বাংলারজমিন
ফেঞ্চুগঞ্জে ৬ প্রার্থীর ৫ জনই আওয়ামী লীগের
হাসান চৌধুরী, ফেঞ্চুগঞ্জ (সিলেট) থেকে
৬ মে ২০২৪, সোমবারশিল্পশহর ফেঞ্চুগঞ্জে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রার্থী মনোয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে ৫ জনই আওয়ামী লীগের। আগামী ২৯শে মে ফেঞ্চুগঞ্জে ভোটগ্রহণ। উপজেলা নির্বাচনে ভোটের মাঠে বিএনপি জামায়াতের কেউ নেই। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে বিএনপি প্রথম থেকেই নেই। টানা ১০ বছর ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন জামায়াত নেতা সাইফুল্লাহ আল হোসাইন। দলীয় সিদ্ধান্তে সম্প্রতি জামায়াতের ওই নেতা ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। নির্বাচনী মাঠে স্বতন্ত্রের মোড়কেও নেই কেউ বিরোধী দল থেকে। ফাঁকা মাঠে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী। নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে ক্ষতমাসীন আওয়ামী লীগ বিষয়টি অনুধাবন করে এবার দলীয় প্রতীক না দিয়ে তৃণমূলের জন্য উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করা হয়েছে যাতে প্রার্থীর আধিক্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ ও মহিলা পদে আরও ৮ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নির্বাচনী মাঠে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম আওয়ামী ঘরানার মানুষ। বীর মুক্তিযোদ্ধা এই প্রার্থী বিগত উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করে বিজয় লাভ করেন। তিনি ১৯৯১ সালেও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে পরিবেশ পরিস্থিতি কেমন যেন অশনি সংকেত দিচ্ছে। নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে শক্ত ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান তিনি। বর্তমানে নির্বাচন প্রশ্নে মানুষের মাঝে একধরনের ভীতি ও অনীহা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই সংস্কৃতি থেকে রেরিয়ে আসতে হবে। মানুষকে নির্বাচনমুখী করতে কমিশনের অধীন প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হলে এবারো তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাসিত টুটুল ২০০৪ সাল থেকে অদ্যাবধি ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয়। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের ছাত্র আব্দুল বাসিত টুটুল জানান, বিগত তিন দশকের বেশি সময় ধরে ফেঞ্চুগঞ্জের মাটি ও মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে রাজনীতির মাঠে কাজ করছেন মানুষের জন্য। ফেঞ্চুগঞ্জের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, মহিলা লীগের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে রয়েছেন। জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী বলে জানান। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ মুজিবুর রহমান জকন জানান, মানুষের কল্যাণে কাজ করাই আমার রাজনীতির লক্ষ্য। ছাত্রজীবন থেকে তিনি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ২০১৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছিলেন বলে তিনি জানান। আসন্ন নির্বাচনে কেউ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে তৎক্ষণাত তিনি সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি তুলে ধরবেন বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবের আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে খ্যাত আশফাকুল ইসলাম সাব্বির জানান, নির্বাচনে জয়-পরাজয় বড় কথা নয় মানুষের জন্য কাজ করতে পারা আমার কাছে বড় বিষয়। ফেঞ্চুগঞ্জের মানুষের জন্য আমি কাজ করতে চাই।
তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে আমার প্রতি মানুষের সমর্থন, ভালোবাসা দেখে আমি অভিভূত, আনন্দিত। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ওহিদুজ্জামান সুফি চৌধুরী ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে জানান, বিগত নির্বাচনগুলোতে তিনি অংশগ্রহণ করেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করতে এই অবৈধ বাকশালী সরকারের অধীনে সকল পাতানো ডামি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দলের প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসার ফলে বিএনপি’র সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এবারের উপজেলা নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করেননি। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম মানবজমিনকে জানান, মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে গত ২রা মে ফেঞ্চুগঞ্জে চেয়ারম্যান পদের জন্য ৬ জন এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য ৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে দুই ভাইস চেয়ারম্যান পদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। ফেঞ্চুগঞ্জে পুরুষ ও মহিলা ভোটার সংখ্যা ৮৮ হাজার ৫৫১ জন।
নিউজটি পড়ে ভালো লাগলো।।