ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

দরিদ্রতায় এগিয়ে শহর

স্টাফ রিপোর্টার
২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার

দূষণ, যানজট আর মানবিক বিচ্ছিন্নতার দিক থেকেই শহর শুধু এগিয়ে নেই। শহর এখন এগিয়ে গিয়েছে দরিদ্রতায়ও। দেশে গ্রামীণ দরিদ্রের চেয়ে শহরে দরিদ্রলোকের সংখ্যা বেশি। করোনার পর থেকেই শহরাঞ্চলে দরিদ্রের সংখ্যা বাড়ছেই। দিন দিন উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে শহরাঞ্চলে দরিদ্র্যের হার বেড়েছে। আয়বৈষম্যও আগের চেয়ে বেড়েছে। চরম মূল্যস্ফীতির কারণে অধিকাংশ পরিবার তাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে। অনেক পরিবার খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছে। গ্রামের তুলনায় শহরের দরিদ্র মানুষ বেশি খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ‘করোনা মহামারি ও পরবর্তী প্রতিবন্ধকতা কীভাবে বাংলাদেশের দরিদ্র, আয়বৈষম্য, শিক্ষা এবং খাদ্য সুরক্ষার ওপর প্রভাব ফেলছে’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

বিজ্ঞাপন
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট যৌথভাবে গবেষণাটি করেছে। গবেষণায় জানানো হয়েছে, ২০১৮ সালে শহরাঞ্চলে দরিদ্র্যের হার ছিল ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু ২০২৩ সালে এটি বেড়ে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। একই সময়ে গ্রামীণ দরিদ্রের হার ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে।

 সানেম-জিইডি ২০১৮ সালে দেশব্যাপী ১০ হাজার ৫০০টি খানায় জরিপ চালায়। এর মধ্যে ৯ হাজার ৬৫টি খানায় গত বছরের অক্টোবর ও নভেম্বরে আবার জরিপ করা হয়। সেই জরিপের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা গবেষণা প্রতিবেদনের ফলাফল  তুলে ধরেছে সানেম। গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে ৭০ শতাংশ পরিবার তাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে। পাশাপাশি ৩৫ শতাংশ পরিবার খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় কাটছাঁট করেছে। ২৮ শতাংশ ঋণ নিয়েছে এবং ১৭ শতাংশ সঞ্চয় কমিয়েছে। পরিবারগুলোর ব্যয় বাড়লেও একটি বড় অংশের আয় বাড়েনি অথবা কমেছে। ফলে অতিদরিদ্র পরিবারে সদস্যদের মাসিক মাথাপিছু ব্যয় ২০১৮ সালের তুলনায় গত বছর ২০ শতাংশ কমেছে।  এতে বলা হয়, শহরের দরিদ্ররা গ্রামের তুলনায় বেশি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। গ্রামের ২৯ শতাংশ ও শহরের ৩২ শতাংশ দরিদ্র পরিবার মাঝারিভাবে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। সানেমের রিসার্চ ইকোনমিস্ট মাহতাব উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, মূলত উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে শহরাঞ্চলে দরিদ্রের হার বেড়েছে। দরিদ্র পরিবারগুলো খাদ্যাভ্যাসে কী পরিবর্তন আনছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথমেই তারা মাংস, ডিম, ফলমূল ইত্যাদি খাওয়া বাদ দিচ্ছে। এতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। 

গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে জাতীয় পর্যায়ে দরিদ্রের হার ছিল ২১ দশমিক ৬ শতাংশ। গত বছর সেটি কমে ২০ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যদিও কয়েকটি বিভাগে দরিদ্রের হার বেড়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ে গত বছর বেশি দরিদ্র ছিল রংপুর ও বরিশালে, যথাক্রমে ৪২ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সাড়ে ৩২ শতাংশ। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে মানুষের স্বাস্থ্য ব্যয় তিন গুণ বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, করোনার ধাক্কার পর যখন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া চলছিল, তখনই মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। দেশ দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব দরিদ্র মানুষের ওপর পড়েছে। তিনি বলেন, করোনার সময় সরকার সহযোগিতা করেছিল। তবে পরবর্তী সময়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যেসব ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন ছিল, সেগুলো যথাসময়ে নেয়া হয়নি। এ কারণে নতুন করে অনেকে দরিদ্র হয়েছেন। দারিদ্র্যবিমোচনে এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।  একদিকে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকি অন্যদিকে দরিদ্রতার চাপে শহরের মানুষ গ্রামের তুলনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

পাঠকের মতামত

উন্নয়ন, উন্নত আর উন্নত !

Salith Khan
২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ২:০৫ অপরাহ্ন

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status