দেশ বিদেশ
ঈশ্বরদীতে তীব্র খরায় ঝরে পড়ছে লিচু
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
৭ মে ২০২৪, মঙ্গলবারপাবনার ঈশ্বরদীর সলিমপুর ইউনিয়নে খরায় ঝরে পড়ছে লিচু। ফলে লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা। শুরুতে মুকুল আর লিচুর গুটিতে ভরা থাকলেও, গত কয়েক সপ্তাহের টানা খরা আর প্রচণ্ড তাপের কারণে লিচু ঝরে পড়ায় হতাশ চাষিরা।
এ উপজেলায় অনেকের কাছে প্রধান অর্থকরী ফসল লিচু। এ বছর বাম্পার ফলনের আশা দেখিয়েও খরার কারণে লিচু ঝরে পড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। প্রচণ্ড খরায় লিচু শুকিয়ে আকার ছোট হয়ে গেছে এবং কিছু লিচুর অর্ধেক অংশ কালো হয়ে গেছে। প্রায় দুই থেকে তিন সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মিরকামারী গ্রামের লিচু চাষি আবুল কালাম আজাদ জানান, তার ৪০টি লিচু গাছে মুকুল আর লিচুর গুটিতে ভরা ছিল। আশা করেছিলেন বাম্পার ফলনের। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের টানা খরা আর প্রচণ্ড তাপের কারণে ২৫টি লিচুগাছের লিচু ঝরে পড়েছে।
নোমান মিয়া, মো. খসরু ও আলমগীর হোসেনের দুই শতাধিক লিচুগাছে অনাবৃষ্টি আর গরমে বাগানের প্রায় সব লিচু ঝরে পড়েছে। ছফির উদ্দিনের ৩০টি গাছের মধ্যে বেশির ভাগ লিচুগাছের লিচু খরায় ঝরে পড়ছে।
গতকাল সরজমিন দেখা যায়, উপজেলার সলিমপুর, সাহাপুর, লক্ষ্মীকুণ্ডা, দাশুড়িয়া, সাড়া, মুলাডুলি, জয়নগর, মানিকনগর, মিরকামারি, আওতাপাড়া, বড়ইচড়া, বাঁশেরবাদা, চাঁদপুর চর, কামালপুর চর গ্রামের প্রতিটা বাড়ির উঠান, বাড়ির সামনের অংশ, পুকুরপাড়, খেতের আইলসহ চারদিকে কয়েক হাজার লিচুগাছ। গ্রামের প্রায় কয়েক বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে হাজার হাজার লিচুগাছ রয়েছে। যে কারণে গ্রামগুলো এখন লিচু গ্রাম হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ গাছই এখন লিচুশূন্য। অথচ কয়েক দিন আগেও লিচুর গুটিতে ভরপুর ছিল লিচুগাছ।
লিচু চাষি রাজিব বলেন, এ বছর লিচুগাছ মুকুলে ভরপুর ছিল। আমরা আশা করেছিলাম বাম্পার ফলনের। আমাদের নিজস্ব দুই’শ গাছ রয়েছে। এ ছাড়া শতাধিক গাছ কিনে রেখেছিলাম। এখন ধানক্ষেতের পাশে যে গাছগুলো রয়েছে, সে গাছগুলোর লিচু ভালো রয়েছে। তবে অন্য চাষিদের লিচুর অবস্থা খুবই খারাপ। অপর লিচু চাষি ছফির উদ্দিন বলেন, ‘বৃষ্টি থাকলে আমরা এখন লিচু ভাঙা শুরু করতে পারতাম। প্রতি বছর এ গ্রাম থেকে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হলেও এবার লিচু চাষিরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।’ এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, এখানে তিন হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাণিজ্যিক বাগান রয়েছে। গাছের সংখ্যা তিন লাখের ওপর। এরমধ্যে দেড় লাখ গাছের বয়স ১৭-১৮ বছরের বেশি। অন্যান্য বছর এ অঞ্চল থেকে প্রায় ৫০০ থেকে ৫৫০ কোটি টাকার লিচু বেচাকেনা হতো। তবে এবার প্রচণ্ড গরমের কারণে অন্যান্য ফলফলাদির ন্যায় লিচু চাষিরাও অনেকটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘কৃষি কার্যালয় থেকে লিচু বাগানের খোঁজখবর ও চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় লিচু ঝরে পড়ে।’