ঢাকা, ২০ মে ২০২৪, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

গোয়াইনঘাট যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে মহসিনের হরিলুট

গোয়াইনঘাট (সিলেট) প্রতিনিধি
৮ মে ২০২৪, বুধবার
mzamin

গোয়াইনঘাট উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে বছরের পর বছর জুড়ে চলে আসছে সরকারি টাকা লুটের মহোৎসব। এই অফিসে লুটপাট, অনিয়মই যেন নিয়ম। ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি, যুবঋণ, দারিদ্র্যবিমোচন ও ঋণ, প্রশিক্ষণ, মনিটরিং ও যুবঋণ, হাঁস-মুরগি পালন প্রশিক্ষণসহ অফিসের জন্য বরাদ্দ এমন কোনো খাত নেই যেখান থেকে টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেনি। কাগজে-কলমে প্রশিক্ষণ, ঋণ প্রদান আর বরাদ্দের খবর থাকলেও বাস্তবের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। একজনের নাম অপরজনের ঠিকানা মোবাইল নং ব্যবহার করে তৈরি করা তালিকায়  দেখিয়ে বছরের পর বছর থেকে এ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে আসছে। সরকারের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছেন কর্মকর্তারা। ভুয়া তালিকায় উপকারভোগীদের নামে বছরের পর বছর জুড়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। গোয়াইনঘাটের সাবেক উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার আজহারুল কবির, সহকারী যুব উন্নয়ন অফিসার মো. মহসিন একে-অপরের সঙ্গে আঁতাত করে গোয়াইনঘাট থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। সরকারি টাকা আত্মসাৎ করে কেউ ঢাকায় বহুতল ভবন, নিজ, স্ত্রী ও অন্যান্য নিকট আত্মীয়দের নামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। আজহারুল কবির অন্যত্র বদলি হওয়ার পর স্ত্রী সন্তানকে বিদেশে পাঠিয়ে তিনিও লাপাত্তা। 

তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হলেও সহকারী যুব উন্নয়ন অফিসার মো. মহসিন রয়েছেন স্বপদে বহাল।

বিজ্ঞাপন
তার বাড়ি ও স্থায়ী ঠিকানা  কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলায় হলেও চাকরি নিয়েছেন সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরের নাগরিক হিসেবে। অফিসের অনুমতি না নিয়ে তিনি তার জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা পরিবর্তন করে গোয়াইনঘাটে তার স্থায়ী ঠিকানা অন্তর্ভুক্ত করেছেন। একই কর্মস্থলে কর্মরত আছেন ২১ বছর ধরে। উপজেলার যুবকদের প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সরকারের বরাদ্দের সকল টাকা নিজ হাতে করা নামে-বেনামে তালিকার মাধ্যমে বছরের পর বছর থেকে লুটপাট করে আসছেন। এসব তালিকার নাম, ঠিকানা এক হলে মোবাইল নম্বর আরেকজনের। উপকারভোগী এসব তালিকার ব্যক্তিদের মোবাইলফোনে কথা হলে তারা  কোনো প্রশিক্ষণ ভাতা, প্রণোদনা কিংবা কোনো যুবঋণ পাননি। যুবঋণ প্রদানেও তিনি ঘুষের বিনিময়ে তার পছন্দসই সিন্ডিকেটের ও কাছের লোকদের ঋণ দিয়েছেন। সরকারি কর্মচারীদের এসব ঋণ প্রদানের নিয়ম না থাকলেও সরকারি কর্মচারী, এনজিও কর্মীসহ একই পরিবারের অগণিত ব্যক্তিকে যুবঋণ দেয়ার নজির গড়েছেন শুধু নিজের ঘুষ বাণিজ্যের স্বার্থে। 

সরকারি অর্থ লুটের পাশাপাশি তিনি তার ইচ্ছামতো অফিস চালিয়ে আসছেন। এক্ষেত্রে তিনি নিয়মিত অফিস ফাঁকি দিয়ে তার খেয়াল-খুশিমতো চলতেন, মাসের সিংহভাগ সময় গড় অনুপস্থিত থাকলেও হাজিরা খাতায় নিয়মিত তার উপস্থিতি লিখে রাখতেন। সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মহসিনের অনিয়ম-দুর্নীতির একাধিক প্রমাণাদি ও তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সমূহের কপি মানবজমিন’র হাতে রয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসে তার করে রাখার অনিয়ম দুর্নীতির এমন ফিরিস্তির চিত্র দেখে হতবাক উপজেলায় যোগদান করা উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার মোঃ জহিরুল ইসলামও। বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র ও উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিস কর্তৃক উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে প্রেরিত পত্রে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার জন্য কৈফিয়ত তলব, কার্যক্রমের মাসিক অগ্রগতির সংক্ষিপ্ত ১২ কলামের পরিবারভিত্তিক ঋণের সঠিক রিপোর্ট দাখিল না করার জন্য কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন। 

অফিসের গত ২০ মার্চ  কর্মকর্তা/কর্মচারী কর্তৃক ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির তথ্যাদি গোপন রাখার বিষয়ে মহাপরিচালক (গ্রড)-১ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বরাবরে প্রেরিত অনুসন্ধান পরবর্তী অভিযোগ পত্রেও সহকারি যুব উন্নয়ন অফিসার মো. মহসিন কর্তৃক ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির যাবতীয় অনিয়ম, লুটপাট, জড়িত অপরাপর অফিসার, ঋণ প্রদানসহ যাবতীয় অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে। অফিস সহকারী জামাল উদ্দিন মারফতে অত্র অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির তথ্যাদি গোপন রাখা ও অডিট আপত্তিতে অনিয়ম ধরা পড়ায় ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি পুড়িয়ে ফেলার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী যুব উন্নয়ন অফিসার মো. মহসিন তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি অস্বীকার করলেও উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার জহিরুল ইসলাম বলেন, গোয়াইনঘাটের উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসের সহকারী যুব উন্নয়ন অফিসার মো. মহসিন কর্তৃক অফিসের কার্যক্রমে প্রতিটি স্তরে অনিয়ম, অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। বরাদ্দ, প্রশিক্ষণ, আয়- ব্যয় কোনো স্তরেই কাজের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। বিষয়টি আমি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে প্রেরণ করেছি। ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির তথ্যাদি গোপন রাখা, গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, নথিসহ জরুরি কাগজ-পত্রাদি আগুনে পুড়িয়ে ফেলা, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির যাবতীয় অনিয়ম, লুটপাট, জড়িত অপরাপর অফিসার, কর্মচারী, প্রশিক্ষণ, ভাতা প্রদান, ঋণ প্রদানসহ তার যাবতীয় অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরেছি। তার বিষয়ে শীর্ষ পর্যায় থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে বলেও তিনি অবহিত করেন।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status