ঢাকা, ২১ মে ২০২৪, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

সিও এনজিও’র সাবেক কর্মীর জবানবন্দিতে শত শত কোটি টাকা লোপাটের চাঞ্চল্যকর তথ্য

আমিনুল ইসলাম লিটন, ঝিনাইদহ থেকে
১ মে ২০২৪, বুধবার

শত শত নির্যাতিত কর্মীর আর্তনাদ উপেক্ষা করে মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির পরিকল্পনা, প্রকল্প ও ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন শাখার একজন উপ-পরিচালক মূল ঘটনা তদন্ত না করে ঝিনাইদহের সিও এনজিও সারপ্রাইজ ভিজিট করতে গোপনে এসে গোপনেই চলে গেলেন। তিনি ঝিনাইদহের সোসিও ইকোনমিক হেলথ এডুকেশন অর্গানাইজেশন (সিও) এনজিও’র তত্ত্বাবধানে জামাই আদরেই ৩ দিন ছিলেন। গোপনে ওই কর্মকর্তা কী ভিজিট করেছেন তাও গোপন রাখা হয়েছে। এমনকি ঝিনাইদহে অবস্থানকালে মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির উপ-পরিচালক সুমন চাকমা গণমাধ্যমকর্মীদেরও এড়িয়ে গেছেন। তবে ঝিনাইদহ ত্যাগের প্রাক্কালে তিনি ফোন রিসিভ করে জানান, তিনি নিছক সারপ্রাইজ ভিজিটে এসেছিলেন। সিও এনজিও’র কোনো তদন্তে তিনি আসেননি। তারপরও গণমাধ্যমকর্মীরা তাকে প্রশ্ন করেন, সিও এনজিও’র বিরুদ্ধে চাকরি প্রদানের সময় যে খোলা চেক ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প নিয়ে মামলা করার গুরুতর অভিযোগ আছে, সে বিষয়ে কোনো তদন্ত হয়েছে কিনা। জবাবে সুমন চাকমা জানান, এ বিষয়ে সাংবাদিকরা মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির নির্বাহী পরিচালক মেহেদী হাসানের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তিনিই এনজিও’র বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করেন।

 এদিকে তথ্য নিয়ে জানা গেছে, সুমন চাকমা সিও এনজি’র বিরুদ্ধে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরেই ঝিনাইদহে আসেন। গত শনিবার তিনি ঝিনাইদহে আসার সঙ্গে সঙ্গে সিও এনজিও’র কর্মকর্তারা তাকে রিসিভ করে  লোকচক্ষুর অন্তরালে নিয়ে যান।

বিজ্ঞাপন
ঝিনাইদহে রওনা হওয়ার আগে সুমন চাকমা ঝিনাইদহ থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার বার্তা সম্পাদককে ফোন করে জানতে চান কোন কোন পত্রিকায় সিও এনজিও’র খবর প্রকাশিত হয়েছে। এরপর তিনি আর ওই বার্তা সম্পাদকের ফোন রিসিভ করেননি। ধারণা করা হচ্ছে, সিও এনজিও কর্তৃপক্ষ তদন্ত কর্মকর্তা সুমন চাকমাকে ম্যানেজ করে ৩ দিন জামাই আদরে রেখে মঙ্গলবার ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে সিও এনজিও’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল আলমসহ কোনো কর্মকর্তাই মুখ খুলছেন না। তারা তদন্তের বিষয়টি বেমালুম চেপে গেছেন। এদিকে জেলা প্রশাসক এসএম রফিকুল ইসলামের নির্দেশে গত ১৫ই এপ্রিল থেকে ঝিনাইদহ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ইয়ারুল ইসলাম তদন্ত কাজ শুরু করেন।

 তদন্তের শুরুতে তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগকারীদের নোটিশ করেন এবং তাদের বক্তব্য শোনার পাশাপাশি লিখিত জবানবন্দি গ্রহণ করেন। সিও এনজিও’র প্রাক্তন কর্মী গাইবান্ধার সুই গ্রামের এবিএম মাহবুবুর রশিদ তদন্ত কর্মকর্তার কাছে ৬ পাতার একটি লিখিত জবাববন্দি প্রদান করেন। তার জবানবন্দিতে সিও এনজিও মালিকের শত শত কোটি টাকা পকেটস্থ করার চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। লিখিত জবানবন্দিতে মাহবুবুর রশিদ উল্লেখ করেছেন, বিতরণ রেজিস্ট্রারে ১০ টাকার রেভিনিউ হিসেবে ৮৪ লাখ টাকা, অফিস ভাড়ার ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে ৯৮টি অফিস থেকে ২৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা, এ পর্যন্ত সাড়ে ৮ হাজার কর্মী নিয়োগ দিয়ে জামানত ও ট্রেনিং ফি বাবদ ২৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা, ঋণ ফি বাবদ জনপ্রতি গ্রহণ করা হয় ১৪৫ টাকা। মাসে ৭ হাজার সদস্যকে ঋণ প্রদান করা হয়। সেই হিসেবে ১২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। দুই’শ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ৪২০ টাকায় বিক্রি করে ৭ কোটি ৯২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সদস্য ভর্তি করে দুই কোটি ৭০ লাখ টাকা, বেতন প্রদানের সময় প্রতি স্টাফের কাছ থেকে কেটে রাখা ১৭ কোটি ৬৪ লাখ, প্রতি শাখা বছরে তিনবার অডিট করে কর্মীদের জরিমানা বাবদ ৫৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা পকেটস্থ করেছে। এ ছাড়া প্রত্যেকের বেতন থেকে আয়কর কেটে রাখা হলেও তা সরকারকে প্রদান করা হয় না।

 সিও মালিক পক্ষের সদস্য শামসুল আলম,  ছেলে অন্তর, ওয়াহিদুর রহমান, মফিদুন্নেছা শীলা, ফাহিমা বেগম ও সাহিদা বেগমের শত শত কোটি টাকা হাটগোপলপুর শাখা, গাংনী শাখা, গান্না বাজার শাখা, কোটচাঁদপুর শাখা, হরিণাকুণ্ডু শাখা ও ঝিনাইদহের দুইটি শাখায় জমা রাখা আছে। জবানবন্দিতে এমআরএ, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে ভুয়া রিপোর্ট প্রদান করে মোটা অঙ্কের ঋণ পাওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সিও এনজিও’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল আলমকে মঙ্গলবার বিকালে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে এর আগে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছিলেন তার বিরুদ্ধে প্রকাশিত অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বদনাম ছড়ানোর জন্য সিও এনজিও’র  যেসব সাবেক কর্মচারীরা অভিযুক্ত ছিলেন, তারাই আমার এনজিও’র বিরুদ্ধে এই মিথ্যাচার করছেন।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status