বাংলারজমিন
হোসেনপুরে ভোটযুদ্ধের জটিল সমীকরণ
আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে
৬ মে ২০২৪, সোমবারক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার ভোটের সমীকরণ। গত ৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই এখানে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৮ই মে এ উপজেলায় ভোটের লড়াই। শেষ মুহূর্তে ভোটারদের পক্ষে টানার প্রাণান্তকর চেষ্টায় ব্যস্ত প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। তিনটি পদের প্রার্থীরাই সমানতালে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভোটে আলাদা চোখ রাখছেন প্রার্থীরা। চায়ের আড্ডা থেকে বাসাবাড়ি, পথঘাট, অলিগলি সর্বত্র চলছে নির্বাচনী আলাপ-আলোচনা। চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে প্রার্থী ও ভোটের হিসাবনিকাশ নিয়ে। বিশেষ করে উপজেলাটি প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও তার ছোট বোন বর্তমান এমপি ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি’র নির্বাচনী আসনভুক্ত হওয়ায় এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী কৃষিবিদ মসিউর রহমান হুমায়ুনের এলাকা হওয়ায়, এ উপজেলার ভোট নিয়ে বিশেষ আগ্রহ রয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদের ছয় প্রার্থী হলেন- বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহেল (আনারস), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মাহবুবুল হক (মোটরসাইকেল), উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এম এ হালিম (হেলিকপ্টার), উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মো. আশরাফ হোসেন কবির (কাপ-পিরিচ), বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রৌশনারা রুনু (টেলিফোন) এবং বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা মো. নাজমুল আলম (দোয়াত-কলম)। প্রতিদ্বন্দ্বী এই ছয় প্রার্থীর মধ্যে মোহাম্মদ সোহেল, শাহ্ মাহবুবুল হক, এম এ হালিম ও মো. আশরাফ হোসেন কবির এই চারজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। নির্বাচনী লড়াইয়ে এই চারজনের কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। গত পাঁচ বছর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে মোহাম্মদ সোহেল দায়িত্ব পালন করলেও তার বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ নেই। তার পিতা প্রয়াত আইয়ুব আলী হোসেনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ফলে উপজেলাজুড়ে মোহাম্মদ সোহেলের পারিবারিক ও দলীয় কার্যক্রমের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। এই পরিচিতিকে পুঁজি করে বিগত নির্বাচনের মতো এবারের নির্বাচনেও নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করছেন মোহাম্মদ সোহেল।
এ ছাড়া তার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী কৃষিবিদ মসিউর রহমান হুমায়ুনের ভাই পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোবারিছ নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত রয়েছেন। ফলে ভোটের মাঠে মোহাম্মদ সোহেল একজন শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে পুনরায় উপজেলা চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসার স্বপ্ন দেখছেন। চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে বেশ ভালোভাবে আলোচনায় রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ শাহ্ মাহবুবুল হক। তিনি উপজেলার শাহেদল ইউনিয়ন পরিষদের চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। একজন ক্রীড়া সংগঠক, শিক্ষানুরাগী ও নাট্যকার হিসেবেও ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের। স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি’র আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত শাহ্ মাহবুবুল হক কেবল উপজেলা নয় জেলার আওয়ামী রাজনীতিতেও এক পরিচিত নাম। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তার বিরুদ্ধে তেমন কোনো দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ নেই। ফলে নির্বাচনে তার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী সমর্থক নেতাকর্মীরা।
এ উপজেলার নির্বাচনী রাজনীতিতে আরেক আলোচিত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা এম এ হালিম। ১৯৮৪ সালে হোসেনপুর সরকারি কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্বের মধ্য দিয়ে তার রাজনীতিতে প্রবেশ। পরবর্তীতে একই কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি, সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক, থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক, আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যসহ দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৬শে মে অনুষ্ঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এম এ হালিম। নির্বাচনী প্রচারণায় কর্মী-সমর্থকদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন আওয়ামী রাজনীতিতে নিবেদিতপ্রাণ এই নেতা। ফলে নির্বাচনে তার বিজয় নিয়ে বেশ আশাবাদী কর্মী-সমর্থকরা। চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আশরাফ হোসেন কবির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তার যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার ছাপ রাখতে পেরেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। পুমদী ইউনিয়নের বাসিন্দা আশরাফ হোসেন কবির তার নিজ ইউনিয়নে ব্যাপক জনপ্রিয়। এ ছাড়া উপজেলার অন্যান্য এলাকাতেও তার ভক্ত-অনুরাগী রয়েছে। ফলে ভোটের মাঠে তিনিও একজন শক্তিশালী প্রার্থী। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে একমাত্র নারী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রৌশনারা রুনু।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে গত পাঁচ বছর তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার স্বাক্ষর রেখেছেন। পুরো উপজেলা চষে বেড়িয়ে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। উপজেলা পরিষদ থেকে তার ভাগে যেসব বরাদ্দ পেয়েছেন, সবই স্বচ্ছতার সঙ্গে জনগণের মাঝে বিতরণ করেছেন। এর বাইরে বিভিন্ন দুর্যোগে ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়েও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ কারণে উপজেলা জুড়েই রৌশনারা রুনু’র বেশ ভালো পরিচিতি ও সুনাম রয়েছে। এ ছাড়া নারী প্রার্থী হওয়ায় নারী ভোটারদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছেন তিনি। ফলে চেয়ারম্যান পদের নির্বাচনী লড়াইয়ে নারী হয়েও পুরুষ প্রার্থীদের সঙ্গে সমানতালে প্রচার-প্রচারণায় সক্রিয় রয়েছেন রৌশনারা রুনু। ভোটাররা বলছেন, এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদের নির্বাচনে কোনো প্রার্থীই সুস্পষ্টভাবে এগিয়ে নেই। অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভোট বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী চার প্রার্থী হলেন- আল আমিন অপু (টিউবওয়েল), শফিউদ্দিন সরকার বাচ্চু (চশমা) নাঈম সুজন (তালা) ও আলমগীর কবির সোহাগ (টিয়াপাখি)। এ ছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী তিন প্রার্থী হলেন- ছাবিয়া পারভীন জেনী (কলস), সেলিনা আক্তার (হাঁস) ও খাইরুন নাহার হ্যাপি (ফুটবল)।