ঢাকা, ৯ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

সময় অসময়

মানুষের জীবন কী এতই ঠুনকো?

রেজানুর রহমান
২১ ডিসেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার
mzamin

ট্রেনে আগুন দিয়েছে। ওরা কারা? ওরা কি মানুষ? মানুষ হলে তারা কীভাবে মানুষকে পুড়িয়ে মারে? ওরা কি ভাড়াটে গুণ্ডা? যদি তাই হয় কে তাদের ভাড়া করলো? কে তাদের নির্দেশ দিয়েছে ট্রেনে আগুন দিতে? পৃথিবীর ধনী-গরিব সব দেশেই ট্রেন একমাত্র জনপ্রিয় ও সাশ্রয়ী বাহন। অতি দরিদ্র, সাধারন মানুষ মূলতঃ ট্রেনেই যাতায়াত করে। এই মানুষগুলোই ভোট দিয়ে নেতা বানায়। অথচ তাদেরকেই কিনা পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। এর জবাব কী? কার কাছে জবাব খুঁজবো। সরকার বলছে এটা বিরোধীদলের কাজ। বিরোধী দল দায় নিতে নারাজ। এখানেই একটা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। হরতালের দিনে ট্রেনে মানুষ পুড়লো


পুড়ে গেল অসহায় মানুষ।

বিজ্ঞাপন
ট্রেনে ঘুমিয়েছিলেন। ঘুম আর ভাঙলো না। জীবন গেল আগুনের তাপে। কী মর্মান্তিক, কী নিষ্ঠুর সময়ের বলি হলেন ৪ জন ট্রেনযাত্রী। নিহতদের তালিকায় একজন মা ও শিশুও রয়েছেন। হয়তো মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে ঘুমিয়েছিল ফুলের মতো নিষ্পাপ শিশুটি। আগুন সন্ত্রাসের বলি হলো। টেলিভিশনের খবরে রেলগাড়িতে নাশকতার এই খবর দেখে একজন মন্তব্য করলেন, রাজনীতির ক্রিকেট খেলায় ৪ উইকেটের পতন হলো। আরও যে কতো উইকেটের পতন ঘটবে- তা সৃষ্টিকর্তাই জানেন। তার কথা শুনে পাশেই দণ্ডায়মান অন্য একজন বললেন, সৃষ্টিকর্তার চেয়ে রাজনীতিবিদদের প্রশ্ন করুন। তারাই ভালো বলতে পারবেন কবে কোথায় আর কতো প্রাণ ঝরবে? এই দেশের জন্য আর কতো রক্ত দিতে হবে? তার কথা শুনে পাশেই দাঁড়ানো অন্য একজন ক্ষুব্ধ ভঙ্গিতে বললেন, রাজনীতি কী আর প্রকৃত রাজনীতিবিদদের দখলে আছে? রাজনীতির মাঠে ব্যবসায়ীরাই তো এখন তারকা। তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন... তর্কের ডালপালা বাড়তেই থাকলো। রেলে যারা নাশকতা করে তারা কী আদৌ মানুষ? এই যে ৪টি প্রাণ ঝরে গেল এজন্য দায় কার? একটি রাজনৈতিক দল হরতাল ডেকেছে। হরতালে ট্রেনে আগুন দেয়া হলো। মানুষ পুড়ে গেল। এর দায় কী রাজনৈতিক দলটির নয়? এমন আলোচনা শুনলাম একটি চায়ের দোকানের সামনে বেঞ্চে বসা একদল সাধারণ মানুষের মধ্যে। তারা ক্ষুব্ধ। হরতাল ডেকে ঘরে বসে থাকে। এদিকে মানুষ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এমন রাজনৈতিক কর্মসূচি চাই না- একজন মন্তব্য করতেই কথা কেড়ে নেয় অন্যজন- আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদের কী মূল্য আছে বলেন? কেউ নির্বাচন করবে। আবার কেউ নির্বাচন প্রতিহত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মাঝখানে আমরা সাধারণ মানুষ ভয়ে আছি। আতঙ্কে আছি। সকালটা সুন্দর গেল। সন্ধ্যাটা সুন্দর থাকবে তো? 

চায়ের দোকানের সামনে সাধারণ মানুষের বিতর্ক চলতেই থাকে। মনে হচ্ছিল মিনি পার্লামেন্ট। এক একজন তুখোর বক্তা। দূরে দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনছিলাম। হঠাৎ মোবাইলে এক বন্ধুর ফোন এলো- ওরা ট্রেনে আগুন দিয়েছে। চারজন অসহায় মানুষ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এই দেশে মানুষ কি এতই সস্তা- যে কেউ তাকে পুড়িয়ে ফেলতে পারে?

বন্ধু ফোনে তার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতেই থাকে। আমি ‘ব্যস্ত আছি’ বলে ফোন কেটে দেই। তবে বন্ধুর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া কান থেকে সরে না। ওরা ট্রেনে আগুন দিয়েছে। ওরা কারা? ওরা কি মানুষ? মানুষ হলে তারা কীভাবে মানুষকে পুড়িয়ে মারে? ওরা কি ভাড়াটে গুণ্ডা? যদি তাই হয় কে তাদের ভাড়া করলো? কে তাদের নির্দেশ দিয়েছে ট্রেনে আগুন দিতে? পৃথিবীর ধনী-গরিব সব দেশেই ট্রেন একমাত্র জনপ্রিয় ও সাশ্রয়ী বাহন। অতি দরিদ্র, সাধারণ মানুষ মূলত ট্রেনেই যাতায়াত করে। এই মানুষগুলোই ভোট দিয়ে নেতা বানায়। অথচ তাদেরকেই কিনা পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। এর জবাব কী? কার কাছে জবাব খুঁজবো। সরকার বলছে এটা বিরোধী দলের কাজ। বিরোধী দল দায় নিতে নারাজ। এখানেই একটা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। হরতালের দিনে ট্রেনে মানুষ পুড়লো। যারা হরতাল আহ্বান করেছেন তারা কী আদৌ দায় এড়াতে পারেন? স্বল্প সময়ের ব্যবধানে রেল পথে নাশকতার এটি তৃতীয় ঘটনা। এর আগে জয়দেবপুরের অদূরে রেললাইন কেটে ফেলা হয়। একজনের মৃত্যু হয়েছে। গণমাধ্যমেই সংবাদ বেরিয়েছে গাজীপুরের ঘটনায় ঢাকা থেকে রেললাইন কাটার জন্য মানুষ ভাড়া করা হয়েছে। কারা তাদেরকে ভাড়া করেছিল এই প্রশ্নের কোনো উত্তর মেলেনি। নীলফামারীর ডোমার এলাকায় রেললাইন তুলে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছিল দুষ্কৃতকারীরা। এলাকার লোকজন দেখে ফেলায় তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। এর আগে ১৬ই নভেম্বর টাঙ্গাইলে একটি কমিউটার ট্রেনে আগুন দেয়া হয়। ১৯শে নভেম্বর জামালপুরের সরিষাবাড়ী এলাকায় যমুনা এক্সপ্রেসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ঢাকায় তেজগাঁও রেলস্টেশনের পাশে ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনায় হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। 

অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য বিরোধী দল হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দিচ্ছে। ট্রেনে আগুন দেয়া যদি এই কর্মসূচির অংশ হয় তাহলে তা হবে দেশ বিরোধী কর্মকান্ড। একটি দেশে জালের মতো ছড়িয়ে থাকে রেললাইন। কাজেই নাশকতাকারীদের ঠেকানো সহজ কাজ নয়। অনেকে রেললাইনে নাশকতার ব্যাপারে বিরোধী দলের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, আগুনসন্ত্রাস প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না। ধরা যাক গণতন্ত্র রক্ষার জন্য বিরোধী দল রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। আগুন সন্ত্রাস কী গণতন্ত্র রক্ষার কর্মসূচি হতে পারে? যারা আজ সরকারকে হটানোর জন্য জ্বালাও- পোড়াও করছেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করছেন ভবিষ্যতে তারা যদি ক্ষমতায় আসেন তাহলে তো পুড়ে যাওয়া রাষ্ট্রীয় সম্পদ তাদেরকেই গড়ে তুলতে হবে। তখন কী দেশের অসহায় জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে তারা সেটা করবেন? হায়রে জনগণ! 

তেজগাঁও রেলস্টেশনে ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে রেলমন্ত্রী বলেছেন- ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে রেলপথে নাশকতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রেলমন্ত্রী বলেছেন- চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার অভিমুখী নতুন রেলপথের অনেক স্থানে নাটবল্টু খুলে নেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। যা মোটেই কাক্সিক্ষত নয়। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে দেশ ধ্বংস করায় উদ্যোগ প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী।

আবারো বলি রেলগাড়ি দেশের সবচেয়ে সাশ্রয়ী গণপরিবহন। সাধারণ মানুষ রেলে যাতায়াত করেন। কাজেই প্রতিবাদের কর্মসূচিতে রেলকে লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়।

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status