ঢাকা, ২০ মে ২০২৪, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

জুয়া ও হুন্ডির কারণে মুদ্রা পাচার বেড়েছে: অর্থ প্রতিমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার
১০ মে ২০২৪, শুক্রবার

জুয়া ও হুন্ডির কারণে মুদ্রা পাচার বেড়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াশিকা আয়েশা খান। তিনি আরও জানান, এর ফলে সরকার প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে এবং অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই মুদ্রা পাচার বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। গতকাল সরকারি দলের সংসদ সদস্য এম, আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ব্যাপক প্রসারের কারণে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) ও ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে লেনদেনের মাত্রা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রযুক্তিগত এই উন্নয়নের সুবিধা কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু চক্র অনলাইন জুয়া-বেটিং, গেমিং, ফরেক্স, ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং ও হুন্ডি প্রভৃতি অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন দেশ হতে মুদ্রা পাচার বেড়ে যাচ্ছে, অপরদিকে দেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনলাইন জুয়া, বেটিং ও হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার রোধসহ সকল ধরনের অর্থ পাচার রোধকল্পে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট (বিএফআইইউ) ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা একযোগে কাজ করছে। এর সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৫৮৬টি ব্যক্তিগত এমএফএস হিসাব স্থগিত করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
এ ছাড়াও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত এ সংক্রান্ত অভিযোগে ৫ হাজার ৭৬৬ জন এজেন্টের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাদের তথ্য সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া অবৈধ হুন্ডি, গেমিং, বেটিং, ক্রিপ্টোকারেন্সির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৬৬৬টি এমএফএস এজেন্ট হিসাবের লেনদেন ব্লক করা হয়েছে। বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি প্রাইভেট ব্যাংক অন্য কয়েকটি সফল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তার মধ্যে অন্যতম ছিল ন্যাশনাল ব্যাংক একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল তখন হঠাৎ করে দেখলাম এর মালিকানা পরিবর্তন হয়ে গেল। তাহলে এই ব্যাংকটা একীভূত হওয়া থেকে কি সরে এসেছে? জবাবে প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খানম জানান, একাদশ সংসদে আমরা ব্যাংক মার্জার রিকুইজশিন একটা আ্যক্ট পাস করেছিলাম। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে একটা গাইডলাইনও আসে, সেটা হলো কোনো ব্যাংক দুর্বল হলে, তা অন্য সবল ব্যাংকের সঙ্গে মার্জার করা যাবে। এজন্য কি কি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে সে বিষয়ে একটা গাইডলাইনও দেয়া হয়। সেই গাইডলাইন অনুযায়ী কোনো ব্যাংক যদি মনে করে তারা অন্য ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ হবে, তাহলে সেখানকার শেয়ার হোল্ডার, এজিএম থেকে শুরু করে সবকিছুতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে বিরোধী দলের চিফ হুইপ বলেছেন তাদের ব্যাংকের নতুন মালিকানা চেঞ্জ হয়েছে তা ঠিক নয়, তাদের বোর্ড চেঞ্জ হয়েছে। বিষয়টি আমার কাছে স্পষ্ট নয়। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন প্রশ্ন করেন বর্তমানে ডলার সংকট চরমে, এর বড় কারণ মানি লন্ডারিং। দেশে কোটি কোটি টাকা অপ্রদর্শিত অর্থ রয়েছে, তা প্রদর্শন না করতে পারায় বিদেশে পাচার হচ্ছে। এটা দূর করার জন্য এবারের বাজেটে কি অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে, যদিও এর বিধান রয়েছে। বিগত কয়েক বছরের বাজেটে এটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা ছিল, এটি ডলারে রূপান্তরিত করতে পারলে ডলার সংকট কিছুটা কমে যেতে পারে। এটি আগামী বাজেটে সুযোগ দেয়া হবে কিনা? জবাবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ মুহূর্তে অপ্রদর্শিত আয় বা অর্থকে প্রদর্শন করা হবে কিনা, এবারের বাজেটে তা আছে কিনা আমি বলতে পারছি না, বলা সম্ভব নয়। কেননা এখন বাজেট প্রম্ভাবনা আসবে, সেটি এখন ফাইনালাইজ্‌ড হচ্ছে। তবে যদি বিগত বাজেটে এ ধরনের প্রস্তাব থাকে তাহলে এবারে যে বাজেট আসছে তাতে অপ্রদর্শিত অর্থ প্রর্শনের সুযোগ থাকার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের করা প্রশ্নের জবাবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল ও চাঙা করতে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থনীতিকে গতিশীল করার লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে সরকারের বাজেটের আকার ছিল ৬৪ হাজার কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকায়। আগামী অর্থবছরেও বিনিয়োগ, উৎপাদনমুখী ও প্রবৃদ্ধি সহায়ক বাজেট ঘোষণা করা হবে। তিনি জানান, সরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি সহায়ক খাতসমূহকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। বিশেষ করে, ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো খাতসমূহ যেমন বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন, যোগাযোগ, বন্দর উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আইসিটি খাতকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে। বিগত ১৫ বছরে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল ও চাঙা করার অন্যতম উপায় হলো উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ। সরকার ধারাবাহিকভাবে উন্নয়নখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি’র মোট বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা যা ৯.৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা বলে জানান তিনি। একই প্রশ্নের জবাবে ওয়াশিকা আয়েশা খান জানান, শ্রমবাজার সম্প্রসারণ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে আইনি কাঠামো যুগোপযোগী করণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে কার্যকর অংশগ্রহণ ও দেশের বর্ধিত শিল্প ও সেবাখাতের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শ্রমবাজারের চাহিদাভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রেমিট্যান্স প্রেরণে বর্ধিত ব্যয় লাঘব করা এবং বৈধপথে অর্থ প্রেরণ উৎসাহিত করতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত অর্থের উপর ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছিল, যা বিগত পহেলা জানুয়ারি ২০২২ থেকে বর্ধিত করে ২.৫ শতাংশ করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী জানান, রাজস্ব আয়ে গতি আনতে করনীতি এবং রাজস্ব প্রশাসনে যুগপৎ সংস্কার সাধন করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ জিডিপি’র শতাংশে ২০২২-২৩ অর্থবছরের পর্যায় থেকে ১.৭ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভর্তুকি যৌক্তিকীকরণের পাশাপাশি সরকারি ঋণের ব্যয় হ্রাস ও ঋণ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা হবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গৃহীত মোট ঋণের এক চতুর্থাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

 

পাঠকের মতামত

তো না বেড়ে কি করবে? জিনিসের দাম বেড়েছে ১০-১৫ গুণ। টাকাকে রেখেছেন সুইজারল্যান্ডের মুদ্রার সাথে। এই হুন্ডিকে উৎসাহিত করছেন শাসক গোষ্টি। কারণ এদের মানুষেরাই হুন্ডি কারবারে লিপ্ত আছে।

গর্জন
১০ মে ২০২৪, শুক্রবার, ১:৩৮ অপরাহ্ন

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status