বাংলারজমিন
বিদ্যুৎ নেই, জেনারেটর থাকে বন্ধ
শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাঁসফাঁস অবস্থা
শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
৭ মে ২০২৪, মঙ্গলবারঘড়ির কাঁটা রাত সাড়ে ৯টা। শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দেখা যায়, দেয়ালে লাগানো একটি মাত্র এলইডি লাইটই ভরসা। সেই আলোতে ভর করে জরুরি বিভাগে কর্মরত মেডিকেল ও সহকারী মেডিকেল অফিসারসহ আরও দু’তিনজন স্বেচ্ছাসেবক আগত রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় গরমের প্রচণ্ডতায় চিকিৎসা কাজে নিয়োজিতদের পাশাপাশি আগত রোগী আর তাদের স্বজনদের অবস্থা বেশ কাহিল। মিনিট পনের পার হতেই শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা ৭ মাসের এক শিশু কন্যাকে নিয়ে জরুরি বিভাগে হাজির হয় আলিমুজ্জামান নামের এক অভিভাবক। তবে বিদ্যুৎ না থাকায় দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত তাকে অক্সিজেন কন্সেন্টেটর সহায়তা দেয়া সম্ভব হলো না।
কিছুক্ষণ বাদে প্রায় ৩০-৩৫ গজ হেঁটে পুরুষ ওয়ার্ডে পৌঁছে দেখা মেলে আরও করুণ চিত্রের। বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকার কক্ষের মধ্যে মোবাইলের আলো জেলে অসহায়ত্বের মতো মেঝেতে পড়ে রয়েছেন চিকিৎসাধীন রোগীরা। বেডে গরম বেশি দাবি করে এসব রোগী জানায়, ৬টি বেড থাকলেও সেখানকার দুটি ফ্যানের একটি অকেজো। তাছাড়া বিদ্যুৎ না থাকায় দিনের বেশির ভাগ সময় ঘুরছে না অপরটি। বাধ্য হয়ে তারা কক্ষের মেঝেতে বালিশ পেতে অতিকষ্টে সময় কাটাচ্ছেন।
এমন অবস্থার দেখা মেলে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও জরুরি বিভাগে। জানা যায়, বিদ্যুৎ এর অব্যাহত লোডশেডিংয়ের মারাত্মক প্রভাব পড়ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তবে এ চিত্র কেবল একদিনের নয়। বরং গরমের প্রচণ্ডতা শুরুর পর থেকে এটা নিত্যকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে। জানা যায়, ‘ডাবল ফিডার’ বা বিকল্প লাইন না থাকার দরুণ ওই এলাকায় লোডশেডিং শুরু হলে গুরুতর অসংখ্য রোগী থাকা সত্ত্বেও উপজেলার ৫০ শয্যা হাসপাতালটি দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত থাকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। এ সময় তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের অক্সিজেন কন্সেন্টেটর সাপোর্ট পর্যন্ত দেয়া সম্ভব হয় না। এমনকি চিকিৎসাসেবা নিতে আসা অংসংখ্য রোগী গরমের তীব্রতায় সরকারি হাসপাতালে এসে বরং আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন কর্মচারী জানান, ১০ কিলো ওয়াট ক্ষমতার ওই জেনারেটর চালু করতে প্রতি ঘণ্টায় মাত্র দুই লিটারেরও সামান্য কিছু বেশি ডিজেলের প্রয়োজন পড়ে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন উক্ত জেনারেটর ব্যবহার করে একইসঙ্গে ওয়ার্ড ও কেবিনসহ জরুরি বিভাগের কাজ মেটানো সম্ভব। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জিয়াউর রহমান বলেন, পরিত্যক্ত ঘোষিত মূল ভবনের সঙ্গে জেনারেটর সেট করা বিধায় সেটাকে নুতনভাবে স্থাপন করার মতো জায়গা যেমন নেই তেমনি তার রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহার বেশ ব্যয়বহুল্য। জরুরি কিছু অপারেশনের সময় উক্ত জেনারেটর চালানো হয়। পল্লী বিদ্যুৎ কতৃপক্ষের কাছে বার বার ধরনা দিলেও সরকারি হাসপাতালের জন্য ডাবল ফিডারের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।