ঢাকা, ১৬ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

কুষ্টিয়ায় পানি সংকটে নষ্ট হচ্ছে ফসল

৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার
mzamin

এ.জে. সুজন, কুষ্টিয়া থেকে: পানির সংকটের ভয়াবহ চিত্র কুষ্টিয়ায়। সংকট তীব্র আকার ধারণ করায় মহাবিপর্যয়ে পড়েছে জেলার কৃষকরা। কোথাও কোনো পানি নেই। পুড়ে যাচ্ছে মাঠের ফলন্ত সবজি-ধানসহ সব ফসল। পানির অভাবে মাটি ফেটে চৌচির। কয়েক মাস অনাবাদি পড়ে আছে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি। জেলাজুড়ে কৃষকদের মাঝে পানির জন্য চলছে হাহাকার। যেসব জমিতে ফসল রয়েছে, তাও পুড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঝরে যাচ্ছে আম ও লিচুর গুটি। এতে আমের ভালো ফলন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন আমচাষিরা। 
এভাবে চলতে থাকলে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিপর্যয়ের সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি বিভাগ।

বিজ্ঞাপন
তারা বলছেন, পানি সংকটের সমাধান করা না গেলে আগামী আউশ মৌসুমে ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কোনো সম্ভাবনা নেই। কুষ্টিয়া সদর কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল বলেন, পানি সংকটের কারণে বোরো আবাদ ব্যাহত হয়েছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান করা না গেলে আউশ উৎপাদনেও প্রভাব পড়বে। একদিকে জিকে ক্যানালে পানি নেই, অন্যদিকে পানির স্তর ক্রমশই নিচে নামছে। এতে সেচ পাম্প দিয়ে পানি উঠছে না। মাঠের মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে আছে অধিকাংশ পাম্প। অন্যদিকে দীর্ঘদিন নষ্ট হয়ে বন্ধ রয়েছে জিকে প্রকল্পের ৩টি পাম্পই। যার কারণে শুকিয়ে খাঁ খাঁ করছে জিকে ক্যানেল। 
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বোরো মৌসুমে জেলায় বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমি। কিন্তু পানি সংকটের কারণে জেলায় বোরো ধানের আবাদ হয়নি প্রায় ৬ হাজার বিঘা জমি। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় দেখা দিয়েছে মিরপুর উপজেলায়। সেখানে বোরো মৌসুমে অনাবাদি ছিল ৩ হাজার ৩২২ বিঘা জমি। এছাড়া কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ১১২৫ বিঘা ও কুমারখালী উপজেলায় ৭৬৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়নি। খোকসা উপজেলার কৃষক আলিম শেখ বলেন, জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করছি। দুই বিঘা জমিতে সবজি ও কলাগাছ রয়েছে। জমির পাশে জিকে ক্যানাল থাকলেও কোনো পানি নেই। জমির সঙ্গে বরিং বসিয়েও কাজ হচ্ছে না। স্তর নেমে যাওয়ায় সেখান থেকেও পানি উঠছে না। পানির অভাবে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর কয়েক দিন গেলে সব শুকিয়ে যাবে।
বিত্তিপাড়ার কৃষক আনিস মোল্লা বলেন, বিশ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ধান ও ভুট্রা লাগিয়েছি। জমি চাষাবাদ ও সেচে কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন আর টাকা দিলেও পানি যাওয়া যাচ্ছে না। তীব্র তাপপ্রবাহে ভট্টার গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। ধানের শীষ আসা অবস্থায় গাছ নুইয়ে পড়ছে। কিছু গাছে শীষ বের হলে সব চিটা হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ফসল ঘরে তুলতে না পারলে একদম নিঃস্ব হয়ে যাবো। আমচাষিরা জানান, তীব্র খরার কারণে আমের কিছু গুটি ঝরে পড়েছে। তবে, ঝরে পড়ার হার এখনো ব্যাপকভাবে দেখা দেয়নি। খরা আর তাপপ্রবাহ আরও দীর্ঘ হলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা।
মিরপুর উপজেলার আব্দুস সামাদ বলেন, আগে মানুষ খাওয়ার চিন্তা করতেন। এখন এলাকার মানুষের বড় চিন্তা হয়ে উঠেছে খাওয়ার পানি। পানির অভাবে এলাকাবাসী গরু ছাগল বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এদিকে কুষ্টিয়ার গড়াই নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের কোনো টিউবওয়েলে পানি উঠছে না বলে জানিয়েছেন থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা সেলিম হোসেন। তিনি বলেন, এলাকার টিউবওয়েলে পানি নেই। একঘণ্টা চেষ্টা করেও এক বালতি পানি তোলা যাচ্ছে না। এখন প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে পানি এনে খেতে হচ্ছে। মোল্লাতেঘরিয়া গ্রামের নাসির উদ্দীন বলেন, বাড়ির টিউবওয়েলে ১৭০ ফুট পাইপ বসিয়েছি। এরপরেও পানি উঠছে না। বিদ্যুৎচালিত মোটর বসানো আছে, সেখানেও পানি উঠছে না। সংকট ভয়াবহ। অন্যদিকে তীব্র খরায় বোরো ক্ষেতে সেচ সংকট বেড়ে গেছে।
কুষ্টিয়া জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী ইব্রাহীম মো. তৈমুর বলেন, জিকে সেচ প্রকল্পে বন্ধ এবং আবহাওয়া এখন বেশ উত্তপ্ত। কয়েক সপ্তাহ ধরে খরা চলছে। গ্রামাঞ্চলেও পানির এ সংকট চলছে। প্রতিবছরই এ সময় পানির স্তর নেমে যায়। বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে। তবে প্রতিবছর এক-দুই সপ্তারের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে গেলেও এবার সময়টা বেশি লাগছে। ভেড়ামারায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) প্রকল্পের পাম্প ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে ৩টি পাম্পটি বন্ধ রয়েছে। পাম্পগুলো সচল করার চেষ্টা চলছে। কবে নাগাদ সেচ কার্যক্রম চালু করা যাবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সূফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, পানি সংকটের কারণে উৎপাদনে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে এ সমস্যা থাকবে না বলে জানান এই কর্মকর্তা। দুই-একদিনের মধ্যে বৃষ্টি হলেই সংকট কেটে যাবে। অন্যদিকে জিকে সেচ প্রকল্প চালু করতেও কাজ চলছে।

 

 

পাঠকের মতামত

ভারতের পানি আগ্রাসনে্র কুফল

কাজী মুস্তাফা কামাল
৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ৬:৫৪ পূর্বাহ্ন

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status