ঢাকা, ১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

সিলেটে একে একে মারা গেলেন ৩ ভাই

কানাইঘাট (সিলেট) প্রতিনিধি
৬ মে ২০২৪, সোমবার

মসজিদের জমি নিয়ে বিরোধ। আপন ভাতিজাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব। ভাতিজারা কথা মানছিলো না। একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে। আর এই সংঘর্ষে একেক করে মারা গেলেন তিন ভাই। এরমধ্যে ঘটনার দিনই মারা যান একজন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন আরও দু’জন। ঘটনায় স্তব্ধ কানাইঘাট। এমন ঘটনা কেউ মেনে নিতে পারছেন না। এলাকায় ক্ষোভও বিরাজ করছে।

বিজ্ঞাপন
স্থানীয়রা জানিয়েছেন- কানাইঘাট উপজেলার হারাতৈল মাঝবড়াই গ্রামের মৃত আছদ আলীর ৭ ছেলে। তার মধ্যে সমছুল হক পিতার বসত বাড়ি ছেড়ে হারাতৈল মাঝবড়াই জামে মসজিদের পাশে আলাদা বাড়ি করে সেখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছেন। গ্রামের জামে মসজিদের সীমানার জায়গার মাপজোখ নিয়ে সমছুল হকের সঙ্গে গ্রামের অনেকের ও তার আপন ছোট ভাই সাবেক ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীনের বিরোধ দেখা দেয়। উভয়পক্ষ থানায় পাল্টাপাল্টি দরখাস্তও করেন। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি না ঘটে এজন্য থানা পুলিশ দু’পক্ষের বিরুদ্ধে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আদালতে প্রসিকিউশন দেন। তারপরও মসজিদের সীমানার জায়গা শনাক্ত নিয়ে বিরোধ থামেনি। এর জের ধরে গত ২২শে এপ্রিল সকাল ১১টায় মসজিদের ইমাম থাকার পাকা ঘর নির্মাণের জন্য মসজিদের সীমানা চিহ্নিত করতে গ্রামবাসী অনেকের সঙ্গে সাবেক ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন একমত পোষণ করেন। এতে মসজিদের পাশে বসবাসরত তার আপন বড় ভাই সমছুল হক ও ভাতিজা আলমাছ উদ্দিন, কামাল আহমদ, সুহেল আহমদ, রুহুল আহমদসহ তাদের লোকজন জয়নাল আবেদীনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে তারা বাড়িতে এসে ভাই ও ভাতিজারা জয়নাল আবেদীনকে ডাকাডাকি শুরু করে। জয়নাল আবেদীন ওইদিন বিকালে ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদের পূর্ব পাশের রাস্তায় যাওয়া মাত্র পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশীয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভাই সমছুল হক ও ভাতিজা আলমাছ উদ্দিন ও তাদের সহযোগীরা তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের এলোপাতাড়ি ভাবে কুপিয়ে জয়নাল আবেদীনকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে রাখে। জয়নাল আবেদীনকে প্রাণে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে অপর বড় ভাই দুবাই প্রবাসী ছয়ফুল্লাহ ও ওমান প্রবাসী আব্দুল্লাহসহ আরও কয়েকজনকে গুরুতর আহত করে। ঘটনার দিন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে পথিমধ্যে মারা যান সাবেক ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন। পরবর্তীতে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৮শে এপ্রিল মারা যান বড় ভাই ছয়ফুল্লাহ এবং সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালের আইসিইউতে থাকা ভাই আব্দুল্লাহ গত ২রা মে মারা যান। সরজমিন গিয়ে দেখা যায়; তিন ভাইয়ের হত্যাকারী বড় ভাই সমছুল হক ও তার দুই ছেলে সুহেল আহমদ, কামাল আহমদ হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে থাকায় পরিবারের অন্য সদস্যরা ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পলাতক রয়েছেন। অপরদিকে হত্যাকাণ্ডের মূল মদতদাতা আনসার সদস্য আলমাছ উদ্দিন এখন পর্যন্ত পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার না হওয়ায় এলাকার লোকজনদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান- মসজিদের সীমানার জায়গা নিয়ে সংঘর্ষে আপন ভাই-ভাতিজাদের হাতে পর পর মারা যাওয়া ৩ ভাইয়ের হত্যাকারী ৪ আসামিকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে চিহ্নিত করা হয়েছে, কেউ ছাড় পাবে না। মামলার অপরাপর আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তদন্তপূর্বক যারাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং মদত দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার ওসি (তদন্ত) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানিয়েছেন- আসামি ধরতে পুলিশ প্রযুক্তিরও সহযোগিতা নিচ্ছে। ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
 

পাঠকের মতামত

আপন ভাই-ভাতিজা'র হাতে একসাথে তিন ভাই খুন। এর জন্য খুনি ভাই-ভাতিজা মিলে আরও কমপক্ষে চার জনের ফাঁসি হবে। জমি পড়ে থাকবে, মাঝে সাত জন আপন ভাই-ভাতিজা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, নিবেন। এর জন্য পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র দায়ী। দিনে দিনে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা থেকে দুরে সরে যাওয়ায় মনুষ্যত্ব হারিয়ে গেছে, পশুত্ব ভর করেছে।

এম, এম, জাহাঙ্গীর
৬ মে ২০২৪, সোমবার, ৮:১০ অপরাহ্ন

বর্তমান জগতে মানুষ পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট হয়ে গেছে, কাউকে আপন ভাবাই বিপদ।

Swapan
৬ মে ২০২৪, সোমবার, ১১:৪২ পূর্বাহ্ন

সব কিছু স্পষ্ট। এই রুপ খুনিদের দ্রুত ফাঁসি কার্যকর করা হোক।

SHUVO
৬ মে ২০২৪, সোমবার, ১০:৩৯ পূর্বাহ্ন

ঘটনা দিবালোকের মত স্পষ্ট। কে কারে মারল। কিন্তু এটার বিচার হতে হয়তো ১২ বৎসর লাগবে। কি বিচিত্র এই দেশ।

parvez
৬ মে ২০২৪, সোমবার, ৮:০১ পূর্বাহ্ন

So Sad, pathetic.

abu-mahtab
৬ মে ২০২৪, সোমবার, ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status