দেশ বিদেশ
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা
নতুন কারিকুলাম ব্যর্থ হলে মহাসংকটে পড়বে দেশ
স্টাফ রিপোর্টার
২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবারনতুন কারিকুলাম নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা চলছে। নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন না হলে দেশ মহাসংকটে পড়বে। গতকাল কারিকুলাম বাস্তবায়নের নানা চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস) আয়োজিত এই গোলটেবিল বৈঠকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেন, আমাদের অবকাঠামো নেই, প্রস্তুতি নেই। এই কারিকুলামের বৈজ্ঞানিক ভিত্তিটাও প্রশ্নবোধক। শিক্ষার্থী শেখে কি করে? এখানে কিন্তু মুখস্থ বিদ্যারও দরকার আছে। মুখস্থ থেকে অনেকে শুরু করে। বিভিন্নভাবে শিখতে হয়। উন্নত দেশেও অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায় না। এখানে শিক্ষকের ভূমিকা সব থেকে বড়। আমাদের সেই প্রস্তুতি নাই।
গোলটেবিল বৈঠকে শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। রাজধানীর লালমাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী রামিম বলে, আমরা ক্লাসে অনেক কিছু শিখছি কিন্তু কিছু বেসিক বিষয় থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি। আমার বাবা আমাকে বলেন, পার্টস অব স্পিস কী, টেনস কী আমি বলতে পারি না। সহজপাঠ স্কুলের একজন অভিভাবক বলেন, আমি স্কুলে থাকা অবস্থায় নানা সূত্র নানা অঙ্ক শিখেছি। কিন্তু এখন কোনো কাজে আসছে না। আমি বুঝতে পারি জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার মধ্যে বিস্তর ফারাক। কিন্তু বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় সেটি নেই।
অভিভাবক লোকমান হোসেন বলেন, এখন পড়ালেখা মোবাইলে। বাচ্চা বলে, আমার তো কোনো পড়া নাই। বাচ্চাদের কেন রান্না করানো শেখাতে হবে? বাচ্চাদের এখন কিছু বলা যায় না তারা মোবাইল নিয়ে বসে থাকে এটাই নাকি তাদের পড়ালেখা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তন্বী বলেন, আমার বোন সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আমি বলতে পারি কন্টেন্টগুলো ভালো। ব্যাখ্যা নির্ভর। সমস্যা হচ্ছে এটি বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষকদের পর্যাপ্ত দক্ষতা নাই। শিক্ষার্থীরা এমনভাবে চলছে যেন তাদের পড়ালেখা নাই। সেভেনের ম্যাথে বাস্তবায়নেও অনেক ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে। শিক্ষকরাও অনেক সময় ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।
বাকবিশিস কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নুর মোহাম্মাদ তালুকদার বলেন, এই কারিকুলাম বাস্তবায়নে যথেষ্ট বরাদ্দ থাকতে হবে। প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষকরাও প্রস্তুত নয়। কিছু বললে বলা হয়, না পারলে চাকরি ছেড়ে চলে যান। লোকের অভাব হবে না। তিনি কারিকুলাম সুপরিকল্পিত কিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, নেতিবাচক মন্তব্যের জন্য অনেকের জেল-জুলুমও হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন সৃজনশীল পড়ালাম। অনেক শিক্ষক এখনো জানেন না সৃজনশীল কী। নতুন ব্যবস্থা চালু করা হলো কিন্তু যথেষ্ট প্রশিক্ষণ দেয়া হয় নাই। কারিকুলাম যথেষ্ট প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার কারণেও ইতিবাচক-নেতিবাচক কথা বলা হচ্ছে। শিক্ষকদের হতে হবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত। আবার শিক্ষকরাও অসহায়। শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা জরুরি। শিক্ষকরাও দ্রব্যমূল্যের কারণে অসহায়। তারা কী বাতাস খেয়ে বেঁচে থাকবেন? শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ দুর্নীতি তো আছেই।
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, আমাদের শিক্ষায় বাজেট কিন্তু অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু পরিসংখ্যানগতভাবে বাড়েনি। আমাদের আলোচনা বাজেট বৃদ্ধির দিকে না করে সুন্দরভাবে খরচ করার দিকে নজর দিতে হবে। অবকাঠামোগত বাজেটে বেশি ব্যয় হয়। কারিকুলামের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশিক্ষণ গবেষণা চ্যালেঞ্জ সবসময় ছিল। নতুন কারিকুলামের ২০১৭ সাল থেকে কনসালটেন্সি শুরু হয়েছে। ফিল্ড ওয়ার্ক করা হয়েছে। আমাদের জ্ঞানের প্রায়োগিক বিষয়টি থাকতে হবে। একজন শিক্ষার্থী বললেন, টেনস কী তা জানেন না। আমি বলবো টেনস কী এটা জানা জরুরি নাকি তার প্রয়োগটা জরুরি? টেনস না জেনেই যদি সুন্দরভাবে প্রয়োগ করা যায় সেটাই ভালো। আমরা অনেকে কঠিনভাবে সমাস, কারক শেখালাম। কী লাভ?
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অনেক আলেম আছেন যারা শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা ধর্মনিরপেক্ষ দেশ গড়তে চাই। অনেকে চান বিজ্ঞানকে দেখতে হবে ধর্মের চোখে। যারা প্রকৃত আলেম তারা তো বিরোধিতা করে না। আরেকটা গোষ্ঠী আছে যারা আমাদের বইই পড়ে না। তারাই আমাদের বই নিয়ে সমালোচনা করছে।
পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে অনেক কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষার কারণে যে অনেকে ড্রপ আউট হতো সেটাও ভাবতে হবে। অনেক অভিভাবক আছেন যারা শিক্ষার্থীদের জন্য বিনিয়োগ চালিয়ে নিতে পারেন না। আবার অনেক বিদ্যালয় আছে ফলের কারণে এমপিও হারানোর ভয়ে থাকেন। এখন শুধু ভালো ফল করা শিক্ষার্থীর জন্য এই কারিকুলাম না সবার জন্য এই কারিকুলাম করা হয়েছে। শিক্ষার্থী যদি ধান কাটতেও যায় সেখান থেকেও শিখন ফল বের করতে হবে। সেখানে দলগত মূল্যায়ন, হিসাব ইত্যাদি বের করতে হবে।
গোলটেবিল বৈঠকে বাকবিশিস’র বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। সেইসঙ্গে আয়োজকরা জানান, এই আলোচনার উত্থাপিত তথ্যসমূহ লিখিত আকারে সংগ্রহ করে মন্ত্রণালয়ে সরবরাহ করা হবে।
A illiterate can easily dominate by ...... And it will make by this cariculam
আমি,মামী আর ডামির বৈঠক! যোগ্য কোন লোকের মতামত নেই। বাস্তবতা হচ্ছে এই কারিকুলাম বাস্তবায়ন হলেই দেশ মহাসংকটে পড়বে।
অংক, বিজ্ঞান, কম্পিউটার সাইন্স, ইংলিশ গ্রামার এগুলির উপর জোর বেশি দিতে হবে। কিছু মুখস্ত আর কিছু সৃজনশীল দুটোই থাকতে হবে। ভারতের কারিকুলাম ফলো করলেই তো চলে। শুধু ধর্ম,ইতিহাস এগুলি ভিন্ন হবে। এই কারিকুলাম বাচ্চাদের পড়ালেখা ধ্বংস করার একটা নীল নকশা
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। পরীক্ষা হচ্ছে লক্ষ্য পূরনের ধাপ। এমনিতেই এদেশের শিক্ষার্থী অলস, শিক্ষা বিমুখ, মোবাইল আসক্তি প্রচুর। পরীক্ষা না থাকলে যাচ্ছেতাই যুক্তি ও মোবাইল নির্ভর বাড়বে। লক্ষ্য উদ্দেশ্যহীন জাতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি থাকতেই পারে। কিন্তু যারা মাঠপর্যায়ের কাজে সম্পৃক্ত তারা শাস্তির ভয়ে অভিজ্ঞতা ও মুক্ত মতামত থেকে বিরত। যতক্ষণ বাস্তব ধর্মী মতামত যুক্ত না হবে, শিক্ষা ব্যবস্থা গভীর সংকটে আবর্তিত হবে। আমি নিজে যা উপলব্ধি করি, সামান্য প্রকাশের মধ্যেও ভয়ের মিশ্রণ রয়েছে।
বিদগ্ধ কোন শিক্ষাবিদের উপস্থিতি বা মতামত নাই, এখানেই জাতির দূর্ভাগ্য
যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত একটি কারিকুলাম জাতিকে উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। অভিভাবকদের আস্থাই আনার জন্য মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী তার সন্তানদের এই কারিকুলামে পড়াবেন বলে আশা রাখি।
শিক্ষকদের হতে হবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত। আবার শিক্ষকরাও অসহায়। শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা জরুরি। শিক্ষকরাও দ্রব্যমূল্যের কারণে অসহায়। তারা কী বাতাস খেয়ে বেঁচে থাকবেন? শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ দুর্নীতি তো আছেই।
শিক্ষামন্ত্রী আনাড়ি মার্কা মন্তব্য করেছেন। কোনো জিনিষের মূলভিত্তিই যদি না জানে একজন ছাত্র তাহলে প্রয়োগ করবে সে কি ভাবে? ড্রপ আউটের ভয়ে যদি পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করতে হয় তাহলে দেশের ধবংস অনিবার্য। কারণ কোনো জাতিকে ধবংস করতে চাইলে সেই জাতির শিক্ষাব্যবস্থাকে ধবংস করলেই হয়।
একজন শিক্ষার্থী বললেন, টেনস কী তা জানেন না। আমি বলবো টেনস কী এটা জানা জরুরি নাকি তার প্রয়োগটা জরুরি? টেনস না জেনেই যদি সুন্দরভাবে প্রয়োগ করা যায় সেটাই ভালো। আমরা অনেকে কঠিনভাবে সমাস, কারক শেখালাম। কী লাভ? ১/ একটা জিনিস না জেনে কিভাবে সুন্দর ভাবে প্রয়োগ করা যায় তা জানা দরকার। ২/ কারক এবং সমাস যদি দরকার না হয় তবে কেন পড়ানো হলো বা হচ্ছে। ৩/ ছাত্র ছাত্রী দের লাভ লোকসান এর হিসেব যদি করতে বলা হয় তবে ওরা বলবে শুধু যে কোশ্চেন পরীক্ষায় আসবে তা পড়ানোটাই লাভ। বাকি সব লোকসান। ধন্যবাদ