ঢাকা, ১৭ মে ২০২৪, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

অর্থ-বাণিজ্য

আগের তুলনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অবক্ষয় হয়েছে: ফরাসউদ্দিন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

(২ সপ্তাহ আগে) ২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৩:৫৯ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:২১ অপরাহ্ন

mzamin

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, দেশের সবাই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছে। কিন্তু কেউ অনেক বেশি আবার কেউ একেবারেই কম। তবে আগের তুলনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অবক্ষয় হয়েছে সেটার সঙ্গে আমি একমত। বলেন, কেন যেন অর্থ পাচারের ব্যাপারে সরকার এবং ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড (আইএমএফ) নিরব। কিন্তু এটা দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

বৃহস্পতিবার ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামে (ইআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।

ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, ব্যাংক একীভূত নতুন কিছু না। তবে এটাতে জোর করা বা চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না। যে দুটি ব্যাংক একীভূত হবে তাদের নিজেদের সম্মতি নেয়া জরুরি। এ পদ্ধতিতেই সারা পৃথিবীতে হয়। অতীতে বাংলাদেশেও হয়েছে। এটাতে জোর করে না চাপিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একীভূত করা উচিত।

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, বারবার ঋণ পুনঃতফসিল করার কারণে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন
এই সংকট দূর করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানান উপায়ে টাকা ছাপিয়ে মার্কেটে দিচ্ছে এ কারণেই মূল্যস্ফীতি কমছে না। সাবেক এ গভর্নর বলেন, প্রায় দশ মাস ধরে আমাদের মূল্যস্ফীতি ১০’র কাছাকাছি। মন্ত্রীরা বলছেন ৯.৭ মূল্যস্ফীতির পরও মানুষ ভালো আছেন। বাস্তবতা বিবর্জিত কথা। চাকরিজীবীদের হয়তো কিছুটা বেতন বেড়েছে। তার মানে এই মূল্যস্ফীতিতে তারা ভালো আছেন এটা বলা যাবে না। তিনি বলেন, বিশ্বের সব দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। অথচ আমরা পারিনি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের মনিটরিং পদ্ধতি বদলাতে হবে। টিভিতে মনিটরিং না করে সরাসরি তদারকি বাড়াতে হবে। তা না হলে মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে না।

তিনি বলেন, ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি যখন বড় হয় তখন মানুষের দয়ামায়া কমে যায়। এখন হয়তো সেটাই হচ্ছে। এজন্যই বৈষম্যটা বেড়েছে। তবে ৩০ বছর আগের গরীব আর এখনকার গরীব এক জিনিস নয়, এটার মধ্যে পার্থক্য আছে। আমাদের বৈষম্যটা কমাতে হবে। ধনী গরিবের বৈষম্য আগেও ছিল এখনো রয়েছে। তবে ধনী ও গরিবের মধ্যে অর্থের পার্থক্য আগের তুলনায় বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি। এই বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থনীতি নয় রাজনৈতিক পদক্ষেপের প্রয়োজন।

ফরাসউদ্দিন বলেন, আমাদের দেশের ঋণ খেলাপি, কর খেলাপি এবং অর্থপাচার একই সূত্রে গাথা। ঋণ পুনঃতফসিল করার কারণে ব্যাংকে অর্থের টান পড়েছে। এর জন্য বন্ডের মাধ্যমে টাকা ছাপিয়ে অর্থ সরবরাহ করতে হচ্ছে। যার ফলে মূল্যস্ফীতি কমছে না। তাই শক্ত হাতে খেলাপি ঋণ আদায় করতে হবে। এই বিষয়গুলো নীতি নির্ধারকদের বোঝানোর মতো একটা লোক প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর বলেন, দেশের ব্যাংকগুলোতে স্বল্পমেয়াদি আমানতের পরিমাণ বেশি। এ খাত থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিলে সমস্যা তৈরি হয়। এজন্য দেশের পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করার দরকার ছিল। তবে দেশের পুঁজিবাজার শক্তিশালী হয়নি।

দেশের ঋণ খেলাপিদের বিষয়ে তিনি বলেন, খেলাপিওয়ালারা যদি অনেক বড় হয়ে যায় তাহলে সমস্যা। ১০ হাজার টাকার কৃষি ঋণ নিয়ে খেলাপি হলে তাকে জেলে ঢোকাবো, কিন্তু ১০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হলে তাকে সালাম ঠুকবো এটা হতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ঋণগুলো অবশ্যই আদায় করা উচিত।

মূল্যস্ফীতির বিষয়ে ফরাসউদ্দিন বলেন, কিছু অসাধু খাদ্য কর্মকর্তা ও মিল মালিকরা কারচুপি করছে। যার ফলে দেশে খাদ্যের দাম ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। তাই চাইলেও সরকার খাদ্য মূল্যস্ফীতি বা ফুড ইনফ্লেশন কমাতে পারছেন না। এক্ষেত্রে সরকারের গুদামের মজুদ বাড়ানো এবং বিশেষ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দেশে স্বস্তি ফেরানোর পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক এই ব্যাংকার।

একটি দাতা মুরুব্বির পরামর্শ নিয়ে ৯২ সালে স্বল্প মেয়াদী আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। এটাই এখন ব্যাংকের বড় সমস্যা। এসব সমস্যার সমাধানের অনেক পথ রয়েছে। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুর্বল ব্যাংক একিভূতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত একটি প্রক্রিয়া। তবে এটাই একমাত্র প্রক্রিয়া নয়, আরও বিকল্প রয়েছে। দেশের ব্যাংকিং খাতের সার্বিক সমস্যার সমাধানে ব্যাংকিং সংস্কার কমিশন গঠন করারও প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফে সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মৃধা। অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন ইআরএফে সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মরত সংবাদকর্মীরা। উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন, ইআরএফ নেতৃবৃন্দসহ গণমাধ্যম কর্মীরা।

অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

অর্থ-বাণিজ্য সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status