্থায়ী রূপ দেয়ার প্রয়োজনে। সুলতানরা দীর্ঘ দুইশত বছর স্বাধীনভাবে বাংলা শাসন করেন। 

এর কয়েক শতাব্দী পর ১৯০৫ সালে বঙ্গ ভঙ্গের প্রাক্কালে লর্ড কার্জন পাবলিসিটি ট্যুরে ঢাকা আসেন। তিনি ঢাকার অভিজাত মুসলমানদের  অনুপ্রাণিত করেন সুলতানি আমলে তাদের গৌরবময় স্বাধীন মুসলিম শাসনের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে যেন তারা ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ’ গঠনের পক্ষে থাকে। মজার বিষয় কার্জন আবার ময়মনসিংহে গিয়ে পূর্ব বাংলার হিন্দু জমিদারদের ঐ একই বিষয়ে অনুপ্রাণিত করেন এই বলে যে, পশ্চিম বঙ্গের হিন্দুদের থেকে তারা আলাদা, কারণ ওরা বাঙালি আর এরা বাঙাল। ইতিহাসবিদ ইফতেখার ইকবাল তাঁর ‘Space Between Nation and Empire’-নিবন্ধে বলছেন, উনিশ শতকের শেষ দিকে যখন আমেরিকা ও রাশিয়া সহ অপরাপর বিশ্ব পরাশক্তিগুলো চীনের বাজার দখল করার জন্য প্রতিযোগিতায় নেমে যায় তখন বৃটিশরাজ চিন্তা করে ঢাকাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে এবং স্থল ও নৌ-পথে বার্মা ও ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে চীনের সঙ্গে কীভাবে বাণিজ্য বাড়ানো যায়। সেই কারণেই এই নতুন প্রদেশ সৃষ্টি। ১৯০৬ থেকে ১৯০৭ সালে বৃটিশ ভারতে যে বাণিজ্য হয় তার একটা বিপুল অংশ আসে পূর্ববাংলা ও আসাম প্রদেশ থেকে। বঙ্গভঙ্গ রদ হয়ে গেলে এই লোকসানের কারণে পূর্ববাংলার মুসলমানরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। বঞ্চনা থেকে জন্ম নেয় এক স্বাধিকারের বোধ।

১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গ মূলত অবাঙালি মুসলমানদের নিয়ে গড়া ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ’ এমন কি পশ্চিম বঙ্গের মুসলমান জনগণও সমর্থন করেনি। উপরন্তু ১৯০৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া মুসলিম এডুকেশন কনফারেন্সে মুসলমানদের শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে উর্দু, ফার্সি প্রস্তাবিত হলে পূর্ব বাংলার সচেতন বাঙালিরা প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে এবং বাঙালি মুসলমানদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য বাংলা ভাষার মাধ্যমে শিক্ষার গুরুত্ব ব্যক্ত করে। এমন প্রেক্ষিতে পূর্ব বাংলার মুসলমান বাঙালিরা তাদের আত্মপরিচয়ের প্রশ্নে নতুন উপলব্ধির সম্মুখীন হয়। একদিকে ভারতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে কোলকাতা কেন্দ্রিক, মূলত হিন্দু বাঙালি নেতৃত্বে সংঘটিত স্বদেশী আন্দোলন থেকে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য মুসলিম লীগের ছত্রছায়ায় থাকার আবশ্যিকতা; অপর দিকে অবাঙালি মুসলিম লীগ নেতৃত্বের চাপিয়ে দেয়া উর্দু-ফারসির বিরুদ্ধে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার তাগিদে নিজেদের বাঙালি পরিচয়কে সমুন্নত রাখার এক অনিবার্য প্রয়োজনে আত্মপরিচয়ের দ্বন্দ্বের আবর্তে তারা নিপতিত হয়। তারা সচেতনভাবেই জাতিগত এবং ধর্মীয় উভয় পরিচয়কে ধারণ করে অগ্রসর হওয়ার পথ বেছে নেয়। এ অঞ্চলের মানুষের আত্মপরিচয় অন্বেষণের ক্ষেত্রে যার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। মনে-প্রাণে অসাম্প্রদায়িক মাজহারুল ইসলামের জন্মেরও অনেক আগেই সাম্প্রদায়িকতা এ ভূখণ্ডের অনেক কিছু বদলে দিয়েছে। অথচ ইটন মনে করেন বৃটিশরা আসার আগে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে রাষ্ট্রকে বিভাজনের ধারণা ভারতে প্রচলিত ছিল না।

১৯০৫ থেকে ১৯৪৭ হয়ে ১৯৭১ পর্যন্ত পূর্ববাংলার জনগণ স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে আত্মপরিচয়ের দর্পণে নিজের প্রতিচ্ছবি পরিবর্তিত হতে দেখেছে বারবার। ব্যক্তি মাজহারুল ইসলামও তাঁর রাজনীতির গতিপথ পাল্টেছেন। তবে মনে-প্রাণে বাঙালি হয়েও তিনি তাঁর স্থাপত্যে কখনো কোনো প্রতীক বা sign/symbol ব্যবহার থেকে বিরত থেকেছেন খুব সচেতন ভাবে। বাঙালি পরিচয়ের ধারণাকে তিনি স্থাপত্যে এনেছেন বিমূর্তভাবে, সমকালীন স্থাপত্যের ভাষায়। তিনি একদিকে বাঙালি অন্যদিকে বৃহৎ ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল আবার তেমনি তিনি মনে করেন তিনি একজন বিশ্ব-মানব। তাঁর নকশাকৃত চারুকলা ভবনে যেমন প্রকৃতির সঙ্গে দালান মিশে গেছে আবার ভবনটি জলবায়ু সংবেদনশীলও। এখানে উপকরণ ব্যবহারে কোনো আতিশয্য নেই, সব দেশি উপকরণ। নিচ তলাকে ফাঁকা করে দিয়ে এই অঞ্চলের প্যাভিলিয়ন ফর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে। সহজগম্যতার কারণে মনে হয় যেন সবাই এই ভবনে আমন্ত্রিত, সেদিক দিয়ে ভবনটি অনেক ডেমোক্রেটিক। বঙ্গভঙ্গের প্রাক্কালে নির্মাণ করা কলোনিয়াল ভবন কার্জন হলের সঙ্গে তুলনা করলেই এই পার্থক্যটি ধরা পড়ে সহজে। চারুকলা ভবন আজ বাঙালি সংস্কৃতির এক তীর্থস্থানস্বরূপ।
স্থপতি মাজহারুল ইসলামের জন্ম শতবার্ষিকীতে এটুকু বলতে পারি তাঁর স্থাপত্যকর্মগুলো অনাগত প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে আরও অনেক কাল। 

লেখক: স্থপতি। সমন্বয়কারী-ইন্টেরিয়র ডিজাইন ওয়ার্কশপ,
আলিয়ান্স ফ্রসেইজ দ্য ঢাকা।

 

 

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status